রিয়েল কাশ্মীর শনিবার, হিলপুর ফুটবল স্টেডিয়ামে দিল্লি এফসি’কে ২-১ গোলে পরাজিত করে তাদের ২০২৪-২৫ আই-লিগ (I-League 2024-25) থেকে রেলিগেশন নিশ্চিত করেছে। এই হারের ফলে দিল্লি এফসি’র টিকে থাকার কোনো গাণিতিক সম্ভাবনা আর অবশিষ্ট নেই। প্রথমার্ধে রিয়েল কাশ্মীর ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল।
এই জয়ের ফলে রিয়েল কাশ্মীর ২০টি ম্যাচ থেকে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষ থেকে মাত্র ২ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে। তাদের দুটি ম্যাচ বাকি থাকলেও তারা একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে। অন্যদিকে, দিল্লি এফসি এই পরাজয়ের পর রেলিগেশন জোনে চলে গেছে।
মোহাম্মদ ইনাম (৪’) এবং গ্নোহেরে ক্রিজো (২৬’) প্রথমার্ধে রিয়েল কাশ্মীরের হয়ে গোল করেন। দিল্লি এফসি’র হৃদয় জৈন (৫৫’ পেনাল্টি) দ্বিতীয়ার্ধে একটি গোল ফিরিয়ে দেন।
ম্যাচের শুরু থেকেই রিয়েল কাশ্মীর আক্রমণাত্মক ছিল। মাত্র ৪ মিনিটের মাথায় তারা গোল করে এগিয়ে যায়। বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে মোহাম্মদ ইনাম লাইন বরাবর এগিয়ে গিয়ে ছয় গজের এলাকায় একটি শক্তিশালী নিচু ক্রস দেন। গ্নোহেরে ক্রিজোর চাপে দিল্লির ডিফেন্ডাররা বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে গোলরক্ষক দেবনাথ মণ্ডল বল ফসকান, এবং ইনাম তার ক্রসের পিছনে থেকে এসে আলগা বলটি জালে জড়িয়ে দেন।
রিয়েল কাশ্মীরের চাপ অব্যাহত থাকে এবং দিল্লির রক্ষণভাগের ভুল অব্যাহত থাকে। ২৬তম মিনিটে ক্রিজো আরেকটি ভুলের সুযোগ নেন। ক্রিজোর দিকে আসা একটি লম্বা বল মোকাবিলা করতে গোলরক্ষক মণ্ডল তার বক্সের বাইরে এসে বলটি হেড করার চেষ্টা করেন। তিনি বলের বাউন্স ভুলভাবে বিচার করেন, এবং ক্রিজো খালি জালে বলটি ট্যাপ করে স্কোর ২-০ করেন।
দিল্লির ভুলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৪০তম মিনিটে মণ্ডল একটি সাধারণ ক্রস ফসকান, এবং ক্রিজোর সামনে বল চলে আসে। আইভরিয়ান এই ফরোয়ার্ড প্রথম শটে খালি গোলে নিশানা করেন, কিন্তু ডিফেন্সে ফিরে আসা জোসেফ লালমুয়ানাওমা পা দিয়ে বলটি বাইরে ঠেলে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধে দিল্লি এফসি’র খেলার মান উন্নত হয়। প্রথম ১৫ মিনিটে তারা রিয়েল কাশ্মীরের লিড কমানোর হুমকি দেয়। সামির বিনং বিশেষভাবে গোলরক্ষক ফুরকান আহমদ দারকে বারবার পরীক্ষা করেন এবং কয়েকটি দারুণ সেভ আদায় করেন। ৫৪তম মিনিটে বিনং বক্সের মধ্যে ঘুরে-ফিরে ফাউলের শিকার হন, এবং রেফারি পেনাল্টি দেন।
হৃদয় জৈন পেনাল্টি থেকে দারুণভাবে গোল করে ব্যবধান অর্ধেক করে ফেলেন। দিল্লি চাপ অব্যাহত রাখে, কারণ তাদের টিকে থাকার জন্য অন্তত একটি পয়েন্ট প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রথমার্ধের দুটি ভুল শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। রিয়েল কাশ্মীর শেষ পর্যন্ত তিন পয়েন্ট নিয়ে দিল্লিকে রেলিগেশনে ঠেলে দেয়।
