নেইমারের চোটে ব্রাজিল দলের চিন্তা বাড়ছে

Neymar Ronaldo Nazario

ব্রাজিলের ফুটবল তারকা নেইমার (Neymar) জুনিয়রকে এই মার্চে ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোর জন্য ‘সেলেকাও’ দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা ফরোয়ার্ড গত অক্টোবর ২০২৩ থেকে ব্রাজিলের হলুদ জার্সি পরতে পারেননি। তাঁর প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন এবারও ব্যর্থ হয়েছে একটি নতুন পেশির চোটের কারণে। এই পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের প্রাক্তন কিংবদন্তি স্ট্রাইকার রোনাল্ড নাজারিও নেইমারকে পরামর্শ ও সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০২৬ বিশ্বকাপে নেইমারের জায়গা পেতে হলে তাঁকে নিজের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

Advertisements

Also Read |  বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফুটবলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে ভারত

নেইমার সম্প্রতি সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলাল ছেড়ে তাঁর শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরে এসেছেন। কিন্তু সেখানেও তাঁর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। মার্চের শুরুতে ব্রাগান্তিনোর বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে তিনি পেশির চোটে পড়েন। এই চোটের কারণে তিনি কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে খেলতে পারেননি এবং আসন্ন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচেও তাঁর অংশগ্রহণ নিশ্চিত নয়। গত বছর অক্টোবরে উরুগুয়ের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের একটি ম্যাচে তিনি এসিএল (অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট) চোটে পড়েছিলেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়। এরপর থেকে তিনি একের পর এক চোটের সম্মুখীন হচ্ছেন।

ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার রোনাল্ড নাজারিও সম্প্রতি ‘চার্লা পডকাস্ট’-এ ‘এ বোলা’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেইমার সম্পর্কে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, নেইমার পরবর্তী বিশ্বকাপে থাকবে। তার অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে। কিন্তু তাকে নিজের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এটা শুধু তার ওপরই নির্ভর করছে।” তিনি আরও বলেন, “এই ত্যাগের মূল্য আছে। বিশ্বকাপ আর এক বছর দূরে। যদি সে ভালো স্তরে পৌঁছতে পারে, তাহলে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে তাকে খাওয়া, ট্রেনিং এবং ঘুমের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।”

রোনাল্ডর এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি নেইমারের প্রতিভার ওপর ভরসা রাখেন। কিন্তু তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ফিটনেস এবং শৃঙ্খলা ছাড়া ২০২৬ সালে উত্তর আমেরিকায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে খেলা নেইমারের জন্য কঠিন হবে।

নেইমারের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ব্রাজিল দল কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এই জয় তাদের ২০২৬ বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করেছে। বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্বে ব্রাজিল পঞ্চম স্থানে রয়েছে। শীর্ষ ছয়টি দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। তবে নেইমারের মতো একজন অভিজ্ঞ ও গোলস্কোরারের অনুপস্থিতি দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ১২৮টি ম্যাচে ৭৯টি গোল করে তিনি ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

Advertisements

আল-হিলালে সংক্ষিপ্ত সময় কাটানোর পর নেইমার এই বছরের শুরুতে সান্তোসে ফিরে আসেন। সৌদি ক্লাবে তাঁর সময় চোট ও ফিটনেস সমস্যায় ভরা ছিল। সেখানে তিনি মাত্র কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন। সান্তোসে ফer ফিরে এসে তিনি ফর্ম ও ফিটনেস ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। আগামী গ্রীষ্ম পর্যন্ত তিনি ব্রাজিলের এই ক্লাবের হয়ে খেলবেন। তবে তাঁর মনে ইউরোপে ফেরার চিন্তা ঘুরছে। গুঞ্জন রয়েছে যে, তিনি বার্সেলোনায় ফিরে একটি চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন করতে পারেন।

নেইমারের ক্যারিয়ারে বার্সেলোনার একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তিনি সেখানে খেলেছেন এবং লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে একটি অসাধারণ ত্রয়ী গড়ে তুলেছিলেন। গুঞ্জন অনুসারে, তিনি ২০২৬ বিশ্বকাপের আগে ইউরোপে ফিরতে চান। বার্সেলোনায় ফিরে তিনি আবারও পুরনো ফর্মে ফিরতে পারেন বলে অনেকে মনে করেন। তবে এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে তাঁর ফিটনেস ও পারফরম্যান্সের ওপর।

বাঙালি ফুটবলপ্রেমীরা নেইমারের খেলার ভক্ত। তাঁর চোটের খবরে তারা উদ্বিগ্ন হলেও, রোনাল্ডর আশার বাণী তাদের উৎসাহিত করেছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বলেছেন, “নেইমারকে বিশ্বকাপে দেখতে চাই। তাকে ফিরতে হবে।” ব্রাজিলের সমর্থকরা আশা করছেন, তিনি ফিট হয়ে দলকে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেবেন।

নেইমারের জন্য ২০২৬ বিশ্বকাপ তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ বড় সুযোগ হতে পারে। রোনাল্ডর পরামর্শ অনুসারে তাকে নিজের জীবনধারায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। সান্তোসে তিনি ফিটনেস ফিরে পেলে ইউরোপে ফিরে বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন। ব্রাজিলের ভক্তরা অপেক্ষায় আছেন তাঁর সেই প্রত্যাবর্তনের জন্য, যা তাদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।