ভারতীয় ফুটবল (Mohun Bagan) সমর্থকদের কাছে একটি পরিচিত এবং আবেগময় নাম সোনি নর্ডি (Sonny Norde)। হাইতির এই প্রতিভাবান মিডফিল্ডার একসময় মোহনবাগান (Mohun Bagan) অ্যাথলেটিক ক্লাবের প্রাণভোমরা ছিলেন। তার পায়ে জাদু ছিল, চোখে ছিল আগুন। গ্যালারিতে হাজারো সমর্থক শুধুমাত্র সোনির খেলা দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন। সেই ফুটবল-প্রেমীদের জন্যই ফিরে আসতে পারেন তাঁদের প্রিয় ফুটবলার। তবে চমক এটাই, সোনির সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের গন্তব্য আর সবুজ-মেরুন নয়। বরং, এবার তাঁকে দেখা যেতে পারেন কলকাতা ফুটবল লিগের এক নাম করা ক্লাবে।
মেরিনার্সদের ভালবাসার কেন্দ্রে সোনি
২০১৪-১৫ আই-লিগ মরসুমে মোহনবাগানে যোগ দেন সোনি নর্ডি। আর প্রথম সিজনেই চমকে দেন তিনি। ৯টি গোল করেন, সঙ্গে ১৩টি অ্যাসিস্ট। তাঁর হাত ধরেই দীর্ঘদিন পর আই-লিগের শিরোপা ওঠে বাগানের ঝুলিতে। এরপর ২০১৫-১৬ মরসুমে ফেডারেশন কাপ জয়, ২০১৬ এএফসি কাপে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে সোনি হয়ে ওঠেন মেরিনার্সদের হৃদয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। দক্ষিণ চিন, ইয়াঙ্গন ইউনাইটেডের মতো দলগুলির বিরুদ্ধে তাঁর গোল এখনও সমর্থকদের স্মৃতিতে অমলিন।
তবে ২০১৮ সালে ডান পায়ের হাঁটুর চোট তাঁকে অনেকটাই পিছিয়ে দেয়। সেই বছরই মোহনবাগান তাঁকে ছেড়ে দেয়। পরের বছর তিনি দেশ ছেড়ে ফিরে যান হাইতিতে। সেই বিদায় ছিল আবেগঘন, চোখে জল এনে দিয়েছিল হাজারো সমর্থকের।
প্রতিশ্রুতি ছিল শুধুই বাগানের
ভারত ছাড়ার আগে সোনি এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—যদি কখনও ভারতে ফিরে আসেন, তবে খেলবেন শুধুই মোহনবাগানের হয়ে। সেই প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা রেখেই এত বছর ধরে তাঁর প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলেন মেরিনার্সরা। কিন্তু সময় বদলেছে, ফুটবলের বাস্তবতাও বদলেছে।
বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার লিগ-১-এ মালুট ইউনাইটেড এফসির হয়ে খেলছেন সোনি। শোনা যাচ্ছে, তাঁর সঙ্গে ওই ক্লাবের চুক্তি নবায়ন হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে একইসঙ্গে উঠে এসেছে একটি নতুন খবর ভারতে ফিরে আই-লিগে খেলতে পারেন তিনি, কিন্তু এবার মোহনবাগান নয়, বরং ডায়মন্ড হারবার এফসির হয়ে।
ডায়মন্ড হারবার এফসির বড় পরিকল্পনা
সম্প্রতি আই-লিগে যোগ্যতা অর্জন করেছে ডায়মন্ড হারবার এফসি। দলের পিছনে রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, আই-লিগে নামার আগেই দলের শক্তি বাড়াতে একজন অভিজ্ঞ মিডফিল্ডারকে সই করাতে চাইছে ক্লাব। সেই উদ্দেশ্যেই নাকি সোনি নর্ডিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, একটি বড় অঙ্কের চুক্তির প্রস্তাবও রাখা হয়েছে তাঁর সামনে। বর্তমানে আলোচনা চলছে প্রাথমিক পর্যায়ে। চূড়ান্ত কোনও ঘোষণা এখনও হয়নি। তবে ডায়মন্ড হারবার যে সিজন শুরুর আগেই বড়সড় চমক দিতে চাইছে, তা বলাই যায়।
মেরিনার্সদের মন ভাঙবে?
এই খবর সামনে আসতেই স্বাভাবিকভাবেই অনেক মেরিনার্সের মনে দুঃখ এবং ক্ষোভ—তাঁদের “সোনি” কেন ফিরছেন অন্য ক্লাবে? তাঁর প্রতিশ্রুতি তাহলে? তবে এও ঠিক, ৬ বছর পেরিয়ে গেছে সেই বিদায়ের পর। সোনির জীবন, কেরিয়ার—সবকিছুই বদলেছে। নতুন ক্লাব, নতুন লক্ষ্য—এটাই হয়তো বাস্তবতা।
প্রত্যাবর্তনের আশা আর প্রশ্নচিহ্ন
তবে এখনও নিশ্চিত নয় কিছুই। মালুট ইউনাইটেডের সঙ্গে তাঁর বর্তমান চুক্তি নবায়ন হলে সোনির ভারতে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাছাড়া, দীর্ঘ চোটের পর তাঁর ফিটনেস নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। আই লিগের দীর্ঘ সূচির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া আদৌ সহজ হবে কি না, সেটাও দেখার বিষয়।
সোনি নর্ডির প্রত্যাবর্তন যদি সত্যি হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে ভারতীয় ফুটবলের জন্য বড় খবর। তিনি মোহনবাগানে খেলুন বা অন্য কোথাও—তাঁর জাদুকরী পায়ের খেলা আবার দেখতে পাওয়া মানে ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। তবে মেরিনার্সদের হৃদয়ে তাঁর জায়গা যে অপরিবর্তনীয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সময়ই বলবে, সোনি আবার ভারতের মাঠে নামবেন কি না। তবে এ কথা নিশ্চিত, তাঁর ফিরে আসা মানেই ফুটবলের আবেগের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।