সাময়িক বিরতির পরে আইএসএলের (ISL) অষ্টম ম্যাচে শনিবার রাতে ঘরের মাঠে শক্তিশালী জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল মোহনবাগান (Mohun Bagan) সুপার জায়ান্ট। খালিদ জামিলের প্রশিক্ষণে থাকা জামশেদপুর এফসিকে সহজেই পরাজিত করে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। ম্যাচ শেষে স্কোরবোর্ডে তিন গোলে ব্যবধান স্পষ্ট করে দিয়েছিল বাগান শিবিরের শ্রেষ্ঠত্ব। লিস্টন কোলাসোর চমকপ্রদ গোল থেকে শুরু করে জেমি ম্যাকলারেনের বিশ্বমানের ফিনিশিং, সব মিলিয়ে এই ম্যাচে মোহনবাগানের দাপট ছিল দেখার মতো।
লিস্টনের পারফরম্যান্সে চমক
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকে মোহনবাগান। বলের দখল, পাসিং, এবং আক্রমণে প্রতিপক্ষের থেকে অনেকটা এগিয়ে ছিল তারা। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে লিস্টন কোলাসো একটি অসাধারণ গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। গোলটি ছিল সত্যিই দেখার মতো, যেখানে বলকে অসাধারণ স্কিলে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে পরাস্ত করে জালে জড়িয়েছিলেন লিস্টন। এ গোলের ফলে সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
ম্যাকলারেনের গোল মেশিন অব্যাহত
দ্বিতীয়ার্ধে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার জেমি ম্যাকলারেন আবারও প্রমাণ করলেন কেন তাকে আইএসএলের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড বলা হয়। একটি নিখুঁত হেডারে গোল করে দলের জয় সুনিশ্চিত করেন। এছাড়াও ম্যাচের শেষ মুহূর্তে টম আলড্রেড গোল করে প্রতিপক্ষের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন।
পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে বাগান
এই জয়ের ফলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট উঠে এসেছে আইএসএলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানে। আটটি ম্যাচ শেষে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগে সবার আগে রয়েছে সবুজ-মেরুন। তবে বেঙ্গালুরু এফসিও সমসংখ্যক পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। গোল পার্থক্যের নিরিখে এগিয়ে রয়েছে মোহনবাগান।
অধিনায়ক শুভাশিস বসুর মূল্যায়ন
ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের পারফরম্যান্স সম্পর্কে কথা বলেন অধিনায়ক শুভাশিস বসু (Subhasish Bose)। তিনি লিস্টনের প্রশংসা করে বলেন, “এমন পারফরম্যান্স লিস্টনের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। ওর এই ফর্ম দলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা ক্লিনশিট পেয়েছি এবং লিগ টেবিলের শীর্ষে রয়েছি। আমাদের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।”
গোল এবং দলের লক্ষ্য
গোল সংক্রান্ত প্রশ্নে শুভাশিস বলেন, “টমের গোল হোক কিংবা লিস্টনের, প্রতিটি গোলই দলের জয়ের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো কমপ্যাক্ট থাকা এবং কম গোল হজম করা। প্রতিদিন আমরা ডিফেন্সিভ ট্রেনিংয়ের উপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। কোচ জোসে মোলিনা আমাদের এই দিকটি নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছেন।”
ডিফেন্সিভ দৃঢ়তার দিকে জোর
ডিফেন্সিভ ইউনিট নিয়ে শুভাশিস আরও বলেন, “প্রত্যেক ম্যাচে ক্লিনশিট রাখার চেষ্টা করছি। দিন যত যাচ্ছে, দল ততই ভালোভাবে গঠিত হচ্ছে। আমরা নিজেদের আরও শক্তিশালী এবং কমপ্যাক্ট করতে চাই। প্রতিপক্ষ যাতে সহজে গোল করতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের কোচও এই বিষয়ে খুব যত্নবান।”
সমর্থকদের অবদান
ম্যাচ চলাকালীন মাঠে উপস্থিত সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দেখে শুভাশিস বলেন, “সমর্থকদের ভালোবাসা এবং সমর্থনই আমাদের বাড়তি অনুপ্রেরণা দেয়। তাঁদের জন্যই আমরা আরও ভালো খেলার চেষ্টা করি। আজকের এই জয় তাঁদের উৎসর্গ করছি।”
পরবর্তী চ্যালেঞ্জ
এই ম্যাচ জয়ের পরেও মোহনবাগানের সামনে রয়েছে একাধিক চ্যালেঞ্জ। পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও পরবর্তী ম্যাচগুলোতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। দল হিসেবে আরও উন্নতির জন্য কোচ মোলিনা ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা শুরু করেছেন। পরবর্তী ম্যাচগুলিতে মোহনবাগান কতটা নিজেদের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারে, তা সময়ই বলবে।
এই জয়ের ফলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এখন লিগ শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। দলের আক্রমণ থেকে ডিফেন্স, প্রতিটি বিভাগেই উন্নতির ছাপ স্পষ্ট। অধিনায়ক শুভাশিস বসুর মতোই বাকি খেলোয়াড়দেরও বিশ্বাস, দলগত চেষ্টাই এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণে সবুজ-মেরুন শিবির যে বদ্ধপরিকর, তা এদিনের ম্যাচেই প্রমাণিত।