আরসিবি তারকার বিরুদ্ধে নাবালিকার উপর যৌ*ন নির্যাতনের অভিযোগ

ভারতীয় ক্রিকেটার এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)-র ফাস্ট বোলার যশ দয়াল (Yash Dayal) গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। জয়পুরের সাঙ্গানের সদর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর…

RCB Cricketer Yash Dayal Faces Second Rape Case Under POCSO Act in Jaipur

ভারতীয় ক্রিকেটার এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)-র ফাস্ট বোলার যশ দয়াল (Yash Dayal) গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। জয়পুরের সাঙ্গানের সদর থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে তিনি একজন নাবালিকাকে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই বছর ধরে যৌন নির্যাতন করেছেন। এনডিটিভি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, যশ দয়াল কথিতভাবে ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে এবং ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল জয়পুরের সীতাপুরার একটি হোটেলে, যখন ভুক্তভোগীর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। এই কারণে মামলাটি প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস (পকসো) অ্যাক্টের অধীনে দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনা আরসিবি’র আইপিএল ২০২৫ জয়ের পর ক্রিকেটারের জন্য নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে।

এই অভিযোগের আগে, গত জুলাইয়ের শুরুতে গাজিয়াবাদে যশ দয়ালের বিরুদ্ধে আরেকটি যৌন নির্যাতনের মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলায় একজন মহিলা অভিযোগ করেছিলেন যে যশ তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঁচ বছর ধরে মানসিক, শারীরিক এবং আর্থিকভাবে শোষণ করেছেন। গাজিয়াবাদের ইন্দিরাপুরম থানায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৬৯ ধারার অধীনে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল, যা প্রতারণামূলক উপায়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। যশ দয়াল এই মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন, এবং বিচারপতি সিদ্ধার্থ বর্মা এবং অনিল কুমারের বেঞ্চ তাঁর গ্রেপ্তারির উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। আদালত মন্তব্য করেছিলেন যে কাউকে পাঁচ বছর ধরে প্রতারিত করা সম্ভব নয়, এবং রাজ্যের কৌঁসুলিকে এই বিষয়ে জবাব দাখিল করতে বলা হয়েছিল।

   

জয়পুরের সাঙ্গানের সদর থানার এসএইচও অনিল জয়মান জানিয়েছেন, ভুক্তভোগী ক্রিকেট খেলার সময় যশ দয়ালের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। প্রায় দুই বছর আগে, যখন তিনি নাবালিকা ছিলেন, তখন যশ তাঁকে ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন নির্যাতন করেন। এই অভিযোগ অনুযায়ী, আইপিএল ২০২৫-এর সময় যশ জয়পুরে এসে ভুক্তভোগীকে সীতাপুরার একটি হোটেলে ডেকে আবারও নির্যাতন করেন। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ এবং শোষণের শিকার হওয়ার পর, ভুক্তভোগী গত ২৩ জুলাই এফআইআর দায়ের করেন। পকসো অ্যাক্টের অধীনে মামলা দায়ের হওয়ায়, যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে যশ দয়ালের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি হতে পারে, যার মধ্যে ন্যূনতম ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে।

২৭ বছর বয়সী যশ দয়াল আইপিএল ২০২৫-এ আরসিবি’র হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ১৫টি ম্যাচে ১৩টি উইকেট নিয়ে দলের প্রথম আইপিএল শিরোপা জয়ে অবদান রেখেছিলেন। এর আগে, ২০২২ সালে গুজরাট টাইটান্সের হয়ে আইপিএল অভিষেক করেন এবং ২০২৪ সালে আরসিবি’র হয়ে খেলেন, যেখানে তিনি এমএস ধোনির উইকেট নিয়ে দলকে প্লে-অফে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন। তবে, তাঁর ক্রিকেটীয় সাফল্য এখন এই গুরুতর অভিযোগের ছায়ায় ম্লান হয়ে গেছে।

গাজিয়াবাদের মামলায়, ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি যশ দয়ালের সঙ্গে পাঁচ বছরের সম্পর্কে ছিলেন এবং তিনি তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তিনি আরও দাবি করেছেন যে যশ তাঁকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে তাঁদের পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে, যখন তিনি বিয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তখন যশ কথিতভাবে সহিংস হয়ে ওঠেন এবং তাঁকে হয়রানি করেন। ভুক্তভোগী আরও জানিয়েছেন যে তিনি যশের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়েছিলেন, তবে যশ তাঁর বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ করেছেন যে তিনি তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছেন। যশ প্রয়াগরাজের একটি থানায় তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন যে ভুক্তভোগী তাঁর কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছেন এবং ফেরত দেননি। এলাহাবাদ হাইকোর্ট এই মামলায় তাঁর গ্রেপ্তারির উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

Advertisements

জয়পুরের নতুন মামলাটি যশ দয়ালের আইনি সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। পকসো অ্যাক্টের অধীনে মামলা হওয়ায় এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং গুরুতর। পকসো অ্যাক্টে নাবালিকাদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে, এবং এই ধরনের মামলায় দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। যদি যশ দয়াল দোষী প্রমাণিত হন, তবে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এবং তিনি দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন।

এই ঘটনা ক্রিকেট জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আরসিবি’র ভক্তরা, যাঁরা এই বছর দলের প্রথম আইপিএল শিরোপা জয়ের উৎসবে মেতেছিলেন, তাঁরা এই অভিযোগে হতাশ এবং মর্মাহত। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন যে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক নয়।

পুলিশ এই মামলার তদন্ত শুরু করেছে, এবং জয়পুরের সাঙ্গানের সদর থানার এসএইচও অনিল জয়মান জানিয়েছেন যে তদন্ত পুরোপুরি নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হবে। ভুক্তভোগীর অভিযোগের সমর্থনে কিছু প্রমাণ, যেমন চ্যাট রেকর্ড এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্রমাণ, পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যশ দয়াল এখনও এই নতুন অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

এই ঘটনা ক্রিকেট সম্প্রদায় এবং সমাজের বিস্তৃত অংশের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবের সঠিক ব্যবহার করা উচিত, এবং এই ধরনের অভিযোগ তরুণ প্রজন্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তদন্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করে এই মামলার পরিণতি যশ দয়ালের ক্যারিয়ার এবং আরসিবি’র জন্য বড় প্রভাব ফেলতে পারে।