স্পেনের লা লিগার (La Liga) শীর্ষস্থানীয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ (Real Madrid) শনিবার ওসাসুনার (CA Osasuna) বিরুদ্ধে ১-১ গোলের ড্র করেছে। এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের তারকা মিডফিল্ডার জুড বেলিংহামকে রেফারি লাল কার্ড দেখান, যার ফলে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য ম্যাচটি কঠিন হয়ে ওঠে। ম্যাচের শুরুতেই কিলিয়ান এমবাপে রিয়ালকে এগিয়ে নিলেও, পরবর্তীতে বেলিংহামের বিতর্কিত লাল কার্ডের কারণে মাদ্রিদের লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর আনতে বুডিমিরের পেনাল্টি গোলের মাধ্যমে ওসাসুনা ম্যাচটি সমতায় আনে।
এই ড্রটি রিয়াল মাদ্রিদকে তৃতীয় লা লিগা ম্যাচে অজিত রাখলো, যা তাদের শীর্ষ স্থানটি ধরে রাখার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। লা লিগার শীর্ষস্থানীয় দল হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদ এখনো নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে, তবে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ তাদের এক পয়েন্টের মধ্যে চলে এসেছে এবং বার্সেলোনা আরও একটি ম্যাচ হাতে রেখেছে।
ম্যাচের প্রথমার্ধ: এমবাপের গোল, বেলিংহামের রেড কার্ড
ম্যাচের প্রথমার্ধে রিয়াল মাদ্রিদ ছিল আক্রমণাত্মক এবং বলের দখলে ছিল। শুরু থেকেই রিয়াল মাদ্রিদ দ্রুত গতিতে বল ঘোরাতে থাকে, যা ওসাসুনাকে সঠিকভাবে মাঠে ফিরতে দেয়নি। এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে রিয়াল, কিন্তু রিয়ালের উইঙ্গার ভিনিসিয়াস জুনিয়র একটি গোল মিস করেন। তিনি কিলিয়ান এমবাপের একটি ক্রস থেকে দুর্দান্ত একটি গোল করার সুযোগ পান, কিন্তু বলটি হেড করে খোয়ান।
এরপর, ফেদে ভালভার্দে একটি দুর্দান্ত লো ক্রস দেন এমবাপের জন্য, যিনি সহজেই গোল করেন। এমবাপের গোলটি ছিল তার লা লিগার পঞ্চম ম্যাচে সপ্তম গোল। এমবাপের ধারাবাহিক ফর্ম রিয়াল মাদ্রিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে প্রথমার্ধের শেষের দিকে একটি বিতর্কিত মুহূর্ত ঘটে, যখন বেলিংহাম রেফারি জোসে মুনুয়েরার সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। রেফারি সোজা লাল কার্ড দেখান বেলিংহামকে, যা রিয়াল মাদ্রিদের জন্য বড় একটি ধাক্কা ছিল। অনেকেই মনে করছেন, এটি একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল, কারণ বেলিংহামের প্রতিক্রিয়া এতটা গুরুতর ছিল না। তবে, রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলোত্তি এই রেফারি সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং ম্যাচ পরবর্তী মন্তব্যে তিনি স্প্যানিশ রেফারির ওপর সমালোচনা করেন।
দ্বিতীয়ার্ধ: ওসাসুনার সমতায় ফিরে আসা, রিয়ালের সংগ্রাম
দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের ১০ জনের স্কোয়াড নিয়ে ম্যাচটি চালিয়ে যেতে থাকে। তারা জানত যে, এভাবে চলতে থাকলে তাদের লা লিগা শীর্ষ স্থান হারাতে হতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮ মিনিটে, ওসাসুনা পেনাল্টির মাধ্যমে সমতা আনে। এডুয়ার্ডো কামাভিংগা ওসাসুনার ফরোয়ার্ড আনতে বুডিমিরকে ফাউল করেন, এবং রেফারি পেনাল্টি দেন। বুডিমির পেনাল্টি থেকে গোল করে ১-১ সমতা এনে দেন। বুডিমির এই গোলটি ছিল তার এই মরসুমে ১৩ তম গোল।
রিয়াল মাদ্রিদ পরে বেশ কয়েকটি আক্রমণ তৈরি করলেও, এমবাপে এবং ভিনিসিয়াস ভালো সুযোগ তৈরি করেও গোল করতে পারেননি। এমবাপে একটি শট নিয়েছিলেন যা খুব কাছ থেকে সোজা পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। ভিনিসিয়াসও একটি শট নিয়েছিলেন, কিন্তু সেটি প্রতিরোধ করা হয়। রিয়াল মাদ্রিদ জানত যে, তারা যদি জিততে না পারে, তবে এটি তাদের জন্য বড় একটি হতাশা হতে পারে, কারণ তাদের শীর্ষস্থান ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রিয়ালের জন্য অশনি সংকেত: ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচের আগে উদ্বেগ
এখন, রিয়াল মাদ্রিদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। আগামী বুধবার, তারা সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যানচেস্টার সিটির সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় লেগ খেলবে। রিয়াল মাদ্রিদ গত কয়েকটি ম্যাচে তাদের ধারাবাহিকতা হারিয়েছে, বিশেষ করে ওসাসুনার বিরুদ্ধে ১০ জন নিয়ে খেলার পর। এই মুহূর্তে ম্যানচেস্টার সিটি তাদের দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে এবং রিয়াল মাদ্রিদকে তাদের মাঠে হারাতে চাবে।
অতএব, রিয়াল মাদ্রিদ যদি চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য প্রস্তুতি নিতে চায়, তবে তাদের খেলা আরও ধারাবাহিক করতে হবে। তাদের এককভাবে এমবাপের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে এবং দলের অন্যান্য খেলোয়াড়দের আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
এটা স্পষ্ট যে, রিয়াল মাদ্রিদ এখন একদিকে যেমন লা লিগা শীর্ষে আছে, তেমনি তাদের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। একটি লাল কার্ড, বিতর্কিত রেফারির সিদ্ধান্ত এবং একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সাথে খেলা এই দলের সামনে কঠিন সময় তৈরি করতে পারে। তবে, আনচেলোত্তির কোচিং এবং এমবাপের অনবদ্য ফর্ম যদি ঠিকভাবে কাজ করে, তাহলে রিয়াল মাদ্রিদ আবারও তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।