কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (CBIC) এক পরামর্শ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, GST হারের বিষয়ে অকাল জল্পনা এড়ানো উচিত। সিবিআইসি এক্স (X) পোস্টে স্পষ্ট করেছে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়া হয় না, বরং কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত জিএসটি কাউন্সিলের যৌথ আলোচনাতেই চূড়ান্ত হয়।
সিবিআইসি সতর্ক করে বলেছে, “অকাল জল্পনা প্রায়শই ভিত্তিহীন গুজব তৈরি করে এবং বাজারে অস্থিরতা বাড়ায়।” তাই সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের সরকারি ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে জিএসটি কাউন্সিলের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, কাউন্সিলের ৫৬তম বৈঠক আগামী ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে। উভয় দিন সকাল ১১টা থেকে বৈঠক শুরু হবে। তার আগে, ২ সেপ্টেম্বর অফিসারদের মিটিং অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বৈঠকের প্রাথমিক খসড়া ও বিষয়সূচি নির্ধারণ করা হবে। কাউন্সিল বৈঠকের নির্দিষ্ট এজেন্ডা ও স্থান-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
দুই স্ল্যাব জিএসটি-র প্রস্তাব:
বর্তমানে জিএসটি ব্যবস্থায় চারটি স্ল্যাব রয়েছে— ৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর তুলনামূলক কম কর এবং বিলাসী বা ‘ডিমেরিট’ পণ্যের উপর সর্বোচ্চ কর ধার্য হয়। এছাড়া প্যান মসলা, তামাকজাত দ্রব্য বা গাড়ির মতো কিছু জিনিসে আলাদা ক্ষতিপূরণ সেস ধার্য রয়েছে।
তবে কেন্দ্র সম্প্রতি কর কাঠামো দুই স্ল্যাবে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে—
৫% (যেখানে সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত প্রায় সব পণ্য অন্তর্ভুক্ত হবে। বর্তমানে ১২% শ্রেণির প্রায় ৯৯% আইটেম ৫%-এ আনা হতে পারে)।
১৮% (যেখানে ২৮% শ্রেণির প্রায় ৯০% আইটেমকে সরিয়ে আনা হবে)।
এর পাশাপাশি, কেন্দ্র একটি নতুন ৪০% স্ল্যাব প্রস্তাব করেছে, যা বিশেষ বিলাসবহুল ও ‘সিন গুডস’-এর উপর প্রযোজ্য হতে পারে।
যদিও কর কাঠামো সরলীকরণের প্রস্তাব রাজ্যগুলির অনেকেই নীতিগতভাবে সমর্থন করেছে, তবুও তাদের বড় উদ্বেগ রয়ে গেছে। অনেক রাজ্যের অভিযোগ, দুই স্ল্যাবের কারণে কর আদায় কমতে পারে, যার ফলে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই তারা আবারও ক্ষতিপূরণ সেস চালু রাখার দাবি তুলেছে।
জিএসটি চালুর সময় কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, পাঁচ বছরের জন্য রাজ্যগুলিকে রাজস্ব ক্ষতি পূরণের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ২০২২ সালে সেই মেয়াদ শেষ হলেও বিভিন্ন রাজ্য এখনও এর বাড়ানোর দাবি করে আসছে। ফলে সেপ্টেম্বরের বৈঠকে ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গটি বড় বিতর্কের কেন্দ্র হতে চলেছে।
এবারের বৈঠকে বিশেষভাবে আলোচিত হবে তিনটি গোষ্ঠী মন্ত্রীর (GoM) সুপারিশ—
1. রেট র্যাশনালাইজেশন (হার সরলীকরণ ও যৌক্তিকীকরণ)
2. ক্ষতিপূরণ সেস
3. স্বাস্থ্য ও জীবনবীমা খাতে জিএসটি
সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে হওয়া বৈঠকে গোএম নীতিগতভাবে কেন্দ্রের দুই স্ল্যাব প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সেপ্টেম্বরের মূল বৈঠকেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চার স্ল্যাব থেকে দুই স্ল্যাবে নামিয়ে আনা হলে সাধারণ মানুষের জন্য কর ব্যবস্থা অনেক সরল হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে কর কমলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো স্বস্তি পেতে পারে। তবে ২৮% শ্রেণির পণ্যে কর কমে ১৮%-এ নামলে গাড়ি বা ইলেকট্রনিক্সের মতো শিল্পখাত বাড়তি চাহিদা পেতে পারে।
অন্যদিকে, ৪০% নতুন স্ল্যাব চালু হলে বিলাস সামগ্রী বা তামাকজাত দ্রব্য আরও দামী হয়ে উঠবে। এতে একদিকে সরকারের রাজস্ব বাড়বে, আবার স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে অর্থনীতিবিদদের একাংশ সতর্ক করছেন, যদি কর হ্রাসের ফলে রাজস্ব ঘাটতি বাড়ে এবং কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ সেস বন্ধ করে দেয়, তাহলে রাজ্যগুলির আর্থিক চাপ বেড়ে যাবে। রাজ্যগুলির উন্নয়ন প্রকল্পে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
সব চোখ এখন ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বরের বৈঠকের দিকে। সিবিআইসি ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে যে বৈঠকের আগে কোনো জল্পনা-গুজব এড়ানো উচিত। কারণ এর ফলে শেয়ার বাজার, পণ্য বাজার ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
কাউন্সিলের এই বৈঠক শুধু জিএসটি হারের সরলীকরণেই নয়, গোটা অপরোক্ষ কর ব্যবস্থার ভবিষ্যত রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কেন্দ্রের লক্ষ্য, একদিকে কর কাঠামো সহজ করা, অন্যদিকে রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে রাজ্যগুলিকেও সুরক্ষিত রাখা। ফলে আসন্ন বৈঠক ব্যবসায়ী সমাজ থেকে সাধারণ করদাতা—সবার কাছেই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।