আইপিএল ২০২৫-এর ৩৯তম ম্যাচে গুজরাট টাইটানস (GT) তাদের অধিনায়ক শুভমন গিলের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের জোরে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (KKR) ৩৯ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে গিল তার পুরনো দল কেকেআর-এর বিরুদ্ধে ৫৫ বলে ৯০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে জিটি-কে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৮ রানের শক্তিশালী স্কোরে পৌঁছে দেন। এই জয়ের ফলে জিটি পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করেছে, যেখানে তারা ৭ ম্যাচে ৫ জয় নিয়ে দাপট দেখাচ্ছে। অন্যদিকে, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কেকেআর প্লে-অফের দৌড়ে চার পয়েন্ট পিছিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে, যা তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
গিল-সুদর্শনের শতরানের জুটি
টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্ক্য রাহানে। তবে, জিটি-র ওপেনিং জুটি শুভমন গিল এবং সাই সুদর্শন কেকেআর-এর বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ১১৪ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন। গিল ৩৪ বলে তার তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন, যেখানে তিনি ১০টি চার এবং তিনটি ছক্কার সাহায্যে ৯০ রান করেন। সুদর্শনও তার ষষ্ঠ ম্যাচে পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি করেন, ৩৬ বলে ৫২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে। এই জুটি ইডেনের সমতল পিচ এবং কেকেআর-এর রক্ষণাত্মক ফিল্ডিংয়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে। জোস বাটলার ২৩ বলে অপরাজিত ৪১ রান করে ইনিংসকে আরও শক্তিশালী করে। শেষ পাঁচ ওভারে জিটি মাত্র ৫৯ রান তুললেও, কেকেআর-এর স্পিনাররা, বিশেষ করে বরুণ চক্রবর্তী এবং সুনীল নারিন, মিডল ওভারে দারুণ বোলিং করে রানের গতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখে। চক্রবর্তী ১৪তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।
কেকেআর-এর বোলিংয়ের সংগ্রাম
কেকেআর তাদের বোলিংয়ে একাধিক পরিবর্তন আনে, পাওয়ারপ্লেতে চারজন বোলার ব্যবহার করে, যার মধ্যে স্পিনার মঈন আলি এবং বরুণ চক্রবর্তীও ছিলেন। তবে, তারা প্রাথমিক ব্রেকথ্রু পেতে ব্যর্থ হয়। আন্দ্রে রাসেল শেষ পর্যায়ে সুদর্শনকে আউট করলেও, জিটি-র ব্যাটিং গভীরতা তাদের একটি চ্যালেঞ্জিং স্কোরে পৌঁছে দেয়। বাটলারের উপর দুটি ড্রপ ক্যাচ কেকেআর-এর জন্য ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয়, যেখানে ভৈবব অরোরা এবং মনীশ পাণ্ডে সুযোগ হাতছাড়া করেন। জিটি-র ব্যাটিং ইউনিট তাদের শান্ত কিন্তু কার্যকর কৌশলের মাধ্যমে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে।
কেকেআর-এর ব্যাটিং ধস
১৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কেকেআর শুরুতেই ধাক্কা খায়। মোহাম্মদ সিরাজ প্রথম ওভারেই রহমানউল্লাহ গুরবাজকে আউট করেন। অধিনায়ক অজিঙ্ক্য রাহানে ৫০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেললেও, বাকি ব্যাটাররা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন। বেঙ্কটেশ আইয়ার ১৫ বলে মাত্র ১১ রান করে স্পিনারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। রিঙ্কু সিং, সুনীল নারিন এবং আন্দ্রে রাসেলের মতো বিস্ফোরক ব্যাটাররাও জিটি-র বোলারদের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। রশিদ খান দুই ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন, যা কেকেআর-এর রান তাড়ার গতিকে পুরোপুরি থামিয়ে দেয়। জিটি-র প্রতিটি বোলার অন্তত একটি করে উইকেট নেন, যা তাদের বোলিং ইউনিটের গভীরতা এবং শৃঙ্খলার প্রমাণ দেয়। কেকেআর ২০ ওভারে ১৫৯ রানে গুটিয়ে যায়, যা তাদের প্লে-অফের সম্ভাবনায় বড় ধাক্কা দেয়।
গিলের নেতৃত্ব এবং কৌশল
শুভমন গিল শুধু ব্যাট হাতেই নয়, কৌশলগত দিক থেকেও এই ম্যাচে তার প্রাক্তন দলকে ছাড়িয়ে যান। তার বুদ্ধিদীপ্ত ফিল্ড সেটিং এবং বোলিং পরিবর্তন কেকেআর-এর ব্যাটিং লাইনআপকে পুরোপুরি অকার্যকর করে দেয়। সামাজিক মাধ্যমে ভক্তরা গিলের এই পারফরম্যান্সকে ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কারণ কেকেআর তাকে অতীতে রিলিজ করেছিল। এক্স-এ একজন ভক্ত লিখেছেন, “গিল তার ব্যাট এবং নেতৃত্ব দিয়ে কেকেআর-কে দেখিয়ে দিয়েছেন তারা কী হারিয়েছে।”
প্লে-অফের সমীকরণ
এই জয়ের ফলে জিটি পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে, এবং তাদের প্লে-অফের পথ এখন অনেকটাই স্পষ্ট। অন্যদিকে, কেকেআর-এর জন্য প্লে-অফে পৌঁছানো এখন অনেকটাই কঠিন। তারা মাত্র ৭ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে এবং প্লে-অফের জন্য তাদের বাকি ম্যাচগুলোতে বড় জয় এবং অন্য দলের ফলাফলের উপর নির্ভর করতে হবে। কেকেআর-এর ব্যাটিং ইউনিটের ধারাবাহিক ব্যর্থতা এই মরশুমে তাদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অজিঙ্ক্য রাহানে ছাড়া তাদের কোনো ব্যাটারই ধারাবাহিকভাবে রান করতে পারছেন না। আন্দ্রে রাসেল এই মরশুমে মাত্র ৩১ বল খেলেছেন এবং তার স্ট্রাইক রেট ৭৫-এর কাছাকাছি, যা তার স্বাভাবিক বিস্ফোরক স্টাইলের সঙ্গে মেলে না।
ম্যাচের তাৎপর্য
এই ম্যাচ শুভমন গিলের জন্য ব্যক্তিগত বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তার প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে এমন প্রভাবশালী পারফরম্যান্স তাকে ভারতীয় ক্রিকেটের উদীয়মান নেতা হিসেবে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে। জিটি-র শান্ত কিন্তু কার্যকর ব্যাটিং কৌশল এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিং তাদের এই মরশুমে শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অন্যদিকে, কেকেআর-কে তাদের ব্যাটিং সমস্যা সমাধান করতে হবে, বিশেষ করে তাদের তারকা খেলোয়াড়দের ফর্মে ফিরতে হবে, যদি তারা প্লে-অফের আশা বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
এই ম্যাচে জিটি-র সমর্থকরা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে, এবং সামাজিক মাধ্যমে গিলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “শুভমন গিলের এই ইনিংস দেখায় কেন তিনি বিশ্বের শীর্ষ ব্যাটারদের একজন।” আইপিএল ২০২৫ এখন আরও রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে, এবং জিটি-র এই জয় তাদের শিরোপার দৌড়ে অন্যতম ফেভারিট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।