জাতীয় স্তরের রেফারিংয়ে বাংলার সাঁওতাল কন্যা রাজশ্রী

ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের এক ছোট্ট গ্রাম (Santali Girl)। এই পটুলিয়া গ্রামের ২৫ বছর বয়সী রাজশ্রী হাঁসদা ভারতের প্রথম সাঁওতাল মহিলা জাতীয় ফুটবল রেফারি হিসেবে ইতিহাস…

Santali Girl new national level referee

ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের এক ছোট্ট গ্রাম (Santali Girl)। এই পটুলিয়া গ্রামের ২৫ বছর বয়সী রাজশ্রী হাঁসদা ভারতের প্রথম সাঁওতাল মহিলা জাতীয় ফুটবল রেফারি হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তাঁর এই অর্জন বাংলার কন্যাদের অদম্য স্পিরিট এবং সাফল্যের নতুন সংজ্ঞা তৈরির প্রতীক হয়ে উঠেছে।

এই ঘটনা বাংলার মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং ভবিষ্যৎ গঠনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।রাজশ্রী হাঁসদা গত বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁর ব্যক্তিগত সমস্যা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং রেফারি হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন থাকলেও, পরিবারের পক্ষ থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

   

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান সচিব মনোজ পন্থকে নির্দেশ দেন রাজশ্রীকে তাঁর ক্যারিয়ারে সহায়তা করার জন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভায় বলেন, “মেয়েদের জ্বলতে দিন। তাদের বিয়েতে বাধ্য করা উচিত নয়।

আজকের মেয়েরা স্বাধীনভাবে পরিবার, এমনকি দেশ পরিচালনা করতে পারে। তারা প্লেন চালায়, ট্রেন চালায়। আমার কন্যাশ্রী কন্যারা পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর হয়েছেন। তারা বিশ্বজুড়ে সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন।”

রাজশ্রী হাঁসদা গোপীবল্লভপুরের পটুলিয়ায় তাঁর বাবা দামা, মা রায়মনি, দুই ভাই এবং এক বোনের সঙ্গে থাকেন। তাঁদের পরিবার কৃষির উপর নির্ভরশীল। রাজশ্রী নয়াগ্রাম থানা গার্লস স্কুল থেকে স্কুল শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে শারীরশিক্ষায় মাস্টার্সের তৃতীয় সেমেস্টারের ছাত্রী।

তিনি স্কুল জীবন থেকেই ফুটবল খেলতেন এবং পরে গোপীবল্লভপুর রেফারি অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নেন, যা অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যৌথ উদ্যোগ। এ বছরের মে মাসে তিনি জাতীয় রেফারি হিসেবে স্বীকৃতি পান এবং ইতিমধ্যে সিনিয়র জাতীয় এবং সাব-জুনিয়র জাতীয় ফুটবল ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজশ্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমার কথা শুনেছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ।”

Advertisements

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তৃতায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “২০১৩ সালে আমরা কন্যাশ্রী প্রকল্প শুরু করি, যা রাষ্ট্রসংঘের পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। এই প্রকল্প মেয়েদের স্কুল ছাড়া এবং অল্প বয়সে বিয়ে রোধ করতে সাহায্য করেছে।

এখন কন্যাশ্রী স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের জন্য প্রসারিত হয়েছে। এছাড়া, উচ্চশিক্ষার জন্য ১০ লক্ষ টাকার স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে।” এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশ্রীর মতো হাজার হাজার মেয়ে তাদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।

রাজশ্রীর এই অর্জন বাংলার মহিলাদের ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনা ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “রাজশ্রী হাঁসদা বাংলার কন্যাদের অদম্য স্পিরিটের প্রতীক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে বাংলার মেয়েরা বাধা ভেঙে এগিয়ে চলেছে।”

ট্রাম্প নিয়ে ‘সনাতনী’দের অবস্থান কী? শুল্ক-শাস্তি নিয়ে খোঁচা বিকাশের

রাজশ্রীর গল্প বাংলার মেয়েদের জন্য একটি প্রেরণা। তাঁর সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক সমর্থন এবং সুযোগ পেলে গ্রামীণ বাংলার মেয়েরাও জাতীয় স্তরে সাফল্য অর্জন করতে পারে। এই ঘটনা বাংলার সমাজে মহিলাদের শিক্ষা এবং স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরে, যা রাজ্যের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।