মিনার্ভা অ্যাকাডেমিকে হারিয়ে এআইএফএফ ট্রফি পাঞ্জাবের

পাঞ্জাব এফসি তাদের শহরের প্রতিদ্বন্দ্বী মিনার্ভা অ্যাকাডেমি এফসি-কে ১-০ গোলে পরাজিত করে ২০২৪-২৫ এআইএফএফ ইউ-১৫ জুনিয়র (AIFF U-15 Junior League) লিগের শিরোপা জিতেছে। জামশেদপুরের জেআরডি…

Punjab FC Crowned AIFF U-15 Junior League Champions with 1-0 Win Over Minerva Academy

পাঞ্জাব এফসি তাদের শহরের প্রতিদ্বন্দ্বী মিনার্ভা অ্যাকাডেমি এফসি-কে ১-০ গোলে পরাজিত করে ২০২৪-২৫ এআইএফএফ ইউ-১৫ জুনিয়র (AIFF U-15 Junior League) লিগের শিরোপা জিতেছে। জামশেদপুরের জেআরডি টাটা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এই ফাইনাল ম্যাচে প্রথমার্ধে কেইশাম বিকাশ সিং-এর একমাত্র গোলই পাঞ্জাব এফসি-র জন্য এই মরশুমে দ্বিতীয় যুব লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে। এর আগে এই মাসের শুরুতে তাদের ইউ-১৭ দল এআইএফএফ ইউ-১৭ এলিট যুব লিগ জিতেছিল। এই জয় পাঞ্জাব এফসি-র যুব ফুটবলের ক্ষেত্রে অসাধারণ ধারাবাহিকতা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ।

ফাইনাল ম্যাচের হাইলাইটস
ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে ৪০তম মিনিটে। অরম্বম দীপক সিং ডান প্রান্ত থেকে একটি নিচু ক্রস দেন, যা মিনার্ভা অ্যাকাডেমির ডিফেন্ডাররা সঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়। এই ক্লিয়ারেন্স বিকাশ সিং-এর গায়ে লেগে গোলপোস্টের নিচের কোণে জড়িয়ে যায়। এই গোলের পর পাঞ্জাব এফসি-র তরুণরা দৃঢ় প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। খুপখানলিয়ান, মাইবাম মঙ্গলসানা মৈতৈ এবং প্রভজোৎ সিং-এর নেতৃত্বে এবং দলের অধিনায়ক জসমিত সিং-এর কেন্দ্রীয় মিডফিল্ড থেকে দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণে এই প্রতিরক্ষা অটুট থাকে। গোলরক্ষক অগস্টাস্যা গুপ্ত কয়েকটি অসাধারণ সেভ করে দলের লিড ধরে রাখেন। প্রভজোৎ সিং তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান।

   

পাঞ্জাব এফসি-র জয়ের পথ
পাঞ্জাব এফসি কোয়ার্টার ফাইনালে পারাপ্পুর এফসি কেরালাকে ১-০ গোলে হারায়, যেখানে জসমিত সিং বিজয়ী গোলটি করেন। সেমিফাইনালে তারা ইস্ট বেঙ্গলকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে ওঠে। এই ম্যাচে কেইশাম বিকাশ সিং দুটি গোল করেন, এবং তাইবাং নগানবা তাখেল্লাম্বম, প্রভজোৎ সিং এবং অরম্বম দীপক সিং একটি করে গোল করেন। ফাইনাল রাউন্ডের গ্রুপ সি-তে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে তারা নকআউট পর্বে উঠেছিল। প্রথম ম্যাচে তারা মিনার্ভা অ্যাকাডেমি এফসি-র কাছে ১-৪ গোলে হারলেও, ফুটবল ৪ চেঞ্জ অ্যাকাডেমি, মণিপুরকে ৪-১ এবং জামশেদপুর এফসি-কে ৩-০ গোলে হারিয়ে নকআউটে জায়গা করে নেয়।

