রোহিত-কোহলির স্পিনের বিরুদ্ধে উদ্বেগজনকভাবে কমেছে ব্যাটিং গড়

ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ২০২৪ সালটা খুব একটা সুখকর হচ্ছে না। রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাড়ির মাঠে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ…

Rohit Shrama and India First XI against Australia in Boxing Day Test

short-samachar

ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য ২০২৪ সালটা খুব একটা সুখকর হচ্ছে না। রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাড়ির মাঠে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ টেস্ট সিরিজের সম্মুখীন হয়েছে। ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর দেশের ক্রিকেট কিংবদন্তি সাচিন টেন্ডুলকার জানান, “সম্ভবত ভারতের জন্য এখন কিছুটা অন্তর্দৃষ্টি লাভ করার সময় এসেছে।”

   

নিউজিল্যান্ডের পেসাররা শুরুতে কিছুটা প্রভাব ফেললেও পরবর্তী টেস্টগুলোতে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় স্পিনাররা। ভারতীয় দলের ব্যাটিং ইউনিট স্পিনের বিরুদ্ধে যে দুর্বলতা দেখিয়েছে, তা উদ্বেগজনক। ভারত যখন স্পিন-বান্ধব পিচে খেলছিল, তখন নিউজিল্যান্ডের স্পিনাররা, বিশেষ করে আজাজ প্যাটেল, মিচেল স্যান্টনার এবং গ্লেন ফিলিপস, ভারতীয় ব্যাটারদের নৈপুণ্যকে সামনে এনে দেন।

২০২৪ সালে স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভারতের ব্যাটিং গতি
এই বছরের শুরুতে, ভারত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ আয়োজন করে, যেখানে ভারত ৪-১ ব্যবধানে জয়ী হয়। তখন ভারতের ব্যাটিং গড় স্পিনারদের বিরুদ্ধে ছিল ৩৯.৯। যদিও শুরুর দিকে তাদের পারফরম্যান্স ভাল ছিল, পরবর্তীতে তাদের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ডের পেসাররা, যেমন শোয়েব বাশির (১৭), রেহান আহমেদ (১১), টম হার্টলি (২২), জ্যাক লিচ (২) এবং জো রুট (৮), মিলিতভাবে সিরিজে ৬০ উইকেট নেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিযোগিতামূলক পিচে ভারতীয় ব্যাটাররা ভালো খেলার পরিসংখ্যানে পৌঁছেছিল। সেই সিরিজে তাদের ব্যাটিং গড় ছিল ৪২.৯। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের গড় ছিল চূড়ান্তভাবে ২৪.৪। তিনটি টেস্টে তারা ৩৭টি উইকেট হারিয়েছে এবং এ থেকে তারা যে বার্তা পেয়েছে, তা হল স্পিনারদের বিরুদ্ধে তাদের প্রস্তুতির অভাব।

বিশ্বের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অবস্থান
এই সিরিজের হারের ফলে ভারতের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনালে পৌঁছানোর রাস্তা কঠিন হয়ে উঠেছে। ভারতীয় দল শুরুতে WTC ২০২৩-২০২৫ পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ছিল, কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই অব্যাহত পরাজয়ের ফলে তারা দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে। বর্তমানে ভারতের পয়েন্ট শতাংশ ৫৮.৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে অস্ট্রেলিয়া শীর্ষ স্থানে রয়েছে ৬২.৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে।

আবারও উল্লেখ্য, ভারতকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটি জিততে হবে, যাতে তারা WTC ফাইনালে জায়গা করে নিতে পারে। এই সিরিজে ভারত এক ম্যাচ ড্র বা হারানোর সুযোগ আছে।

প্রধান খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স
রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি, যারা দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাঁদের পারফরম্যান্সও উদ্বেগজনক। শর্মা ও কোহলির ব্যাটিং গড় স্পিনারদের বিরুদ্ধে এই বছর উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তাদের স্পিনের বিরুদ্ধে সঠিক শট নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারিয়েছেন। কোহলি ও শর্মার মতো অভিজ্ঞ ব্যাটাররা যখন দুর্বল হয়ে পড়েন, তখন তরুণ ব্যাটারদের উপর চাপ পড়ে।

ভারতীয় দলের ভবিষ্যৎ
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। তবে প্রশ্ন উঠছে, তারা কি যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে এই সমস্যা সমাধানে এগোবে? যদি ভারতীয় দল নিজেদের ব্যাটিং শক্তি বৃদ্ধি করতে না পারে, তবে টেস্ট ফরম্যাটে তাদের উন্নতির সুযোগ কমে যাবে।

দলটি এখন নতুন কৌশল নিয়ে আসতে হবে এবং স্পিনারদের বিরুদ্ধে নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। তাদের শর্তগুলি পরিবর্তন না হলে, আগামীতে আরও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।

ভারতের সামনে এখন চ্যালেঞ্জগুলি একের পর এক আসছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাদের সামনের ম্যাচগুলিতে কিভাবে নিজেদের প্রস্তুত করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ভারতীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য, স্পিনারদের বিরুদ্ধে ব্যাটিং উন্নতি করাই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য।