ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অফ-স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin) সম্প্রতি তরুণ ফাস্ট বোলার অনশুল কাম্বোজের (Anshul Kamboj) প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। তিনি মনে করেন, ২৪ বছর বয়সী এই নবাগত পেসার জহির খান এবং জসপ্রিত বুমরাহর মতো বিরল প্রজাতির ফাস্ট বোলারদের দলে রয়েছেন, যারা কেবল দক্ষতার জন্যই নয়, বরং খেলার পরিকল্পনা বোঝার এবং তা কার্যকর করার ক্ষমতার জন্যও আলাদা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টের জন্য ভারতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন কাম্বোজ, যিনি অলরাউন্ডার নীতিশ কুমার রেড্ডি এবং পেসার জুটি আকাশ দীপ ও আরশদীপ সিংয়ের ইনজুরির কারণে দলে সুযোগ পেয়েছেন। ম্যানচেস্টারে শুরু হতে যাওয়া এই টেস্ট ম্যাচে তিনি সম্ভবত অভিষেক করতে পারেন।
অশ্বিন তার ইউটিউব চ্যানেল ‘আশ কি বাত’-এ বলেন, “অনশুলের সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক হলো তিনি খেলার পরিকল্পনা বোঝেন। আমি অনেক ফাস্ট বোলার দেখেছি, যারা পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে বলে তারা কেবল নিজেকে প্রকাশ করতে চায় এবং খেলা উপভোগ করতে চায়। কিন্তু অনশুল পরিকল্পনা বোঝেন এবং মাঠের মাঝখানে তা কার্যকর করতে জানেন। এটি এমন একটি গুণ যা খুব কম ফাস্ট বোলারের মধ্যে দেখা যায়। জহির খান ছিলেন এমন একজন, তিনি ছিলেন অসাধারণ। সাম্প্রতিক সময়ে জসপ্রিত বুমরাহ এমন একজন খেলোয়াড়, যিনি পরিকল্পনা বোঝেন এবং তা নিখুঁতভাবে কার্যকর করেন। অনশুলও সেই শ্রেণির। আমি এখানে দক্ষতার তুলনা করছি না, কারণ দক্ষতা একটি ভিন্ন বিষয়।”
অনশুল কাম্বোজ অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির প্রস্তুতি হিসেবে ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে ইন্ডিয়া এ দলের হয়ে খেলে দারুণ ছাপ ফেলেছেন। নর্থাম্পটন এবং ক্যান্টারবেরিতে চার ইনিংসে তিনি পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন, যেখানে তার দেরিতে বলের মুভমেন্ট এবং বাউন্স সবার নজর কেড়েছে। অশ্বিন বলেন, “তার বলের লেন্থ খুবই ভালো। আমি এটি আইপিএলেও দেখেছি। তার রিস্ট পজিশন অসাধারণ, এবং তিনি সবসময় খাড়া সিমে বল করেন। তিনি কখনোই তার লেন্থ থেকে সরে যান না।”
অশ্বিন আরও বলেন, “বুমরাহ এবং সিরাজের সঙ্গে যদি আপনি অনশুল কাম্বোজকে প্লেয়িং ইলেভেনে নিয়ে আসেন, আমি বলছি, এটি একটি গুরুতর বোলিং আক্রমণ হবে।” তিনি কাম্বোজের দেশীয় ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরম্যান্সের কথাও উল্লেখ করেন। গত বছর কেরালার বিপক্ষে রঞ্জি ট্রফিতে লাহলিতে তিনি এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন। তিনি বলেন, “লোকে বলবে অনশুল তার প্রথম টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন। তিনি ইংল্যান্ডে খেলেননি, কিন্তু তিনি ইন্ডিয়া এ দলের সঙ্গে এখানে ছিলেন। তিনি ফার্স্ট-ক্লাস ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। তার গড় প্রায় ১৩। তিনি এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছেন।”
কাম্বোজের আরেকটি বড় গুণ হলো দীর্ঘ স্পেল বোলিং করার ক্ষমতা, যা ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অশ্বিন বলেন, “অনশুলের দীর্ঘ স্পেল বোলিং করার অভ্যাস রয়েছে। ইংল্যান্ডে এটি খুবই প্রয়োজন। তিনি বুমরাহ এবং সিরাজের জন্য একটি ভালো সঙ্গী হবেন। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ একটি বিকল্প, কিন্তু আমি অনশুলের সঙ্গে যাব। আমরা তার প্রতি মুগ্ধ। তার রিস্ট সত্যিই ভালো।” তবে, অশ্বিন সতর্ক করে বলেন, যদি কাম্বোজ তার অভিষেক ম্যাচ খেলেন, তবে টিম ম্যানেজমেন্টকে তার স্নায়ু শান্ত রাখার জন্য বিশেষভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, “ম্যানেজমেন্টকে একটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে, তা হলো অনশুলের স্নায়ু শান্ত রাখা।”
কাম্বোজের দেশীয় ক্রিকেটে পারফরম্যান্স তাকে এই সুযোগের জন্য প্রস্তুত করেছে। ২৪টি ফার্স্ট-ক্লাস ম্যাচে তিনি ৭৯টি উইকেট নিয়েছেন, গড় ২২.৮৮, এবং দুটি পাঁচ উইকেটের হল রয়েছে। ২০২৪-২৫ রঞ্জি ট্রফিতে তিনি এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন, যা রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে। তিনি ইন্ডিয়া এ দলের হয়ে ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন, যেখানে তার বলের দেরিতে মুভমেন্ট এবং বাউন্স সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
আইপিএল ২০২৫-এ চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলার সময় অশ্বিন কাম্বোজের বোলিংয়ের কারিশমা নিজ চোখে দেখেছেন। তিনি বলেন, “আমি চেন্নাই সুপার কিংসে তার সঙ্গে কাজ করেছি। তার পরিকল্পনা বোঝার এবং কার্যকর করার ক্ষমতা তাকে বুমরাহ এবং জহিরের মতো বোলারদের কাতারে নিয়ে যায়।”
ভারত বর্তমানে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ১-২ ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে। ম্যানচেস্টারে চতুর্থ টেস্ট, যা বুধবার শুরু হবে, ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাম্বোজের সম্ভাব্য অভিষেক এবং তার দীর্ঘ স্পেল বোলিংয়ের ক্ষমতা ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। অশ্বিনের মতে, কাম্বোজ, বুমরাহ এবং সিরাজের সঙ্গে মিলে একটি “গুরুতর বোলিং আক্রমণ” গঠন করতে পারেন, যা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, কাম্বোজ তার সম্ভাব্য অভিষেকে কীভাবে পারফর্ম করেন। তার ফার্স্ট-ক্লাস ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা এবং অশ্বিনের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সমর্থন তাকে টেস্ট ক্রিকেটে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।