২০২৫ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের (FIFA Club World Cup 2025) মহারণ শুরু হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। স্বাগতিক ম্যাচে ইন্টার মায়ামি ও আল আহলির গোলশূন্য ড্র দিয়ে উদ্বোধন হয়েছে এই আন্তমহাদেশীয় ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ১৫ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই টুর্নামেন্ট, যেখানে ৩২টি দল অংশ নিচ্ছে। ফিফার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এত বড় পরিসরে। ম্যানচেস্টার সিটি, রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ, পিএসজি এমন তারকাখচিত দলগুলোর পাশাপাশি ফ্ল্যামেঙ্গো, ফ্লুমিনেন্সে, বোটাফোগোর মতো লাতিন আমেরিকার শক্তিশালী ক্লাবগুলো মাঠ মাতাবে। তবে এই ঝলমলে আলোর নিচে রয়েছে কিছু অন্ধকার—নিয়মের কঠোরতার কারণে বেশ কিছু শীর্ষ দল ও তারকা এই মঞ্চে দর্শক হয়ে থাকছেন।
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মহাদেশীয় ক্লাব প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলগুলোই এই ক্লাব বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পেয়েছে। ইউরোপ থেকে ১২টি দল অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে চ্যাম্পিয়নস লিগ বিজয়ী চেলসি (২০২১), রিয়াল মাদ্রিদ (২০২২, ২০২৪), এবং ম্যানচেস্টার সিটি (২০২৩) স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাকি ৯টি দল নির্বাচিত হয়েছে উয়েফার চার বছরের র্যাঙ্কিং সিস্টেমের ভিত্তিতে, যা ক্লাবগুলোর ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে। এছাড়া, প্রতি দেশ থেকে সর্বোচ্চ দুটি দল অংশ নিতে পারার নিয়মও রয়েছে। এই কঠিন নিয়মের কারণে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের বেশ কিছু চ্যাম্পিয়ন দল বাদ পড়েছে।
ফিকে হল মেসি জাদু! উদ্বোধনী ম্যাচই গোলশূন্য
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল, লা লিগার বিজয়ী বার্সেলোনা, এবং সিরি ‘আ’ চ্যাম্পিয়ন নাপোলি এই টুর্নামেন্টে জায়গা পায়নি। স্পেন থেকে রিয়াল মাদ্রিদ সরাসরি জায়গা পাওয়ায়, বাকি একটি স্থানের জন্য বার্সেলোনার পরিবর্তে আতলেতিকো মাদ্রিদ নির্বাচিত হয়েছে, কারণ উয়েফার র্যাঙ্কিংয়ে আতলেতিকো বার্সার চেয়ে এগিয়ে ছিল। একইভাবে, ইংল্যান্ড থেকে চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটি জায়গা পাওয়ায় লিভারপুল বাদ পড়েছে। ইতালির ক্ষেত্রে, উয়েফার র্যাঙ্কিংয়ে ইন্টার মিলান ও জুভেন্টাসের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় নাপোলিও সুযোগ হারিয়েছে। ফলস্বরূপ, বুন্দেসলিগার বায়ার্ন মিউনিখ এবং লিগ আঁ-এর পিএসজিই কেবল ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে।
এই দলগুলোর অনুপস্থিতি শুধু ক্লাবের স্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব পড়েছে তারকা ফুটবলারদের ওপরও। লিভারপুলের মোহাম্মদ সালাহ, ভার্জিল ফন ডাইক, অ্যালেক্সিস ম্যাক আলিস্টার, বার্সেলোনার লামিনে ইয়ামাল, রাফিনিয়া, রবার্ট লেভানডস্কি এবং আল নাসারের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও কেভিন ডি ব্রুইনার মতো হাই-প্রোফাইল খেলোয়াড়রা এই টুর্নামেন্টে দর্শক হয়ে থাকছেন। ডি ব্রুইনা, যিনি ম্যানচেস্টার সিটির প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, সম্প্রতি নাপোলিতে যোগ দেওয়ায় এই প্রতিযোগিতায় খেলতে পারছেন না।
রোনাল্ডোর ক্ষেত্রেও ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার কিছু ক্লাব তাকে দলে নেওয়ার আগ্রহ দেখালেও, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় তিনিও বাইরে। একইভাবে, সান্তোসের হয়ে খেলা নেইমারও এই মঞ্চে অনুপস্থিত। এই তারকাদের অনুপস্থিতি ক্লাব বিশ্বকাপের আকর্ষণকে কিছুটা ম্লান করলেও, টুর্নামেন্টের প্রতিযোগিতামূলক চরিত্র এখনও অটুট। লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি, ম্যানচেস্টার সিটির হালান্ড, রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র—এমন তারকারা মাঠে নামছেন, যারা দর্শকদের মুগ্ধ করতে প্রস্তুত। ৮টি গ্রুপে ভাগ হওয়া ৩২টি দলের মধ্যে প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুটি দল নকআউট পর্বে উঠবে, যা প্রতিযোগিতার উত্তেজনা বাড়াবে। তবে, রোনাল্ডো, সালাহ, নেইমারের মতো নামগুলোর অনুপস্থিতি ভক্তদের মনে একটি শূন্যতা তৈরি করেছে।
ফিফার এই সম্প্রসারিত ফরম্যাট বিশ্ব ফুটবলের বৈচিত্র্য তুলে ধরলেও, নিয়মের কঠোরতা কিছু দল ও খেলোয়াড়কে বাইরে রেখেছে। এই টুর্নামেন্ট কি সত্যিই ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিনিধিত্ব করছে, নাকি নিয়মের জটিলতায় হারিয়ে গেছে তারকাদের ঝলক? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে, তবে এখন মাঠের লড়াইয়ে চোখ রাখা ছাড়া ভক্তদের আর কোনো উপায় নেই।