‘‘যেন চলে যাননি”: ছেত্রীর প্রত্যাবর্তনে টুইটারে উচ্ছ্বাস

গতকাল বুধবার শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভারত ও মালদ্বীপের (India vs Maldives) মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ভারতীয় ফুটবল দল, ব্লু টাইগার্স, ৩-০ গোলে জয়লাভ…

Sunil Chhetri Shines as India Beats Maldives

গতকাল বুধবার শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভারত ও মালদ্বীপের (India vs Maldives) মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ভারতীয় ফুটবল দল, ব্লু টাইগার্স, ৩-০ গোলে জয়লাভ করেছে। এই জয়ের মাধ্যমে ভারত ৪৮৯ দিনের জয়হীনতার অবসান ঘটিয়েছে। তবে, এই ম্যাচের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri ), যিনি অবসর থেকে ফিরে এসে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর ফিরে আসা এবং গোল করার ঘটনা ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের জন্য একটি অবিস্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে উঠেছে।

Also Read | শিলংয়ের মাঠে ‘শেষের কবিতা’ লিখল সুনীল ব্রিগেড

   

ম্যাচের শুরুটা দারুণ হয়েছিল। ভারতীয় ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে ৩৫তম মিনিটে ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেসের একটি নিখুঁত কর্নার থেকে হেড করে প্রথম গোলটি করেন। এরপর ৬৬তম মিনিটে লিস্টন কোলাকো আরেকটি গোল করে ভারতের আধিপত্য আরও শক্তিশালী করেন। তবে, ম্যাচের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মুহূর্তটি আসে ৭৬তম মিনিটে, যখন সুনীল ছেত্রী একটি দুর্দান্ত হেডারের মাধ্যমে তাঁর ৯৫তম আন্তর্জাতিক গোলটি করেন। এই গোলের পর জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে উপস্থিত ব্লু পিলগ্রিমস নামে পরিচিত ভারতীয় সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। সুনীলের এই প্রত্যাবর্তন এই প্রীতি ম্যাচকে একটি সাধারণ খেলা থেকে ভারতীয় ফুটবল সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশেষ উৎসবে রূপান্তরিত করেছে।

Sunil Chhetri Scores on Return as India Beat Maldives 3-0 in Friendly

সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন: একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত
সুনীল ছেত্রী গত বছর জুন মাসে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন। তবে, ভারতীয় দলের সাম্প্রতিক খারাপ পারফরম্যান্স এবং এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের গুরুত্ব বিবেচনা করে কোচ মানোলো মার্কেজ তাঁকে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করেন। ৪০ বছর বয়সেও ছেত্রী প্রমাণ করেছেন যে তিনি এখনও ভারতের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গোলদাতা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) চলতি মৌসুমে ২৪ ম্যাচে ১২ গোল করে তিনি তাঁর ফর্মের প্রমাণ দিয়েছেন। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে তাঁর গোলটি ছিল তাঁর অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার একটি উজ্জ্বল প্রদর্শন।

ম্যাচের পর সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে টুইটারে (এক্স), তাঁর প্রত্যাবর্তন এবং দলের জয় নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। অনেকে লিখেছেন, “যেন কখনোই চলে যাননি” (#LikeHeNeverLeft), যা দিয়ে তারা বোঝাতে চেয়েছেন যে ছেত্রী এখনও ভারতীয় ফুটবলের প্রাণ। তাঁর এই গোল এবং নেতৃত্ব ভারতকে আগামী ২৫ মার্চ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের জন্য একটি বড় প্রেরণা জোগাবে।

সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া: টুইটারে উৎসবের আমেজ
মালদ্বীপের বিরুদ্ধে এই জয়ের পর ভারতীয় ফুটবল সমর্থকরা টুইটারে তাদের আনন্দ ও গর্ব প্রকাশ করেছেন। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
একজন সমর্থক লিখেছেন, “৪৮৯ দিন পর জয়! সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন যেন একটা স্বপ্ন। দলের সবাই দারুণ খেলেছে। এবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয় চাই!”
• আরেকজন লিখেছেন, “লিস্টনের ম্যাজিক, রাহুলের দৃঢ়তা, আর ছেত্রীর গোল—এটা ভারতীয় ফুটবলের পুনর্জন্ম। যেন তিনি কখনোই চলে যাননি।”
• একজন ভক্ত মন্তব্য করেছেন, “৪০ বছরে এমন ফর্ম! সুনীল ছেত্রী শুধু গোলই করেননি, ভারতীয় ফুটবলের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছেন।”
• আরেকটি টুইটে লেখা হয়েছে, “ছেত্রীর গোলের পর স্টেডিয়ামের উল্লাস আমার কাছে টিভিতেও অনুভব করা গেছে। এটাই আমাদের ক্যাপ্টেনের জাদু।”

