জাতীয় ফুটবলে নিজের পরিচয় দেবেন পুরুলিয়ার ছোট্ট সীমা!

পুরুলিয়া (Purulia) জেলার মাহালিতোড়ার এক ছোট্ট গ্রামে বসবাস করেন ১৭ বছরের সীমা মাহাতো (Sima Mahato)। তার বাড়ি মাটি-ইঁট দিয়ে তৈরি, মাত্র দুটি ঘর এমন পরিবেশে…

Bengal Football Team player Sima Mahato

পুরুলিয়া (Purulia) জেলার মাহালিতোড়ার এক ছোট্ট গ্রামে বসবাস করেন ১৭ বছরের সীমা মাহাতো (Sima Mahato)। তার বাড়ি মাটি-ইঁট দিয়ে তৈরি, মাত্র দুটি ঘর এমন পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছেন সীমা। তবে, এই ছোট্ট ঘরেই আশার আলো দেখছেন বাংলার ফুটবল দলের (Bengal Football Team) এই তারকা ফুটবলার। সম্প্রতি, তিনি জাতীয় ফুটবল (National Level Football) প্রতিযোগিতার জন্য বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তার এই অর্জন শুধুমাত্র তার পরিবার এবং গ্রামের জন্য নয়, পুরুলিয়া তথা পশ্চিমবঙ্গের জন্যও এক গর্বের বিষয়।

গোল শূন্য ড্র ভুলে গুরপ্রীতের রহস্যময় পোস্ট ঘিরে বাড়ছে জল্পনা, নিশানায় বিশাল কাইথ!

   

সীমার ফুটবল যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে, যখন তিনি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। তার জেঠতুতো দাদা বিষ্ণুপদ মাহাতোর হাত ধরে ফুটবলের প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে। সীমা নিজে কখনোই ভাবেননি যে ছোটবেলার খেলাধুলা একদিন তাকে জাতীয় স্তরের ফুটবল প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাবে। তবে তার একাগ্রতা, কঠোর পরিশ্রম এবং দাদার দিকনির্দেশনায় সে ফুটবলে দারুণ দক্ষ হয়ে ওঠে।

Advertisements

স্কুলে পড়াশুনার পাশাপাশি সীমার ফুটবল প্রশিক্ষণ শুরু হয় ভোর পাঁচটায়। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা কখনোই সে অনুশীলন বন্ধ করেনি। প্রতিদিন সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সকাল নটা পর্যন্ত এবং বিকাল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিয়মিত বল নিয়ে মাঠে অনুশীলন করত সে। তার এই কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস তাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। তার দাদা বিষ্ণুপদ মাহাতো তাকে কোচ হিসেবে প্রেরণা দিয়ে চলেছেন।

২০২৩ সালে প্রথমবার জাতীয় স্তরের আইএফএ ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলতে সুযোগ পায় সীমা। যদিও সেবার গোল করতে না পারলেও তার সাফল্য এবং খেলার মান মুগ্ধ করেছিল সবার। স্কুল স্তরের অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে সে তার আগের সাফল্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া। এবার তার লক্ষ্য শুধু খেলতে না, বরং গোল করা। মণিপুরের (Manipur) মাঠে ১৫-২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে চলা এই প্রতিযোগিতায় বাংলার হয়ে মাঠে নামবে সীমা।

ISL সেমিফাইনালে গোয়ার ‘চাবিকাঠি’ বাগানের বিপক্ষে জোড়া গোল করা এই ভারতীয় ফুটবলার!

সীমার পরিবার এক সাধারণ কৃষক পরিবার। তার বাবা আশুতোষ মাহাতো সামান্য জমিতে চাষাবাদ করে জীবন ধারণ করেন। তবে, জমির আবাদে তেমন লাভ হয় না এবং সংসার চলাতে বেশ কষ্ট হয়। সীমা বলে, “আমার বাবা-মা সবসময় আমাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছেন। তারা সবসময় আমাকে বলেছে যে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং স্বপ্ন পূরণের জন্য কখনও হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”

সীমার মা কমলা মাহাতো বলেন, “জাতীয় স্তরে বাংলার হয়ে সুযোগ পাওয়ার পর আমরা খুব গর্বিত। আমি জানি, সীমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। সে কখনও থামবে না, তার লক্ষ্য পূরণ করেই ছাড়বে।”

২৬ বিশ্বকাপে সপ্তম হিসেবে যোগ্যতা অর্জন মেসি-মার্টিনেজদের

সীমার এই কঠিন পরিশ্রম এবং অবিচল দৃঢ়তা তাকে শুধু জাতীয় দলে সুযোগ দেয়নি, বরং তাকে এক জীবন্ত প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছে যে, কোনো প্রতিবন্ধকতা তার স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সীমার সাফল্য শুধু তার নিজস্ব নয়, বরং তার পুরো গ্রামের গর্বের বিষয়। গ্রামের অনেকেই তার প্রতিভা ও পরিশ্রমের প্রশংসা করেছেন এবং তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সীমা শুধুমাত্র নিজের স্বপ্ন পূরণ করবে না, বরং তার পরিবারের, তার গ্রামের, এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখও উজ্জ্বল করবে। তার মতো একজন প্রতিভাবান এবং পরিশ্রমী কিশোরী যদি তার স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারে, তবে তা অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। এবার তার লক্ষ্যে রয়েছে একটি গোল মণিপুরে সেই গোলই তার সাফল্যের পরবর্তী পদক্ষেপ হতে চলেছে।