নারিনের জাদুতে দিল্লিকে হারিয়ে প্লে-অফে টিকে কেকেআর

নয়াদিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আইপিএল ২০২৫-এর (IPL 2025) ৪৮তম ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) দিল্লি ক্যাপিটালস (DC)-এর বিরুদ্ধে ১৪ রানের রোমাঞ্চকর জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। ২০৫…

KKR Beat DC

নয়াদিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আইপিএল ২০২৫-এর (IPL 2025) ৪৮তম ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) দিল্লি ক্যাপিটালস (DC)-এর বিরুদ্ধে ১৪ রানের রোমাঞ্চকর জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। ২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ডিসি ফাফ ডু প্লেসি (৬২) এবং অক্ষর প্যাটেলের (৩৭) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে জয়ের পথে এগিয়ে ছিল। কিন্তু কেকেআরের স্পিন মায়াবী সুনীল নারিন তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। এর আগে, অংক্রিশ রঘুবংশীর ৪৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে কেকেআর ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০৪ রান সংগ্রহ করে। এই জয় কেকেআরের প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে, অন্যদিকে ডিসি পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠার সুযোগ হারিয়েছে। এটি ডিসির ঘরের মাঠে চারটি ম্যাচের মধ্যে তৃতীয় হার।

কেকেআরের ব্যাটিং: শক্ত ভিত

ম্যাচের শুরুতে ডিসি অধিনায়ক অক্ষর প্যাটেল টস জিতে কেকেআরকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান। কেকেআর ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ এবং অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে পাওয়ারপ্লেতে দ্রুত রান তুলে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেন। অংক্রিশ রঘুবংশী ৪৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে মিডল অর্ডারে গতি বজায় রাখেন, এবং রিঙ্কু সিং ৩৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তবে, ডিসির পেসার মিচেল স্টার্ক শেষ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে দুটি উইকেট এবং একটি রানআউটে অংশ নিয়ে কেকেআরের রানের গতি কিছুটা কমিয়ে দেন। শ্রীলঙ্কান পেসার দুষ্মন্ত চামিরার অবিশ্বাস্য উড়ন্ত ক্যাচ, যা অনুকূল রায়কে ফিরিয়ে দেয়, ম্যাচের অন্যতম হাইলাইট হয়ে ওঠে। কেকেআরের ২০৪/৯ স্কোর ডিসির জন্য একটি কঠিন লক্ষ্য হিসেবে দাঁড়ায়।

   

ডিসির রান তাড়া: প্রতিরোধ থেকে পতন

২০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ডিসি শুরুতেই ধাক্কা খায়। কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে প্রথম ওভারে অলরাউন্ডার অনুকূল রায়ের উপর ভরসা রাখেন, এবং তিনি দ্বিতীয় বলেই ওপেনার অভিষেক পোড়েলকে আউট করে কেকেআরকে এগিয়ে দেন। পঞ্চম ওভারে বৈভব অরোরা কারুন নায়ারকে ফিরিয়ে দেন, এবং কেএল রাহুল সুনীল নারিনের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে রানআউট হন। এই তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ফাফ ডু প্লেসি এবং অক্ষর প্যাটেল দলকে লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন। ফাফ ৩১ বলে ৬২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন, যার মধ্যে ছিল একাধিক চার এবং ছক্কা। অক্ষর, ফিল্ডিংয়ের সময় হাতে চোট পাওয়া সত্ত্বেও, এক হাতে প্রায় ব্যাটিং করে ৩৭ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন, যার মধ্যে নারিনের ওভারে একটি দুর্দান্ত ছক্কা ছিল।

তবে, ম্যাচের গতিপথ বদলে যায় ১৮তম এবং ১৯তম ওভারে। সুনীল নারিন দুই ওভারে তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে ডিসির মিডল অর্ডার ভেঙে দেন। বরুণ চাক্রবর্তীও টানা দুই বলে দুটি উইকেট নিয়ে ডিসির আশা প্রায় শেষ করে দেন। ১৯ ওভার শেষে ডিসি ১৮০/৮-এ দাঁড়ায়, এবং শেষ ওভারে ২৫ রানের লক্ষ্য অর্জন করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেকেআরের বোলাররা শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ দেখিয়ে ১৪ রানের জয় নিশ্চিত করে।