এই প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে স্পষ্ট যে ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন কেবল একটি খেলোয়াড়ের ফিরে আসা নয়, বরং ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি আশার আলো। সমর্থকরা এই জয়কে একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন, যা দলের ভবিষ্যৎ পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

India lead by 1-0 against Maldives in 1st Half Update of International Friendly Match

ম্যাচের বিশ্লেষণ: ভারতের আধিপত্য
ম্যাচে ভারত শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে। রাহুল ভেকের প্রথম গোলটি ছিল সেট-পিস থেকে, যা ভারতের কৌশলগত শক্তি প্রকাশ করে। লিস্টন কোলাকোর দ্বিতীয় গোলটিও একটি কর্নার থেকে আসে, যা দলের উচ্চতা ও সমন্বয়ের প্রমাণ দেয়। তবে, ছেত্রীর গোলটি ছিল ওপেন প্লে থেকে, যেখানে লিস্টনের ক্রসে তিনি একটি সূক্ষ্ম হেডার দিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। এই গোলটি তাঁর অভিজ্ঞতা এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতার প্রতীক।

মালদ্বীপের বিপক্ষে এই ম্যাচটি ভারতের জন্য একটি প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করেছে। ১২৬ নম্বরে থাকা ভারত ১৬২ নম্বরে থাকা মালদ্বীপের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিতভাবেই জিতেছে। তবে, এই জয়ের গুরুত্ব শুধু ফলাফলের মধ্যে নয়, বরং দলের মনোবল বাড়ানো এবং ছেত্রীর প্রত্যাবর্তনের প্রভাবে।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে
এই জয় ভারতীয় ফুটবল দলকে আগামী ম্যাচের জন্য প্রস্তুত করেছে। ২৫ মার্চ শিলংয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারের প্রথম ম্যাচে ভারত এই জয়ের ধারা বজায় রাখতে চাইবে। কোচ মানোলো মার্কেজের অধীনে এটি তাঁর প্রথম জয়, এবং তিনি আশা করছেন যে ছেত্রীর উপস্থিতি দলকে আরও শক্তিশালী করবে।

ছেত্রীর ফিরে আসা ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি বড় প্রশ্নও তুলেছে—তাঁর পরে কে এই দায়িত্ব নেবে? তবে, এই মুহূর্তে সমর্থকরা তাঁর প্রত্যাবর্তনের আনন্দে মেতে আছেন। তাঁর ৯৫তম গোল তাঁকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গোলদাতাদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রেখেছে, যা ভারতীয় ফুটবলের জন্য গর্বের বিষয়।

সমর্থকদের আবেগ ও প্রত্যাশা
টুইটারে সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায় যে ছেত্রী শুধু একজন খেলোয়াড় নন, তিনি ভারতীয় ফুটবলের আবেগ। তাঁর শান্ত উদযাপন, গোলের পর স্টেডিয়ামের উল্লাস, এবং দলের জয়—এসব মিলিয়ে একটি অবিস্মরণীয় দিন তৈরি করেছে। সমর্থকরা এখন আশা করছেন যে এই জয় ভারতীয় ফুটবলের নতুন যুগের সূচনা করবে।

সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন এবং মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের জয় ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। “যেন কখনোই চলে যাননি”—এই কথাটি সমর্থকদের মনে ছেত্রীর অবিচ্ছেদ্য উপস্থিতির প্রতিফলন ঘটায়। তাঁর নেতৃত্বে ভারত এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং সমর্থকরা আশাবাদী যে ব্লু টাইগার্স এই ধারা অব্যাহত রাখবে। শিলংয়ের এই জয় ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।