গত কয়েক বছরে ভারতীয় ক্রিকেটে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে শুভমন গিল (Shubman Gill)। যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T20 World Cup) খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর, তবুও বিশ্বকাপের ট্রফি জেতার পর গিলের মুখে উজ্জ্বল আবেগ ঝরেছে। সদ্য, এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় দলের এই তরুণ ব্যাটসম্যান প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির ভবিষ্যত নিয়ে তাঁর ভাবনা। তিনি জানিয়েছেন, ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেট দলের দুটি বড় নামের অবসর নেওয়ার বিষয়টি তাঁর কাছে এক বিশেষ অনুভূতির ছিল।
শুভমন গিলের কথায়, “টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোহলি ও রোহিতদের খেলার কথা আমরা তখন জানতাম না। অনেকেই চিন্তা করেছিলেন, হয়তো তাঁদের জন্য সেটি শেষ বিশ্বকাপ হবে। কিন্তু যখন আমি তাঁদের বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে দেখলাম, আমার জন্য সেটা ছিল এক অসাধারণ মুহূর্ত। রোহিতভাই এবং বিরাটভাইকে একসঙ্গে বিশ্বকাপ জয়ী হিসেবে দেখাটা সত্যিই স্বপ্নের মতো ছিল।”
বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতীয় দলের সদস্যরা যে মুহূর্তে নতুন যুগের শুরু করছেন, সে বিষয়ে শুভমন গিল নিশ্চিত। তাঁর মতে, ভারতীয় ক্রিকেট দল দীর্ঘ সময় ধরে কোনো আইসিসি ট্রফি জিততে পারেনি। তবে বিশ্বকাপ জয় সেই খরার অবসান ঘটিয়েছে। “ভারতীয় দলের জন্য এটি নতুন এক দারুণ সময়ের শুরু হয়েছে,” গিল বলছেন।
তবে এই বিশ্বকাপ জয় তার জন্য একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা ছিল। শুভমন গিল ফাইনাল ম্যাচের মূল সময় মাঠে খেলেননি, কারণ তিনি ছিলেন রিজার্ভ প্লেয়ার। তবে, তিনি মনে করেন, বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা শুধু খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা দলের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে উঠেছে। গিল বলেন, “আমি ওয়াশিংটনে ছিলাম, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলাম। সেই সময়েই আমি ম্যাচের শেষ কয়েকটা ওভার দেখেছিলাম। পুরো ম্যাচ না দেখতে পেলেও শেষ চার ওভার দেখার পরে আনন্দিত হয়েছিলাম। কারণ আগের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স সেভাবে ভালো হয়নি। এবার সেই হারানোর কষ্ট ঘোচানোর পর আমরা ট্রফি হাতে পেলাম।”
শুভমন আরও জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ জয় শুধু খেলার দিক থেকে নয়, বরং সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি তাঁর কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল। “বিশ্বকাপের জয় আমাদের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটা শুধু আমাদের দলের জন্য নয়, ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের জন্যও একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল,” গিল বলেন।
বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে শুভমন গিলের অনুভূতি ছিল গভীর। “যতটা আনন্দ আমি অনুভব করেছি, তা প্রকাশ করা কঠিন। রোহিত ও বিরাট দাদার সঙ্গে আমাদের টিম মিটিংয়ের সময় যখন সবার চোখে আনন্দ ছিল, তখন মনে হচ্ছিল একদিন আমরা প্রত্যেকে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। আর তা সম্ভব হয়েছে, দেশের সমর্থন আর দলের একসাথে কাজ করার জন্য।”
এই সবকিছুর মধ্যেও, গিল নিজেকে নিয়েও কিছু কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, “বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়া না পেলেও দলের অংশ হতে পারাটা এক বিশাল ব্যাপার ছিল। আমি জানি, আমার জন্য সামনে আরও অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে। তবে দলের জয়ে এক সদস্য হিসেবে অংশ নেওয়াটা আনন্দের।”
এর পাশাপাশি, গিল দলের জন্য তাঁর ভূমিকা নিয়ে বলেছেন, “আমি জানি, আমার পক্ষে আরও অনেক কিছু করার সুযোগ থাকবে। আমার লক্ষ্য দলের সেরা হতে এবং ভবিষ্যতে আরও আইসিসি ট্রফি জেতা।”
এছাড়া, গিল আক্ষেপের সুরে বলেন, “বিশ্বকাপে আমাদের সবার বড় লক্ষ্য ছিল দলকে জেতানো, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে খেলার সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টি আমার জন্য একটু কষ্টদায়ক ছিল। তবে এটি প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্যই স্বাভাবিক, কারণ প্রত্যেকে তাদের সুযোগের জন্য প্রস্তুত থাকে।”
তবে তিনি যে নিজের অঙ্গীকারে অবিচল, তা স্পষ্ট। তাঁর লক্ষ্য শুধু ভালো ক্রিকেট খেলা নয়, বরং ভারতের ক্রিকেট দলকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও উন্নত করা। “আমার মনে হয়, আমি এখন যে পথটিতে আছি, তার মাধ্যমে আমি আরও বড় সুযোগ পাবো এবং ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য কিছু বড় অর্জন এনে দিতে পারবো,” শুভমন গিল মন্তব্য করেন।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের জন্য এটি এক নতুন যুগের সূচনা, যেখানে তরুণদের সাহসিকতা এবং অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নেতৃত্ব একসঙ্গে মিলিত হচ্ছে। শুভমন গিলসহ তরুণ ক্রিকেটাররা ভবিষ্যতে দেশকে আরও অনেক সম্মান এনে দিতে সক্ষম হবে, এমনটাই আশা করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।
শেষ পর্যন্ত, শুভমন গিলের এই বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা ভারতীয় ক্রিকেটের এক নতুন প্রেরণা হয়ে থাকবে, যা তার দলকে আরও শক্তিশালী এবং সাহসী করবে, নতুন শিখর ছোঁয়ার জন্য।