পাঞ্জাব এফসির ২০ বছর বয়সী উদীয়মান তারকা টেকচাম অভিষেক সিংহ (Tekcham Abhishek Singh) এই মরসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) সত্যিই আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। পজিশন পরিবর্তনে দক্ষতার কারণে তিনি দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন। মিনার্ভা পাঞ্জাব ইয়ুথ একাডেমিতে ক্যারিয়ার শুরু করা অভিষেক ২০২১-২২ মৌসুমে পাঞ্জাব এফসির সিনিয়র স্কোয়াডে যোগ দেন এবং সেখান থেকে শুরু হয় তার উত্থান।
তার পর থেকেই অভিষেক পাঞ্জাব এফসির দলের জন্য একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছেন। তিনি দলকে বিভিন্ন পজিশনে নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন, এবং এই বছরের বেশ কিছু ম্যাচে তার পারফরম্যান্স দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এ জয়ের মাধ্যমে পাঞ্জাব এফসি আবার শীর্ষ ছয়ে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
Also Read | ফুটবলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি খালিদ জামিল, কী বললেন?
এএফসির তরুণ তারকা টেকচাম অভিষেক সিংহের সঙ্গে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ক্রীড়া সংবাদ মাধ্যম খেল নাউ তাকে প্রশ্ন করে, পজিশন বদলানোর তার এই দক্ষতার কারণ কি? কিভাবে তিনি একাধিক পজিশনে খেলা শিখেছেন? অভিষেক জানান, তার পজিশন পরিবর্তনে কোনো সমস্যা হয়নি। বরং এটি তাকে বিভিন্নভাবে দলের জন্য অবদান রাখার সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন, “কয়েক বছর ধরে কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি এই গুণ অর্জন করেছি, যা আমাকে খেলার বিভিন্ন স্থানে নিজেকে মানিয়ে নিতে সহায়তা করেছে।”
অভিষেক জানান, তার জন্য এটি কোনো চ্যালেঞ্জ নয়, বরং একটি সুযোগ যেখানে তিনি দলের বিভিন্ন পজিশনে সাহায্য করতে পারেন। পাঞ্জাব এফসি যখন শীর্ষ ছয়ে জায়গা করে নেওয়ার জন্য লড়াই করছে, তখন তার পজিশন বদলানোর ক্ষমতা এবং দৃঢ় সংকল্পই দলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে।
অভিষেকের পরিসংখ্যান কি বলে?
এই ISL মৌসুমে টেকচাম অভিষেক সিংহ পাঞ্জাব এফসির হয়ে ১৬টি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন এবং মোট ১৪১৭ মিনিট মাঠে ছিলেন। তার দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক দক্ষতা প্রমাণিত হয়েছে ৩৬টি ইনটারসেপশন এবং ৭৮% পাসিং অ্যাকুরেসির মাধ্যমে, যা তাকে রক্ষণ এবং আক্রমণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এক সংযোগকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
প্রতি ম্যাচে ২৯টি পাস দেওয়ার পাশাপাশি তিনি দলের বিল্ডআপ প্লে-তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এছাড়াও, মাঠে তার শৃঙ্খলা নজরকাড়া, কারণ তিনি মাত্র দুটি হলুদ কার্ড পেয়েছেন এবং ৩০টি ট্যাকল জিতেছেন, পাশাপাশি ৭২টি ডুয়েল জিতেছেন, যার মধ্যে আটটি এয়ারিয়াল ব্যাটলও অন্তর্ভুক্ত।
এই ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান ছাড়াও, অভিষেকের পারফরম্যান্স পাঞ্জাব এফসির রক্ষণের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেছে, যেহেতু তিনি দুটি ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে সহায়তা করেছেন। তার মিডফিল্ড কন্ট্রোল এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণ ভাঙার দক্ষতা তাকে লিগের অন্যতম প্রতিভাবান তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাঞ্জাব এফসি যখন প্লে-অফে জায়গা করার চেষ্টা করছে, তখন তার ধারাবাহিকতা এবং পজিশন পরিবর্তনের ক্ষমতা তাদের লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পজিশন পরিবর্তনে অভিষেকের গোপন রহস্য
টেকচাম অভিষেক সিংহের পজিশন পরিবর্তনের দক্ষতা মূলত তার কঠোর প্রশিক্ষণের ফলস্বরূপ। তিনি বলেন, “বাম বা ডান পজিশন পরিবর্তন করা আমার জন্য কোনো সমস্যা নয়, কারণ আমি প্র্যাকটিসে দুই পজিশনেই খেলতাম।” যখন তাকে কোচের পরিবর্তনের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি বলেন, “আমি কখনোই মনে করিনি যে এটি কোনো চ্যালেঞ্জ হবে, কারণ আমি খেলার বিভিন্ন ভূমিকায় অভ্যস্ত।”
অভিষেক, মাত্র ২০ বছর বয়সে পাঞ্জাব এফসি-র জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হয়ে উঠেছেন। তার বহুমুখী দক্ষতা এবং ট্যাকটিক্যাল বুদ্ধিমত্তা তার কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও একাগ্রতার পরিচায়ক। তার এই পজিশন পরিবর্তন করার ক্ষমতা তাকে পাঞ্জাব এফসির হয়ে সাফল্য লাভের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করছে।
অভিষেকের ভবিষ্যত:
যদিও মাত্র ২০ বছর বয়সী অভিষেকের ক্যারিয়ার এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তার খেলার ক্ষমতা এবং পজিশন পরিবর্তন করার সক্ষমতা তাকে ভবিষ্যতে ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। পাঞ্জাব এফসি যদি শীর্ষ ছয়ে জায়গা করে নেয়, তবে তার অবদান অমূল্য হবে এবং তিনি আরও অনেক তরুণ ভারতীয় ফুটবলারের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠবেন।
পাঞ্জাব এফসির জন্য, টেকচাম অভিষেক সিংহের এই ধরনের পারফরম্যান্স এবং ভ্যারিয়েবল পজিশনিংই তাদের লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যা তাদের প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনাকে দৃঢ় করে তুলছে।