হেডিংলির সবুজ মাঠ যেন সাক্ষী হয়ে থাকল টেস্ট ক্রিকেটের আরেকটি রোমাঞ্চকর অধ্যায়ের। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ভারত ও ইংল্যান্ড উপহার দিল এক স্মরণীয় লড়াই। এই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হল শেষ দিনের শেষ সেশনে গিয়ে। ৩৭১ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড পাঁচ উইকেট হাতে রেখে সহজ জয় তুলে নিল। ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় রুট-স্টোকসদের।
ভারতের রেকর্ড, কিন্তু জয় নয়
১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনও দল ম্যাচে পাঁচজন সেঞ্চুরিয়ান পেয়েও পরাজিত হল। ভারতের পক্ষে প্রথম ইনিংসে শতরান করেন যশস্বী জয়সওয়াল (১০৮), শুভমন গিল (Shubman Gill) (১২৩) ও ঋষভ পন্থ (১১৮)। দ্বিতীয় ইনিংসে আবার সেঞ্চুরি করলেন পন্থ (১০২) ও কে এল রাহুল (১১০)। তবুও ভারত ৫ উইকেটে হেরে বসে রইল। ভারতের এই হার আসলে তাদের ব্যাটিং লাইন-আপের দুটি বড় ধসের ফল। প্রথম ইনিংসে ৪৩০/৩ থেকে ৪৭১ অলআউট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩৩/৪ থেকে ৩৬৪ অলআউট, এই দুটি ধসই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ডাকেটের দুরন্ত ইনিংসেই জয় ইংল্যান্ডের
ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে ওপেনার বেন ডাকেট। প্রথম ইনিংসে করেন ৬২ রান, আর দ্বিতীয় ইনিংসে চাপে পড়া পরিস্থিতিতে খেলেন এক অনবদ্য ১৪৯ রানের ইনিংস, মাত্র ১৭০ বলে। এই ইনিংসেই ম্যাচের ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হন ডাকেট। শুরুতে জ্যাক ক্রলির (৬৫) সঙ্গে ১৮৮ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচের ভিত গড়ে দেন তারা। পরে ডাকেট ফিরে গেলেও, জো রুটের অপরাজিত ফিফটি ও জেমি স্মিথের দারুণ সংযত ব্যাটিংয়ে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
ডাকেট ম্যাচ শেষে জানান, ‘‘এটা ছিল এক অসাধারণ ম্যাচ। ভারত অসাধারণ খেলেছে, কিন্তু শেষ দিনে আমাদের পরিকল্পনা ছিল পরিষ্কার—ব্যাট করে ম্যাচ জেতা। বোলারদেরও কৃতিত্ব দিতে হয়, ভারতীয় টেলকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়া না গেলে ওরা আরও ৫০-৬০ রান যোগ করত। জাডেজার বিপক্ষে রিভার্স সুইপই ছিল আমার ভরসা, কারণ স্ট্রেট ব্যাটে খেলা কঠিন হচ্ছিল।’’
ভারতের হারের কারণগুলো
ভারত এই ম্যাচে দুইবার দারুণ জায়গা থেকে পতনের মুখে পড়েছে। প্রথম ইনিংসে ৪৩০ রানে ৩ উইকেট থেকে মাত্র ৪১ রানেই ৭ উইকেট হারায়। আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩৩ থেকে ৩৬৪। এই দুটি পতনই ম্যাচে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া ইংল্যান্ডের শেষ পাঁচ উইকেট দুই ইনিংসেই প্রায় ২০০ রানের বেশি যোগ করেছে, যেখানে ভারতের টেল কিছুই করতে পারেনি। অধিনায়ক হিসাবে প্রথম ম্যাচেই হার শিকার করতে হল শুভমন গিলকে। যদিও নিজের পারফরম্যান্সে তিনি উজ্জ্বল ছিলেন, কিন্তু অধিনায়কত্বের কৌশলে কোথাও যেন কিছু ঘাটতি থেকেই গেল।
হেডিংলি আবার প্রমাণ করল, এখানে টেস্ট ম্যাচ মানেই নাটকীয়তা, উত্তেজনা ও ইতিহাস। তিনবারের মতো এই মাঠে দেখা গেল ৩৫০ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার নজির। ইংল্যান্ড স্টোকস-ম্যাককালাম যুগে আরও একটি দুর্দান্ত টেস্ট জয় পেল। আর ভারত? দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফরম্যান্স থাকলেও ফিনিশিং লাইন ছুঁতে না পারার কষ্ট নিয়েই দ্বিতীয় টেস্টে নামবে।