কেকেআর (KKR) কর্তারা যখন সোমবার রাতে আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়ার পর স্রেফ নীরব ছিলেন, তখন তা যেন এক নতুন অধ্যায় শুরু করার মতো। টুঁ শব্দও আর করেননি তারা! এত দিন ধরে মাঠের পিচ, টিম কম্বিনেশন, এমনকি ম্যাচের পরিসর নিয়ে একের পর এক অভিযোগের ছড়াছড়ি ছিল কেকেআরের পক্ষ থেকে।
কখনও পিচের টার্ন, কখনও মাঠের মাপ, কখনও বা অন্য কোনও কারণে তাদের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। তবে সোমবারের ম্যাচের পর আর কোনও অভিযোগ কিংবা সমালোচনা শোনা যায়নি। ইডেনে ৪ রানে লখনউয়ের বিরুদ্ধে হারার পরও কেকেআরের কেউ কেউ সিএবি’র এক পদাধিকারীকে ‘অভিনন্দন’ জানিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু গুজরাটের বিরুদ্ধে এই বিপর্যয়ের পর কেউ আর কিছু বলেননি।
কেকেআর কর্তাদের নীরবতা বুঝিয়ে দেয়, তাদের কাছে আর কোনও ব্যাখ্যা বা যুক্তি নেই। যখন টার্নার পিচে নিজেদের দলের ব্যাটসম্যানরা কার্যত চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল, তখন সবার মুখ বন্ধ। সাই কিশোর এবং রশিদ খানকে সামলাতে পারেনি কেকেআর। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ এবং অন্যান্য পেসাররা আবার সফল। পুরো দলের অবস্থা এমন যে, কেকেআরের ব্যাটিং লাইনআপটি কোন শক্তিশালী টিমের সামনে দাঁড়াতে পারে না। একমাত্র অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে ছাড়া আর কেউ তেমন কিছু দেখাতে পারেননি। কুইন্টন ডিককের বদলে রহমনুল্লাহ গুরবাজের ওপেনিং কৌশলও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ভেঙ্কটেশ আইয়ারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন মাঠে কিছুই করতে পারছেন না।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার সকালে গল্ফ খেলতে যান কেকেআর দলের অজিঙ্ক রাহানে, আনরিখ নখিয়া, টিম মেন্টর ডোয়েন ব্র্যাভো এবং সিইও ভেঙ্কি মাইসোর। দলের দুর্দশা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, ভেঙ্কি মাইসোর ২০১৪ এবং ২০২১ সালের আইপিএল সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তাঁর দাবি, অতীতের মতো এইবারও শেষের দিকে জয়ী হয়ে প্লে-অফে পৌঁছানো সম্ভব। যদিও সেই বিশ্বাস কতটা যুক্তিপূর্ণ, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। ২০১৪ সালে কেকেআর প্রথম সাত ম্যাচের মধ্যে পাঁচটি হেরে গিয়েছিল, কিন্তু তার পর টানা নয় ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তবে সেই দলের মধ্যে ছিলেন গৌতম গম্ভীর, রবিন উথাপ্পা এবং মণীশ পাণ্ডে, যারা দলের জন্য এক অনন্য শক্তি ছিল। ২০২১ সালে ছিলেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার, যিনি নিজে এক দুঃস্বপ্নের মত বিধ্বংসী ক্রিকেট খেলেছিলেন। কিন্তু এখন কেকেআরের দলে এমন কোনো নতুন তারকা নেই, যে পরবর্তী আইয়ার বা উথাপ্পা হতে পারে।
এমনকি আন্দ্রে রাসেলও গতবারের রাসেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারছেন না। এখন প্রশ্ন উঠছে, কেকেআর কর্তারা কি এতদিন ধরে রাসেলকে এত গুরুত্ব দিয়ে রেখেছেন, যেহেতু তাঁর আগের শক্তি আর নেই? এরকম অবস্থায় কেকেআর নতুন কোনো পথ খুঁজে পাবে কি না, সেটি অনেকটাই অনিশ্চিত। গতবারের ‘কিলার’ রাসেলকে আর কেউ ভয় পাচ্ছে না।
এদিকে, কেকেআরের অধিনায়ক রাহানে যখন রভম্যান পাওয়েলকে না খেলানোর পক্ষে যুক্তি দেন, তখন বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, মাঠের পরিস্থিতি এবং কম্বিনেশন বিচার করে একাদশ নির্বাচন করা হয়, কিন্তু তারপরও পাওয়েলকে জায়গা দেওয়া হয়নি। এই ‘কম্বিনেশন’ নিয়ে আর কতদিন কথাবার্তা চলবে, তা কেউ জানে না। কেউ কেউ বলছেন, পাওয়েলকে না খেলানোর পিছনে অন্য কিছু কারণ রয়েছে, যা সামনে আসতে পারে।
পিচ নিয়ে অস্বস্তিজনক প্রশ্নও উঠেছে। গুজরাটের বিরুদ্ধে ম্যাচের পিচ নিয়ে বিশেষ কোনো মন্তব্য করা হয়নি, তবে শোনা গেছে, কেকেআর অনেকদিন ধরে পিচ নিয়ে অভিযোগ করেছে, এবং এই কারণে হয়তো তাদের এবার নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই মনে করছেন, কেকেআর এমন কড়া বার্তা পেয়েছে যে, তারা আর পিচ নিয়ে কোনো অতিরিক্ত অভিযোগ করতে পারবে না।
এদিকে, ২০১৪ সালের পর থেকে কেকেআর তাদের খেলোয়াড়দের প্রস্তুতির প্রতি যে মনোযোগ দিয়েছে, তা অনেকাংশে এই দলের দুর্দশাকে বোঝায়। ২০২১ সালে যে দলটি এত শক্তিশালী ছিল, তার থেকেও এখন অনেক দুর্বল এবং কোচিং স্টাফ ও ম্যানেজমেন্টের দিকে আঙ্গুল উঠছে। ইডেনের পিচ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, তবে সেটা এখন ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। তবে পিচের এই মন্থর প্রকৃতির কারণে কেকেআরকে আরও একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে—যতদিন না তারা তাদের নিজেদের সমস্যা কাটিয়ে ওঠে, ততদিন তারা শক্তিশালী টিমের পুরস্কার পাবে না।