মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG) গত মরসুমের মতো এই মরসুমেও অসাধারণ ছন্দে রয়েছে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) লিগ শিল্ড এবং কাপ জয়ের মাধ্যমে ইতিহাস গড়েছে এই কলকাতার ক্লাব। জোসে মোলিনার নেতৃত্বে জেসন কামিন্স, টম অলড্রেড এবং দিমিত্রি পেত্রাতোসের মতো তারকারা একের পর এক প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে দলকে শীর্ষে রেখেছেন। আইএসএল-এ ১০০০ পয়েন্ট অর্জনকারী ভারতের প্রথম ক্লাব হিসেবে মোহনবাগান নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবার কলিঙ্গা সুপার কাপ ২০২৫-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। তবে, এই টুর্নামেন্টে দলটি তাদের তরুণ এবং রিজার্ভ খেলোয়াড়দের উপর ভরসা রাখছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন রিজার্ভ দলের কোচ বাস্তব রায় এবং সহকারী কোচ ডেগি কার্ডোজো।
রক্ষণভাগে বিশেষ নজর
গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) থেকে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট সুপার কাপের জন্য অনুশীলন শুরু করেছে। রিজার্ভ দলের কোচ বাস্তব রায় এই টুর্নামেন্টে দলের রক্ষণভাগকে শক্তিশালী করার উপর বিশেষ জোর দিচ্ছেন। গত মরসুমে মোহনবাগানের প্রতিরক্ষায় কিছু দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছিল, যেখানে তারা ৩৭ গোল হজম করেছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাস্তব রায় তরুণ ডিফেন্ডারদের নিয়ে কঠোর প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন। বিশেষ করে, সৌরভ ভানওয়ালার মতো তরুণ ডিফেন্ডারদের উপর বড় দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সৌরভ, যিনি রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ডেভেলপমেন্ট লিগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, এই টুর্নামেন্টে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া, আমানদীপ এবং আশিস রায়ের মতো খেলোয়াড়রাও প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বাস্তব রায়ের কৌশল হলো একটি কমপ্যাক্ট এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিরক্ষা গড়ে তোলা, যা আক্রমণাত্মক খেলার ভারসাম্য বজায় রাখবে। তিনি বলেন, “আমাদের তরুণ খেলোয়াড়দের সম্ভাবনা অপার। সুপার কাপ তাদের জন্য নিজেদের প্রমাণ করার একটি বড় মঞ্চ। আমরা প্রতিরক্ষায় শক্তিশালী হয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি দ্রুত কাউন্টার-অ্যাটাকের উপর কাজ করছি।”
তরুণদের উপর ভরসা
মোহনবাগান এই টুর্নামেন্টে তাদের সিনিয়র বিদেশি খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়ে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ডেভেলপমেন্ট লিগ জয়ী তরুণদের উপর নির্ভর করছে। এই সিদ্ধান্ত ক্লাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ, যেখানে তরুণ খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। গোলরক্ষক হিসেবে ধীরজ সিং এই টুর্নামেন্টে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য মরিয়া। তিনি গত মরসুমে বিশাল কাইথের ছায়ায় থাকলেও সুপার কাপে ক্লিন শিট রাখার মাধ্যমে নিজের দাবি জানাতে চান। মাঝমাঠে সাহাল আব্দুল সামাদ এবং আশিক কুরুনিয়ানের মতো খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সৃজনশীলতা এবং গোলের সুযোগ তৈরির প্রত্যাশা রয়েছে। ফরোয়ার্ডে সুহেল আহমেদ ভাট এবং অভিষেক সূর্যবংশী গোলের দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রথম ম্যাচে বাই: সময়ের সুবিধা
মোহনবাগান সুপার কাপে তাদের প্রথম ম্যাচে চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে খেলবে, তবে প্রথম রাউন্ডে বাই পাওয়ার কারণে তাদের হাতে অতিরিক্ত প্রস্তুতির সময় রয়েছে। এই সময়টি বাস্তব রায় কৌশলগত প্রশিক্ষণ এবং খেলোয়াড়দের ফিটনেস উন্নত করতে কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি বিশেষভাবে দলের তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে কাজ করছেন। তবে, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য কলকাতা ডার্বির কথা মাথায় রেখে ক্লাব সিনিয়র খেলোয়াড়দের মাঠে নামানোর পরিকল্পনা করছে। এই ম্যাচে জয় কেবল শিরোপার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্যই নয়, সমর্থকদের মন জয় করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সমর্থকদের ভূমিকা
মোহনবাগানের সমর্থকরা সবসময়ই দলের বাড়তি শক্তি। সল্টলেক স্টেডিয়ামে তাদের উপস্থিতি দলের মনোবল বাড়ায়। গত মরসুমে ফাইনালে বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে পিছিয়ে থেকে জয়ের পেছনে সমর্থকদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। বাস্তব রায় বলেন, “আমাদের সমর্থকরা মাঠে এমন পরিবেশ তৈরি করে যা প্রতিপক্ষের জন্য চাপের। আমরা তাদের সমর্থনের উপর নির্ভর করি।”
কলিঙ্গা সুপার কাপ ২০২৫ মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের জন্য একটি বড় সুযোগ। বাস্তব রায়ের নেতৃত্বে তরুণ খেলোয়াড়রা তাদের সম্ভাবনা প্রমাণ করতে মুখিয়ে রয়েছেন। রক্ষণভাগে শক্তিশালী কাঠামো এবং আক্রমণে গতিশীলতার সমন্বয়ে দলটি শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথম ম্যাচে বাই পাওয়ার সুবিধা এবং সমর্থকদের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে মোহনবাগান এই টুর্নামেন্টে নতুন ইতিহাস গড়তে প্রস্তুত।