৪ জুন, ২০২৫ দিনটা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) ইতিহাসে যেমন গৌরবের, তেমনি ভারতীয় ক্রীড়া ইতিহাসে এক মর্মান্তিক অধ্যায় হয়ে থাকল। বহু প্রতীক্ষিত আইপিএল খেতাব জয়ের উদযাপন (IPL Title Celebrations) করতে গিয়ে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্টর ঘটনায় প্রাণ হারান ১১ জন সমর্থক। আহত হয়েছিলেন বহু মানুষ। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার জেরে দেশের ক্রীড়ামোদী মহলে নেমে আসে শোকের ছায়া।
বেঙ্গালুরুর প্রথমবারের মতো আইপিএল জয় ছিল দলের ভক্তদের কাছে এক আবেগঘন মুহূর্ত। খেতাব জয়ের ঠিক পরদিন, চিন্নাস্বামীতে আয়োজিত হয় এক উদযাপন অনুষ্ঠান। যদিও বেঙ্গালুরু ট্র্যাফিক পুলিশ স্পষ্টভাবে এই জয় উদযাপনের অনুমতি দেয়নি, তবুও দলের তরফে প্রথমে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে তা বাতিল করে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে সেই খবর পৌঁছায়নি অনেক ভক্তের কাছে। ফলে ভিড় জমে যায় স্টেডিয়ামের বাইরে, যা পরিণত হয় এক বিশৃঙ্খল ও মর্মান্তিক ঘটনায়।
এই ঘটনার দায়ভার নিয়ে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে—এই উদযাপন কি শুধু আবেগের বশে আয়োজিত হয়েছিল? প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়াই কি এত বড় ইভেন্ট ঘোষণা করা হয়েছিল? ভিড় নিয়ন্ত্রণে কি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল? এই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই বিসিসিআই গঠন করেছে তিন সদস্যের এক তদন্ত কমিটি। বোর্ডের সচিব দেবজিত সাইকিয়ার নেতৃত্বে থাকা এই কমিটিতে আছেন সহ-সভাপতি রাজীব শুক্ল এবং কোষাধ্যক্ষ প্রভজিৎ সিং ভাটিয়া।
তবে শুধু তদন্তেই থেমে থাকেনি বোর্ড। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিসিসিআই (BCCI) চালু করেছে একগুচ্ছ নতুন নিয়ম-কানুন, যা সমস্ত আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য বাধ্যতামূলক:
১. উদযাপনের আগে প্রস্তুতির সময়: কোনো দল খেতাব জয়ের পর ৩-৪ দিনের মধ্যে কোনোরকম পাবলিক উদযাপন করতে পারবে না। এই সময়ের ব্যবধানে স্থানীয় প্রশাসন, নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
২. বিসিসিআইয়ের অনুমতি আবশ্যিক: যেকোনো উদযাপন, প্যারেড বা স্টেডিয়াম ইভেন্ট আয়োজন করতে হলে, দলগুলোকে বিসিসিআইয়ের লিখিত অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া কোনো পাবলিক ইভেন্ট করা যাবে না।
৩. স্তরভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা: ইভেন্ট চলাকালীন নিরাপত্তা থাকবে ৪-৫ স্তরের। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে ইভেন্ট ভেন্যু পর্যন্ত খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. স্থানীয় প্রশাসনের লিখিত অনুমতি: জেলা পুলিশ, রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় পুর প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত ছাড়পত্র ছাড়া কোনো পাবলিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। এতে প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতা নিশ্চিত হবে।
বিসিসিআইয়ের এই পদক্ষেপ তাই শুধু নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া নয়, বরং দায়িত্বশীলতা বজায় রাখার প্রয়াস। উদযাপন হোক, তাতে বাধা নেই—কিন্তু তা যেন আর কারও জীবনের বিনিময়ে না হয়। খেলার জয়গান গাওয়া হোক প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে—এটাই এখন সময়ের দাবি।
BCCI Rolls Out Strict Guidelines For IPL Title Celebrations
