বার্মিংহামের এডবাস্টন ক্রিকেট মাঠে ২০২৫ সালের ৬ জুলাই, রবিবার, ভারতীয় ক্রিকেট দল ইতিহাস রচনা করেছে (India vs England) । শুভমান গিলের নেতৃত্বে ভারত দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৩৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে সিরিজে ১-১ সমতা ফিরিয়ে এনেছে। এডবাস্টনে এটি ভারতের প্রথম টেস্ট জয়, যেখানে তারা এর আগে ৮টি ম্যাচ খেলে ৭টিতে হেরেছিল এবং একটি ড্র করেছিল। গিলের রেকর্ড গড়া ব্যাটিং এবং ভারতীয় বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সৌজন্যে এই জয় সম্ভব হয়েছে।
গিলের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্য
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে শুভমান গিল ৩৮৭ বলে ২৬৯ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, যা ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এই ইনিংসটি ভারতের বিদেশের মাটিতে কোনো ব্যাটসম্যানের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এবং ইংল্যান্ডে সর্বোচ্চ। এর আগে শুধুমাত্র বীরেন্দ্র সেহওয়াগ (৩০৯, মুলতান, ২০০৪) এবং রাহুল দ্রাবিড় (২৭০, রাওয়ালপিন্ডি, ২০০৪) এর থেকে বেশি রান করেছেন। গিলের এই ২৬৯ রানের ইনিংস ভারতকে প্রথম ইনিংসে ৫৮৭ রানের বিশাল স্কোরে পৌঁছে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ১৬২ বলে ১৬১ রানের আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, যা তাকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে একই ম্যাচে ২০০ এবং ১৫০ রানের ইনিংস খেলার কৃতিত্ব এনে দেয়। ম্যাচে তার মোট ৪৩০ রান গ্রাহাম গুচের ৪৫৬ রানের পর টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ভারতের বোলিংয়ের দাপট
ভারতের বোলিং আক্রমণও এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম ইনিংসে মোহাম্মদ সিরাজ ৬টি উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ৪০৭ রানে গুটিয়ে দেন। বাংলার আকাশ দীপ জসপ্রিত বুমরাহর পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন, তিনি ৪টি উইকেট নিয়ে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপকে ধ্বংস করতে সিরাজ এবং আকাশ দীপের নতুন বলের দাপট অসাধারণ ছিল। ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যান জ্যাক ক্রলি (০), বেন ডাকেট (২৫) এবং জো রুট (৬) দ্রুত আউট হয়ে যান, যার ফলে ইংল্যান্ড চতুর্থ দিনের শেষে ৭২/৩-এ দাঁড়িয়ে ছিল। পঞ্চম দিনে ভারতীয় বোলাররা তাদের আধিপত্য বজায় রাখে এবং ইংল্যান্ডকে ২৭১ রানে গুটিয়ে দেয়, যার ফলে ভারত ৩৩৬ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত
প্রথম দিনে শুভমান গিলের অপরাজিত ১১৪ এবং রবীন্দ্র জাদেজার ৪১ রানে ভারত ৩১০/৫-এ শেষ করে। যশস্বী জয়সওয়ালের ৮৭ রানের ইনিংসও দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দ্বিতীয় দিনে গিলের ২৬৯ এবং জাদেজার ৮৯ রানের সৌজন্যে ভারত বিশাল স্কোর গড়ে। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে হ্যারি ব্রুক এবং জো রুট কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও সিরাজের বোলিং তাদের ভেঙে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ৪২৭/৬-এ ডিক্লেয়ার করে, যেখানে গিলের ১৬১, রিশভ পান্তের ৬৫ এবং জাদেজার ৬৯ রান উল্লেখযোগ্য। ইংল্যান্ডের জন্য ৬০৮ রানের লক্ষ্য ছিল অসম্ভব, এবং ভারতীয় বোলাররা তাদের দ্রুত ধ্বংস করে দেয়।
এডবাস্টনের ইতিহাস ভাঙল ভারত
এডবাস্টনে ভারতের এই জয় ঐতিহাসিক কারণ এটি তাদের প্রথম জয় এই মাঠে। ১৯৬৭ সাল থেকে ৮টি টেস্ট খেলে ভারত কখনো জয় পায়নি, এবং এই জয় তাদের ৫৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। গিলের নেতৃত্ব, ব্যাটিং এবং দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের মনে নতুন আশা জাগিয়েছে।
সিরিজের ভবিষ্যৎ
এই জয়ের ফলে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ভারত এখন সমতায় ফিরেছে। প্রথম টেস্টে হেডিংলিতে ৩৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ইংল্যান্ড জয় পেলেও, এডবাস্টনে ভারত তাদের দাপট দেখিয়েছে। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ লর্ডসে অনুষ্ঠিত হবে, এবং গিলের নেতৃত্বে ভারত এখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। এই জয় শুধুমাত্র একটি ম্যাচ জয় নয়, বরং ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। গিলের ব্যাটিং এবং অধিনায়কত্বের প্রশংসা করেছেন সাবেক ক্রিকেটাররা, এবং ভক্তরা এখন লর্ডসে আরেকটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের অপেক্ষায় রয়েছেন।
শুভমান গিলের অসাধারণ নেতৃত্ব এবং ব্যাটিং দক্ষতার সাথে ভারতীয় দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এডবাস্টনে একটি ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছে। এই জয় কেবল সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনেনি, বরং ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে। লর্ডসে পরবর্তী ম্যাচে ভারত কীভাবে এই গতি ধরে রাখে, তা দেখার জন্য ক্রিকেট বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।