নর্থ জোন রিজিওনাল গ্রুপ পর্বে সানদীপ আলহানের কোচিংয়ে পাঞ্জাব এফসি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে ফাইনাল রাউন্ডের প্লে-অফে ওঠে। তারা নমধারি স্পোর্টস অ্যাকাডেমি এবং ভাইচুং ভুটিয়া ফুটবল স্কুলের বিপক্ষে আটটি গোল করে এবং শ্রী দশমেশ মার্শাল স্পোর্টস অ্যাকাডেমিকে ৪-০ গোলে হারায়। তাদের একমাত্র পরাজয় ছিল মিনার্ভা অ্যাকাডেমির কাছে ১-৬ গোলে। প্লে-অফে তারা কেরালা ব্লাস্টার্স এবং অ্যালকেমি ইন্টারন্যাশনাল এফএ, বেঙ্গালুরুকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছায়।

পাঞ্জাব এফসি-র যুব দলের দুর্দান্ত মৌসুম
পাঞ্জাব এফসি-র যুব দলগুলি এই মৌসুমে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। তারা সকল বয়স বিভাগের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ্যতা অর্জন করেছে। এই মাসের শুরুতে তাদের ইউ-১৭ দল এআইএফএফ ইউ-১৭ এলিট যুব লিগ জিতেছে এবং একই দল ড্রিম স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপও জিতেছে। তাদের সাব-জুনিয়র দল ২০২৪-২৫ এআইএফএফ সাব-জুনিয়র লিগের ফাইনাল রাউন্ডের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল, যেখানে তারা এফসি মাদ্রাসের কাছে পেনাল্টি শ্যুটআউটে হেরে যায়। এই অর্জনগুলি পাঞ্জাব এফসি-র যুব ফুটবল উন্নয়নে তাদের প্রতিশ্রুতি ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে।

Advertisements

মিনার্ভা অ্যাকাডেমির প্রতিরোধ
মিনার্ভা অ্যাকাডেমি এফসি, যারা আইপিএল ইতিহাসে একাধিক যুব লিগ শিরোপা জিতেছে, এই ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ছিল। তারা সেমিফাইনালে বেঙ্গালুরু এফসি-কে ৭-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল। তবে ফাইনালে তারা পাঞ্জাব এফসি-র প্রতিরক্ষার সামনে অসহায় ছিল। মিনার্ভার খেলোয়াড়রা ম্যাচে কিছু সুযোগ তৈরি করলেও, গোলরক্ষক অগস্টাস্যা গুপ্তর দুর্দান্ত সেভ তাদের গোল করতে দেয়নি।

সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বাস
এই জয়ের পর সামাজিক মাধ্যমে পাঞ্জাব এফসি-র প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে। একটি পোস্টে বলা হয়, “পাঞ্জাব এফসি ইউ-১৫ চ্যাম্পিয়ন! ইউ-১৭ এবং ড্রিম স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপের পর এটি তাদের তৃতীয় শিরোপা।” আরেকটি পোস্টে পাঞ্জাব এফসি এবং রাউন্ডগ্লাস স্পোর্টসের যুব উন্নয়নে অগ্রগতির প্রশংসা করা হয়। মিনার্ভা অ্যাকাডেমিও তাদের পোস্টে দলের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে, বলে, “আমরা স্কোরবোর্ডে পিছিয়ে পড়লেও, মাঠে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমরা ফিরে আসব।”

পাঞ্জাব এফসি-র যুব ফুটবলের ভবিষ্যৎ
পাঞ্জাব এফসি-র এই জয় তাদের যুব ফুটবল প্রোগ্রামের শক্তি প্রদর্শন করে। রাউন্ডগ্লাস স্পোর্টসের অধীনে, ক্লাবটি পাঞ্জাব জুড়ে ১৫টি গ্রাসরুট ফুটবল সেন্টার পরিচালনা করে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ২৫টিতে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। তাদের অ্যাকাডেমি ২০২৩ সালে এআইএফএফ-এর ‘এলিট ক্যাটাগরি’ স্বীকৃতি পেয়েছে। এই জয় তাদের তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে এবং ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নে তাদের অবদানকে তুলে ধরে।

পাঞ্জাব এফসি-র এআইএফএফ ইউ-১৫ জুনিয়র লিগ শিরোপা জয় তাদের যুব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। কেইশাম বিকাশ সিং, প্রভজোৎ সিং, জসমিত সিং এবং অগস্টাস্যা গুপ্তর মতো খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স এবং কোচ সানদীপ আলহানের নেতৃত্বে দলটি একটি অসাধারণ মৌসুম কাটিয়েছে। এই জয় ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে এবং পাঞ্জাব এফসি-র যুব উন্নয়ন প্রোগ্রামের সাফল্যকে তুলে ধরে।a