আফগানিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক এবং গুজরাট টাইটান্সের খেলোয়াড় রশিদ খান (Rashid Khan) ৪ ডিসেম্বর, বুধবার টুইটার প্ল্যাটফর্মে আফগান সরকারের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবেদন করেছেন। তিনি আফগানিস্তানের তালিবান শাসিত সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা দেশের মেয়েদের জন্য মেডিকেল শিক্ষা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা পুনরায় পর্যালোচনা করে। তিনি আফগান মেয়েদের তাদের শিক্ষা অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য এবং দেশের উন্নয়নে তাদের অবদান রাখতে সাহায্য করতে চান।
রশিদ খান তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন যে, ‘‘আমি আন্তরিকভাবে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আহ্বান জানাই যাতে আফগান মেয়েরা তাদের শিক্ষা অধিকার পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। সবার জন্য শিক্ষা প্রদান একটি সামাজিক দায়িত্ব এবং এটি আমাদের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত একটি নৈতিক কর্তব্য।’’
ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষার গুরুত্ব
রশিদ খান তার পোস্টে শিক্ষার গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছেন, বিশেষত ইসলামিক শিক্ষার প্রেক্ষাপটে। তিনি বলেন, ‘‘ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষা একটি কেন্দ্রীয় স্থান অধিকার করে, যেখানে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্যই জ্ঞানের অনুসন্ধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোরআনে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে এবং দুই লিঙ্গেরই সমান আধ্যাত্মিক মূল্য রয়েছে,’’ বলেন রশিদ।
এছাড়াও, তিনি আফগানিস্তানে মহিলাদের জন্য শিক্ষা ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ‘‘আফগানিস্তানের আমাদের বোনেরা ও মায়েরা যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের দুঃখ ও কষ্ট ব্যক্ত করেছেন তা আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে, তাদের ভবিষ্যতকে নির্ধারণ করে দিয়েছে,’’ বলছিলেন রশিদ খান।
আফগানিস্তানের সংকটময় সময়
রশিদ খান আরও বলেন, ‘‘আফগানিস্তান, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, একটি সংকটময় মুহূর্তে রয়েছে। দেশটি প্রতিটি ক্ষেত্রেই পেশাদারদের প্রয়োজন, বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। মহিলাদের জন্য ডাক্তার ও নার্সের গভীর ঘাটতি রয়েছে, যা নারীদের স্বাস্থ্যসেবা এবং মর্যাদাকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। আমাদের বোনেরা এবং মায়েরা এমন চিকিৎসকদের কাছ থেকে সেবা পাওয়ার অধিকারী, যারা তাদের চাহিদাগুলি বুঝতে সক্ষম,’’ বলছিলেন তিনি।
মহিলাদের জন্য শিক্ষা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আফগান সমাজের জন্য একটি বিপদজনক পথ হতে পারে, যেখানে নারী জনগণের উন্নতি, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক অবস্থান রক্ষার জন্য শক্তিশালী পেশাদার দক্ষতার প্রয়োজন। আফগানিস্তানে নারীদের জন্য বিশেষত চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের ভবিষ্যত উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।
রশিদ খানের উদাত্ত আহ্বান
রশিদ খান তার পোস্টে আরও বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশের নারীরা যেভাবে তাদের ভবিষ্যতকে নিরাপদ করতে চায়, সেভাবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের তরুণীরা দেশটির সকল ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতে সক্ষম, বিশেষ করে তাদের যদি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তারা সমাজের মূল ভিত্তি হিসেবে দাঁড়াবে।’’
এই প্রসঙ্গে, আফগানিস্তানে তালিবান সরকারের অধীনে মহিলাদের জন্য শিক্ষা ও চাকরি সংক্রান্ত নানা নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হতে চলেছে, যা দেশটির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। রশিদ খান তার দেশের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকেই এই আহ্বান জানিয়েছেন।
আফগানিস্তানে শিক্ষার ভবিষ্যত
রশিদ খানের আহ্বান শুধু একজন ক্রিকেটারের পক্ষ থেকে নয়, বরং এটি একটি মানবিক আবেদন, যেখানে দেশের নারী শিক্ষার ভবিষ্যত ও তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। নারী শিক্ষার প্রতি এমন নিষেধাজ্ঞা দেশের সার্বিক উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে এবং জাতীয় উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই বিষয়টি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরাও এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। আফগানিস্তানের নারীরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা এবং সামাজিক অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আসছে। রশিদ খান এর মাধ্যমে তাদের পক্ষে আরো একবার তাদের অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তুললেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আফগানিস্তানও যদি তাদের নারী জনগণের শিক্ষা অধিকার রক্ষা করতে পারে, তবে এটি শুধুমাত্র তাদের সমাজের জন্য নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।