এই হার দিল্লি এফসি’র জন্য আই-লিগে টিকে থাকার শেষ আশা নিভিয়ে দিয়েছে। তাদের পয়েন্ট এবং বাকি ম্যাচের গাণিতিক হিসেবে তারা আর নিরাপদ অঞ্চলে পৌঁছাতে পারবে না। অন্যদিকে, রিয়েল কাশ্মীরের জন্য এই জয় শিরোপার দৌড়ে তাদের শক্ত অবস্থানে রেখেছে। ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে তারা শীর্ষ থেকে মাত্র ২ পয়েন্ট পিছিয়ে, এবং বাকি দুটি ম্যাচে জয় তাদের চ্যাম্পিয়নশিপের দাবিদার করে তুলতে পারে।
রিয়েল কাশ্মীরের মোহাম্মদ ইনাম এবং গ্নোহেরে ক্রিজো প্রথমার্ধে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন। ইনামের গতি এবং ক্রিজোর সুযোগ গ্রহণের ক্ষমতা দিল্লির রক্ষণকে ভেঙে দেয়। দিল্লির হৃদয় জৈন পেনাল্টি থেকে গোল করে দলের লড়াইয়ের মনোভাব দেখান। তবে গোলরক্ষক দেবনাথ মণ্ডলের দুটি বড় ভুল ম্যাচের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ম্যাচ শেষে রিয়েল কাশ্মীরের কোচ বলেন, “আমরা শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলাম এবং প্রথমার্ধে জয় নিশ্চিত করেছি। শিরোপার জন্য আমাদের শেষ দুটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ।” দিল্লি এফসি’র কোচ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “প্রথমার্ধের ভুল আমাদের জন্য মারাত্মক হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না।”
দিল্লি এফসি’র এই মরশুমে ধারাবাহিকতার অভাব এবং রক্ষণাত্মক ভুল তাদের রেলিগেশনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। গোলরক্ষক এবং ডিফেন্ডারদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি এই ম্যাচে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও প্রথমার্ধের ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
রিয়েল কাশ্মীরের জন্য এই জয় তাদের শিরোপা জয়ের স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছে। ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে তারা শীর্ষ দলগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রয়েছে। বাকি দুটি ম্যাচে জয় পেলে তারা শীর্ষে পৌঁছাতে পারে, বিশেষ করে যদি শীর্ষস্থানীয় দলগুলির পয়েন্ট হারায়। তাদের আক্রমণাত্মক খেলা এবং সুযোগ গ্রহণের ক্ষমতা তাদের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে।
দিল্লি এফসি’র রেলিগেশন তাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। পরবর্তী মরশুমে তাদের দ্বিতীয় বিভাগে ফিরে আসতে হবে এবং দল গঠনে নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। রিয়েল কাশ্মীরের জন্য এই জয় শিরোপার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আই-লিগের এই মরশুম শেষ পর্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ থাকবে, এবং রিয়েল কাশ্মীরের শেষ দুটি ম্যাচ সবার নজরে থাকবে।
রিয়েল কাশ্মীর বনাম দিল্লি এফসি ম্যাচটি ছিল দুই দলের ভাগ্য নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। রিয়েল কাশ্মীরের প্রথমার্ধের আধিপত্য এবং দিল্লির দ্বিতীয়ার্ধের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ফলাফল দিল্লির জন্য মর্মান্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই হার দিল্লির আই-লিগ যাত্রার অবসান ঘটালেও রিয়েল কাশ্মীরের শিরোপার স্বপ্নকে নতুন উদ্যম দিয়েছে। মাহিলপুরের এই ম্যাচ ফুটবলপ্রেমীদের মনে দীর্ঘদিন থেকে যাবে।