বিদায়ের ছায়ায় সিআর৭! ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে ইয়ামাল নিয়ে ‘বেফাঁস’ পর্তুগিজ তারকা

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) যেন ব্যতিক্রম। বয়স তাঁর জন্য শুধুমাত্র সংখ্যা। নেশন্স লিগের ফাইনালে (Nations League Final) ওঠার লড়াইয়ে জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল…

Portugal captain Cristiano Ronaldo

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) যেন ব্যতিক্রম। বয়স তাঁর জন্য শুধুমাত্র সংখ্যা। নেশন্স লিগের ফাইনালে (Nations League Final) ওঠার লড়াইয়ে জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করে সেই বার্তাই দিয়েছেন রোনাল্ডো।

চল্লিশ বছর বয়স মানেই সাধারণত পেশাদার ক্রীড়াজগতে শেষ পর্বের শুরু। কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo) যেন ব্যতিক্রম। বয়স তাঁর জন্য শুধুমাত্র সংখ্যা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক ক্ষয় অবশ্যই হয়েছে, কিন্তু তাতে খেলার প্রতি ভালোবাসা কিংবা প্রতিযোগিতার তীব্রতা একফোঁটাও কমেনি। নেশনস লিগের ফাইনালে (Nations League Final) ওঠার লড়াইয়ে জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করে সেই বার্তাই দিয়েছেন রোনাল্ডো, তিনি এখনও শেষ হননি।

   

রবিবার স্পেনের (Spain) বিরুদ্ধে রোনাল্ডো নামবেন আরেকটি বড় ফাইনালে। বয়স ৪০ পেরিয়েছে, কিন্তু মানসিকতা এখনও তরুণ। রোনাল্ডো নিজেই জানিয়েছেন, “এখন প্রতিদিন ধরে পরিকল্পনা করি। আরও অনেক বছর খেলা সম্ভব নয়, তাই প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করছি।” এমন বক্তব্য আগেও বহু মহাতারকার মুখে শোনা গেছে, কিন্তু রোনাল্ডোর মতো একজন পরিপূর্ণ পেশাদারের মুখে এ ধরনের স্বীকারোক্তি নিঃসন্দেহে ইঙ্গিত দেয় – বিদায়ের দিন হয়তো খুব দূরে নয়।

তবে অবসরের ইঙ্গিত দিলেও এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলেননি সিআর৭। তিনি বলেন, “অবসর নিয়ে এখনও কিছু স্থির করিনি। ফুটবলটা ভালো লাগছে, তাই যতদিন উপভোগ করব, ততদিনই খেলে যেতে চাই।”

রোনাল্ডোর ক্যারিয়ার মানেই রেকর্ড, চ্যালেঞ্জ, এবং নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়ার গল্প। ২০০৩ সালে স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে এক প্রীতি ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে নজরে আসেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। বাকিটা ইতিহাস – ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্তাস, আল নাসের – ক্লাবের নাম বদলেছে, কিন্তু লক্ষ্য বদলায়নি কখনও।

এবারের নেশনস লিগ ফাইনালে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে আরেক নাম লামিন ইয়ামাল (Lamine Yama)। বয়স মাত্র ১৭। সারা বিশ্বের চোখ এখন এই স্প্যানিশ তরুণের দিকে। দু’জনের বয়সের ব্যবধান ২৩ বছর, কিন্তু মঞ্চ এক – ইউরোপের বড় একটি ফাইনাল। মিডিয়া হাইপ তৈরি করেছে এই ‘জেনারেশনাল ব্যাটল’ ঘিরে। কিন্তু রোনাল্ডো ঠান্ডা মাথায় বলেছেন, “এটা রোনাল্ডো বনাম ইয়ামাল নয়। এটা স্পেন বনাম পর্তুগাল। আমি একটা প্রজন্মের প্রতিনিধি, ইয়ামাল আরেকটা। ও দুর্দান্ত খেলছে, কিন্তু ওকে সময় দিতে হবে।”

Advertisements

এই মন্তব্যে যেমন অভিজ্ঞতা, তেমনই একটি পরিপক্কতা। তিনি আরও বলেছেন, “ও তো আমার ছেলের চেয়েও ছোট। এমন একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে নিয়ে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করা উচিত নয়। ওকে নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দিতে হবে।” এককালে যিনি নিজেই কিশোর বয়সে পেশাদার ফুটবলে এসেছিলেন, তিনি জানেন চাপে থাকলে প্রতিভা হারিয়ে যেতে কতটা সহজ।

এখন প্রশ্ন উঠছে, ২০২৫-২৬ মরসুমে রোনাল্ডোকে আর কোথায় দেখা যাবে? ক্লাব বিশ্বকাপে আল নাসেরের হয়ে খেলা হবে না সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এমনকি জানিয়েছেন, কিছু ক্লাব তাঁকে প্রস্তাব দিলেও তিনি অংশ নিচ্ছেন না। “সব প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যায় না। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ছোট থেকে বড় পরিকল্পনার কথা ভাবতে হয়।”

তবে ব্যালন ডি’অর নিয়ে তিনি বরাবরের মতো স্পষ্ট, “চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী কেউই বর্ষসেরা হওয়া উচিত। শুধুমাত্র জনপ্রিয়তা দেখে এই পুরস্কার দেওয়া হলে তার মূল্য কমে যায়।” এমন মন্তব্যে স্পষ্ট, রোনাল্ডো নিজের ভাবনাতেই বিশ্বাসী।

একটা সময় ছিল, যখন তাঁর গোলের সংখ্যা, ট্রফির ঝুলি, ফিটনেস – সব কিছু নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো মেসির সঙ্গে। আজ সেই রোনাল্ডো সময়ের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে এক অন্য জায়গায়। মেসি হয়তো আমেরিকায়, নিজের মতো খেলছেন, আর রোনাল্ডো এখনও ইউরোপে এসে বড় প্রতিযোগিতায় দেশের জার্সিতে লড়ছেন। এই লড়াইটাই তাঁকে আলাদা করে দেয়।

পরিশেষে বলা যায়, সময় যতই এগিয়ে যাক না কেন, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এক অনন্য অধ্যায়। তিনি শুধু এক ফুটবলার নন, বরং এক মানসিকতা – হার না মানার, প্রতিদিন আরও ভালো হওয়ার। তাঁর বিদায় আসবেই, কিন্তু তার আগেই এই কিংবদন্তিকে উপভোগ করে নেওয়াই শ্রেয়। কারণ এমন ‘সিআর৭’ আর হয়তো আসবে না।