গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে বড় ঘোষণা করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। রবিবার রাতে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি নিশ্চিত করেন যে, হামাসের গাজা শাখার প্রধান মোহাম্মদ সিনওয়ার (Mohammad Sinwar) নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি নির্ভুল ড্রোন হামলায় তিনি মারা যান বলে জানানো হয়েছে।
সুনির্দিষ্ট অভিযানে ‘টার্গেট কিলিং’
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, সিনওয়ার একটি গভীর ভূগর্ভস্থ কমান্ড সেন্টারে লুকিয়ে ছিলেন। গোপন গোয়েন্দা তথ্য ও উচ্চ প্রযুক্তির সহযোগিতায় ওই স্থানে একটি নির্ভুল ড্রোন স্ট্রাইক (Precision Drone Strike) চালানো হয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
এই অভিযানে অত্যন্ত সীমিত collateral damage হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
নেতানিয়াহুর ঘোষণা: “হামাসের নেতৃত্ব একে একে নিশ্চিহ্ন”
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তাঁর বিবৃতিতে বলেন: “গাজার মাটিতে হামাসের কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, হামাসের নেতৃত্বকে নির্মূল করব। আজ মোহাম্মদ সিনওয়ারের মৃত্যু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের দিকেই এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।” তিনি আরও জানান, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত হামাসের শীর্ষস্থানীয় বহু নেতা ও অপারেটিভদের “সিস্টেম্যাটিক্যালি” নির্মূল করেছে।
কে ছিলেন মোহাম্মদ সিনওয়ার?
মোহাম্মদ সিনওয়ার ছিলেন হামাসের গাজা শাখার প্রধান ও সামরিক পরিকল্পনার অন্যতম কেন্দ্রীয় মুখ। তিনি ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই, যিনি হামাসের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নেতা। মোহাম্মদ মূলত গোপন সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক, অস্ত্র সরবরাহ এবং হামলার কৌশলগত পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন।
২০১৪ সাল থেকে গাজায় বেশ কয়েকটি বড় হামলার পিছনে তাঁর নাম উঠে এসেছে। তাঁকে “মাস্টারমাইন্ড অফ টানেল ওয়ারফেয়ার” হিসেবেও পরিচিত করা হত।
গোয়েন্দা সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি সূত্রের দাবি, এই অভিযানের আগে আমেরিকা ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলির গোয়েন্দা সহযোগিতা ছিল। গোয়েন্দা উপগ্রহ, ইলেকট্রনিক সিগন্যাল এবং মানব গোয়েন্দা সূত্রের সাহায্যে এই অভিযান সফল হয়েছে।
তবে, কিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে যে, এর ফলে গাজায় আরও সহিংসতা বাড়তে পারে এবং বেসামরিক নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
গাজায় হামাসের ভগ্নপ্রায় কাঠামো
এই মুহূর্তে গাজা এক গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। একদিকে টানা ইসরায়েলি আক্রমণ, অন্যদিকে হামাসের নেতৃত্ব হারানো – দুইয়ে মিলে গাজায় এক ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রশাসনিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মোহাম্মদ সিনওয়ারের মৃত্যু হামাসের মধ্যে একটি “কমান্ড ভ্যাকুয়াম” তৈরি করবে, যা ইসরায়েলের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা।
পরবর্তী ধাপ কী?
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই অপারেশন চলতেই থাকবে যতক্ষণ না পুরো হামাস কাঠামো ধ্বংস হয়। নেতানিয়াহু বলেন, “এটি কোনো সাময়িক লড়াই নয়, বরং এটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের চূড়ান্ত যুদ্ধ।”
মোহাম্মদ সিনওয়ারের মৃত্যু শুধু এক জন নেতার পরিসমাপ্তি নয়, বরং এটি গাজায় হামাসের ওপর ইসরায়েলের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন গাজার দিকে – পরবর্তী পদক্ষেপে অঞ্চলটি কোন দিকে এগোয়, তা ভবিষ্যতের যুদ্ধনীতি ও কূটনীতিকে অনেকাংশে প্রভাবিত করবে।