প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার ভার্চুয়ালি খেলো ইন্ডিয়া যুব গেমস (Khelo India Youth Games) ২০২৫-এর সপ্তম সংস্করণের উদ্বোধন করেছেন, যা বিহারের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই রাজ্য প্রথমবারের মতো এই মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় ক্রীড়া ইভেন্টের আয়োজন করছে। পাটনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এই ইভেন্টটি বিহারের ক্রীড়া ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ক্রীড়াবিদ এবং উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতে ক্রীড়ার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “ক্রীড়া সংস্কৃতি যত বেশি বিস্তৃত হবে, ভারতের নরম শক্তি তত বেশি বৃদ্ধি পাবে।” তিনি বিহারের উদীয়মান ক্রীড়া প্রতিভাদের উল্লেখ করে সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ ক্রিকেটার বৈভব সূর্যবংশীর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)-এ অসাধারণ পারফরম্যান্সের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “তার সাফল্যের পেছনে তার নিষ্ঠা আছে, তবে বিভিন্ন স্তরে খেলার অভিজ্ঞতাও গুরুত্বপূর্ণ। যত বেশি খেলবে, ততই উজ্জ্বল হবে।”
জাতীয় ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের চেতনার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অন্য রাজ্য থেকে আগত ক্রীড়াবিদদের বিহারের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং রন্ধনশৈলী গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, “বাইরের ক্রীড়াবিদদের উচিত লিট্টি-চোখা চেখে দেখা এবং বিহারের বিখ্যাত মাখানা উপভোগ করা। আপনারা কেবল মাঠে ক্রীড়াবিদ নন, বরং এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারতের দূত।” এরপর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গেমসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
বিহারের ক্রীড়া মাইলফলক
খেলো ইন্ডিয়া যুব গেমস ২০২৫ বিহারের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, কারণ এটি রাজ্যের সবচেয়ে বড় মাল্টি-স্পোর্ট ইভেন্ট। ৩৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ৬,০০০-এর বেশি ক্রীড়াবিদ ২৭টি ডিসিপ্লিনে পাটনা, ভাগলপুর, এবং রাজগীরের মতো শহরে ১৫ মে পর্যন্ত প্রতিযোগিতা করবে। উদ্বোধনী দিনে তীরন্দাজি (ভাগলপুর), কাবাডি (রাজগীর), এবং ভলিবল (পাটনা) প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
গত সংস্করণে ২১তম স্থান অর্জনকারী বিহার এবার আরও শক্তিশালী পারফরম্যান্সের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে আয়োজক রাজ্য যেমন দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, এবং তামিলনাড়ু তাদের আয়োজনের বছরে পডিয়াম ফিনিশ অর্জন করেছে, এবং বিহারও এই প্রবণতা অনুসরণ করতে চায়। গত দুই সংস্করণের চ্যাম্পিয়ন মহারাষ্ট্র এবার হ্যাটট্রিকের জন্য মাঠে নামছে, যেখানে হরিয়ানা, তামিলনাড়ু, এবং কর্ণাটকও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উপস্থিত। এমনকি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাদাখ, লাক্ষাদ্বীপ, এবং সিকিমের মতো ছোট অঞ্চলগুলোও দল পাঠিয়েছে, যা গেমসের জাতীয় আবেদন প্রদর্শন করে।
#WATCH | PM Modi virtually addresses the inauguration event of Khelo India Youth Games in Bihar’s Patna.
PM Modi says, “…During the Khelo India Youth Games, many competitions will be held in different parts of Bihar… Sports in India are now making their identity as a… pic.twitter.com/ox5P91fH8U
— ANI (@ANI) May 4, 2025
দীর্ঘমেয়াদী তাৎপর্য
এই সংস্করণটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিভা স্কাউটরা উদীয়মান ক্রীড়াবিদদের খুঁজছেন, যারা ২০৩২ এবং ২০৩৬ অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। ভারত ২০৩৬ অলিম্পিক আয়োজনের জন্য বিড করছে, এবং এই গেমস তরুণ প্রতিভাদের চিহ্নিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। গত সংস্করণে ৩০টি জাতীয় রেকর্ড সৃষ্ট হয়েছিল, যার মধ্যে ২২টি যুব ওজন উত্তোলন এবং ৮টি অ্যাথলেটিক্সে। এই বছর ২৮৪টি স্বর্ণপদকের জন্য প্রতিযোগিতা হবে, যেখানে সাঁতারে ৩৮টি, অ্যাথলেটিক্সে ৩৪টি, এবং কুস্তি, বক্সিং, এবং ওজন উত্তোলনে ২০টির বেশি স্বর্ণপদক রয়েছে।
বিহারের পাঁচটি শহর—পাটনা, গয়া, নালন্দা (রাজগীর), ভাগলপুর, এবং বেগুসরাই—এই ইভেন্টের আয়োজন করছে, যা এটিকে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কেআইওয়াইজি-র সবচেয়ে ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত সংস্করণে পরিণত করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়া উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, বিহারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শনের জন্য মৈথিলী ঠাকুরের মতো লোকশিল্পীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
বিহারের ক্রীড়া সংস্কৃতি ও অবকাঠামো
নীতীশ কুমার জানিয়েছেন যে এই ইভেন্টটি বিহারে ক্রীড়া সংস্কৃতি প্রচার এবং তরুণ প্রতিভাদের উৎসাহিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি বলেন, “এই ইভেন্টের মাধ্যমে রাজ্যের ক্রীড়া অবকাঠামো আরও শক্তিশালী হবে এবং যুবকরা জাতীয় স্তরে তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ পাবে।” গেমসের লোগো এবং মাসকট ‘গজসিংহ’ বিহারের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ক্রীড়া চেতনার প্রতীক। মাসকটটি নালন্দা এবং বোধগয়ার পাল যুগের মন্দির এবং স্তম্ভে খোদিত হাতি-সিংহের মূর্তি থেকে অনুপ্রাণিত।
বিহার রাজ্য ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক রবীন্দ্রন শঙ্করন বলেন, “এটি বিহারের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত। আমরা কেবল ইতিহাস লিখছি না, বরং এটি সৃষ্টি করছি।” তিনি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে রাজ্যের ক্রীড়া উন্নয়নের প্রশংসা করেন।
খেলো ইন্ডিয়া যুব গেমস ২০২৫ বিহারের ক্রীড়া ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভার্চুয়াল উদ্বোধন এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের উপস্থিতি এই ইভেন্টের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ৬,০০০-এর বেশি ক্রীড়াবিদের অংশগ্রহণ এবং ২৮৪টি স্বর্ণপদকের জন্য প্রতিযোগিতা এই গেমসকে ভারতের ভবিষ্যৎ ক্রীড়া তারকাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে। বিহারের আয়োজন ক্রীড়া অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই গেমসের সাফল্য ভারতের ক্রীড়া সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতের অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্বের পথ প্রশস্ত করবে।