পিচ এবং কৌশল

অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের পিচ এই মৌসুমে স্পিনারদের জন্য সহায়ক হয়েছে। শুরুতে ব্যাটারদের জন্য অনুকূল হলেও, পিচ ম্যাচের অগ্রগতির সঙ্গে ধীর হয়ে যায় এবং টার্ন প্রদান করে। কেকেআরের স্পিনার সুনীল নারিন এবং বরুণ চাক্রবর্তী এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডিসির ব্যাটিং লাইনআপে ধাক্কা দেন। নারিন তার চার ওভারে ২৪ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নেন, যা ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে। ডিসি তাদের স্পিন আক্রমণে কুলদীপ যাদব এবং অক্ষর প্যাটেলের উপর নির্ভর করেছিল, যারা মিডল ওভারে কেকেআরের রান নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে, কেকেআরের ব্যাটাররা পাওয়ারপ্লেতে ৭৯/১ স্কোর করে পিচের সুবিধা নেন।

ম্যাচের তাৎপর্য

এই জয় কেকেআরের প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে। টুর্নামেন্টে তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল, এবং এই জয় তাদের পয়েন্ট টেবিলে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অন্যদিকে, ডিসি মৌসুমের শুরুতে চারটি জয় দিয়ে দুর্দান্ত শুরু করলেও, ঘরের মাঠে এটি তাদের চতুর্থ ম্যাচে তৃতীয় হার। এই হার তাদের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠার সুযোগ কেড়ে নিয়েছে, তবে তারা এখনও প্লে-অফের দৌড়ে রয়েছে।

খেলোয়াড়দের প্রভাব

সুনীল নারিন এই ম্যাচের নায়ক হয়ে ওঠেন। তার তিনটি উইকেট এবং দুর্দান্ত ফিল্ডিং কেকেআরের জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বরুণ চাক্রবর্তীর শেষ দিকের দুটি উইকেট ডিসির আশা শেষ করে দেয়। ফাফ ডু প্লেসির ৬২ রান এবং অক্ষর প্যাটেলের ৩৭ রান ডিসির জন্য লড়াইয়ের প্রেরণা হয়ে ওঠে, কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত কেকেআরের স্পিন আক্রমণের কাছে হার মানে। মিচেল স্টার্কের শেষ ওভারে দুটি উইকেট এবং দুষ্মন্ত চামিরার অসাধারণ ক্যাচ ডিসির ফিল্ডিংয়ের উৎকর্ষ দেখায়, তবে তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।

সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বাস

এক্স প্ল্যাটফর্মে ম্যাচটি নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা গেছে। একটি পোস্টে বলা হয়, “সুনীল নারিন আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি আইপিএলের সেরা স্পিনার! কেকেআরের এই প্রত্যাবর্তন অবিশ্বাস্য।” আরেকটি পোস্টে চামিরার ক্যাচের প্রশংসা করে বলা হয়, “চামিরার ক্যাচ ছিল ম্যাচের হাইলাইট, কিন্তু নারিনের বোলিং ছিল গেম-চেঞ্জার।” কলকাতার সমর্থকরা কেকেআরের এই জয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

কেকেআরের এই ১৪ রানের জয় আইপিএল ২০২৫-এর একটি রোমাঞ্চকর মুহূর্ত হিসেবে মনে থাকবে। সুনীল নারিনের স্পিন জাদু এবং বরুণ চাক্রবর্তীর শেষ মুহূর্তের ধাক্কা কেকেআরকে প্লে-অফের দৌড়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। ডিসির ফাফ ডু প্লেসি এবং অক্ষর প্যাটেল দুর্দান্ত লড়াই করলেও, তারা কেকেআরের স্পিন আক্রমণের কাছে পরাস্ত হয়। ঘরের মাঠে ডিসির এই তৃতীয় হার তাদের প্লে-অফের পথে চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও, তারা এখনও লড়াইয়ে রয়েছে। কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা কেকেআরের এই জয়ে উৎসবের মেজাজে রয়েছেন, এবং নারিনের পারফরম্যান্স তাদের আশা আরও উজ্জ্বল করেছে।