চার দশকের অপেক্ষার অবসান, এশিয়ান অ্যাথলেটিক্সে ডেকাথলনে রুপো জয় তেজস্বিনের

গুমি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৮ মে, ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে তেজস্বিন শঙ্কর (Tejaswin Shankar) ভারতের চার দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ডেকাথলনে একটি অসাধারণ রুপো পদক…

Tejaswin Shankar

গুমি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৮ মে, ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে তেজস্বিন শঙ্কর (Tejaswin Shankar) ভারতের চার দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ডেকাথলনে একটি অসাধারণ রুপো পদক জয় করেছেন। ৭,৬১৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করে তিনি চীনের ফেই শিয়াং-এর থেকে মাত্র ১৬ পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। জাপানের কেইসুকে ওকুদা ব্রোঞ্জ পান। এই পদক ভারতের এই চ্যাম্পিয়নশিপে সপ্তম পদক এবং তেজস্বিনের এই কৃতিত্ব তাকে ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের একজন পথিকৃৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ডেকাথলনের নাটকীয় লড়াই
গুমির পুরুষদের ডেকাথলন ছিল একটি রোমাঞ্চকর প্রতিযোগিতা। প্রথম দিনের পাঁচটি ইভেন্টের পর তেজস্বিন শীর্ষে ছিলেন এবং শেষ দুটি ইভেন্টে প্রবেশের সময় তিনি মাত্র তিন পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন। জ্যাভেলিনে তার প্রথম প্রচেষ্টায় ফাউল হওয়ায় তিনি মূল্যবান পয়েন্ট হারান এবং তৃতীয় স্থানে নেমে যান। শেষ ইভেন্ট ১,৫০০ মিটারে সোনার জন্য তাকে ফেই শিয়াং-এর চেয়ে কমপক্ষে ১০ সেকেন্ড এগিয়ে থাকতে হতো। তেজস্বিন পুরো শক্তি দিয়ে দৌড়ালেন, সাত সেকেন্ডের লিড নিয়ে সময় নথিভুক্ত করলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র তিন সেকেন্ডের ব্যবধানে সোনা হাতছাড়া হয়। তিনি বলেন, “আমি সোনার জন্য লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তিন সেকেন্ডের ব্যবধানে হেরেছি, এটাই ছিল সোনা এবং রুপোর মধ্যে পার্থক্য। ষোলো পয়েন্ট… তিন সেকেন্ড।” তিনি গর্বের সঙ্গে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন তার স্থিতিস্থাপকতার প্রশংসা করে এই পারফরম্যান্সকে “ভারতীয় মাল্টি-ইভেন্টারদের জন্য নতুন মানদণ্ড” হিসেবে অভিহিত করেছে।

   

দিল্লির ক্রিকেট স্বপ্ন থেকে ডেকাথলনের গৌরব
১৯৯৮ সালে দিল্লিতে জন্মগ্রহণকারী তেজস্বিন শঙ্করের প্রাথমিক ক্রীড়া স্বপ্ন ছিল ক্রিকেট, যেখানে তার পিতা, একজন সম্মানিত বিসিসিআই আইনজীবী, তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। কিন্তু তার লম্বা, অ্যাথলেটিক গড়ন স্কুল কোচদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যারা তাকে হাই জাম্পে চেষ্টা করতে উৎসাহিত করেন। তেজস্বিন দ্রুত সাফল্য অর্জন করেন, ২০১৮ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে ২.২৯ মিটার লাফিয়ে জাতীয় হাই জাম্প রেকর্ড ভাঙেন। তবে তার যাত্রা চ্যালেঞ্জমুক্ত ছিল না—তিনি চোটের সম্মুখীন হয়েছেন, পিতার মর্মান্তিক মৃত্যুর শোক সহ্য করেছেন এবং প্রধান দল থেকে বাদ পড়ার বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন। এই সব বাধা সত্ত্বেও, তিনি কমনওয়েলথ ইয়ুথ গেমস এবং ২০২২ কমনওয়েলথ গেমসে হাই জাম্পে পদক জিতেছেন।

Advertisements

২০২৩ সালে তিনি ডেকাথলনে স্থানান্তরিত হন, যা দশটি ইভেন্টের কঠিন শৃঙ্খলা। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এশিয়ান গেমসে ৭,৬৬৬ পয়েন্ট সহ জাতীয় রেকর্ড গড়েন। গুমিতে তার রুপো এখন তাকে এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি ডেকাথলন পদক জয়ী প্রথম ভারতীয় করে তুলেছে।

ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের নবজাগরণ
তেজস্বিনের এই কৃতিত্ব ভারতের এশিয়ান অ্যাথলেটিক্সে ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির প্রতীক। ২০২৫ সালের এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত মিশ্র ৪x৪০০ মিটার রিলে, ট্রিপল জাম্প এবং মহিলাদের ৪০০ মিটারে পদক জিতেছে। তেজস্বিনের পদক বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি একটি মাল্টি-ডিসিপ্লিন ইভেন্টে এসেছে, যা বহুমুখিতা, সহনশীলতা এবং মানসিক দৃঢ়তার দাবি রাখে। তার সাফল্য নতুন প্রজন্মের ক্রীড়াবিদদের কম পরিচিত শাখায় অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করছে। ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন এই পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দিয়ে বলেছে, “তেজস্বিনের মতো ক্রীড়াবিদরা ট্র্যাক এবং ফিল্ডে ভারতের সম্ভাবনাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছেন।”