মালয়েশিয়ান হকি ফেডারেশন (এমএইচএফ) পাকিস্তানকে বার্ষিক সুলতান আজলান শাহ কাপে (Azlan Shah Cup) আমন্ত্রণ জানায়নি, কারণ পাকিস্তান হকি ফেডারেশন (PHF) জোহর হকি অ্যাসোসিয়েশনের (Johor Hockey Association) কাছে ১০,৩৪৯ মার্কিন ডলারের বকেয়া পরিশোধ করেনি। এই ঘটনা পাকিস্তানের হকি সম্প্রদায়ের জন্য একটি লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে এবং আন্তর্জাতিক হকি মঞ্চে দেশটির অংশগ্রহণের উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে।
পাকিস্তান হকি ফেডারেশনের একটি সূত্র জানিয়েছে যে, জোহর হকি অ্যাসোসিয়েশন পিএইচএফ-এর কাছে একটি কঠোর আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে। এই চিঠিতে ২০২৩ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়ায় জোহর হকি কাপে অংশ নিতে যাওয়া পিএইচএফ কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের থাকার, ভ্রমণ এবং অন্যান্য খরচের বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তান দল জোহর হকি কাপে খেলতে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল, এবং পিএইচএফ-এর কর্মকর্তারা, যাদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্টও ছিলেন, তাদের পরিবারসহ দলের সঙ্গে গিয়েছিলেন।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, “দলের থাকার এবং খরচের দায়িত্ব আয়োজকদের ছিল, কিন্তু পিএইচএফ কর্মকর্তাদের, যাদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্টও ছিলেন, স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে তাদের নিজেদের সমস্ত খরচ নিজেদের বহন করতে হবে। এই কর্মকর্তারা দলের সঙ্গে একই বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেছিলেন।” এই অতিরিক্ত খরচের কারণেই জোহর হকি অ্যাসোসিয়েশনের কাছে বকেয়া তৈরি হয়েছে।
জোহর অ্যাসোসিয়েশন এই বিষয়টি ইতিমধ্যেই মালয়েশিয়ান হকি ফেডারেশনের কাছে উত্থাপন করেছে এবং বকেয়া পরিশোধ না হলে আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের (এফআইএইচ) কাছে এই বিষয়টি নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। পিএইচএফ-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং তার দল এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন, কারণ ফেডারেশন ইতিমধ্যেই আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। সূত্রটি জানিয়েছে, “বর্তমান পিএইচএফ প্রশাসন সাবেক কর্মকর্তাদের এই খরচ সম্পর্কে অবগত ছিল না।”
সুলতান আজলান শাহ কাপটি আগামী ২২ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার ইপোহ শহরে অনুষ্ঠিত হবে। এই টুর্নামেন্টে পাকিস্তান তিনটি শিরোপা জিতে তৃতীয় সফল দেশ। অস্ট্রেলিয়া ১০ বার এবং ভারত ৫ বার এই টুর্নামেন্ট জিতেছে। গত বছর পাকিস্তান এই টুর্নামেন্টে রানার্স-আপ হয়েছিল, কিন্তু এই বছর তাদের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পাকিস্তান হকি ফেডারেশনের একটি সূত্র আরও জানিয়েছে যে, পিএইচএফ কর্মকর্তারা এই সমস্যা সমাধানের জন্য মালয়েশিয়ান হকি ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা আশা করছেন যে এই সমস্যা শীঘ্রই সমাধান হবে এবং পাকিস্তানকে টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ জানানো হবে। “পাকিস্তান এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে হকির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। এই সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত,” সূত্রটি বলেছে।
এই ঘটনা পাকিস্তানের হকি সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে পিএইচএফ-এর আর্থিক অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করেছেন। পাকিস্তানের প্রাক্তন অলিম্পিয়ানরা পিএইচএফ-কে এই সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং আজলান শাহ কাপে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন। মনজুর-উল-হাসান এবং তৌকির দারের মতো প্রাক্তন খেলোয়াড়রা বলেছেন যে, এই টুর্নামেন্ট পাকিস্তানের তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এবং এটি হাতছাড়া করা উচিত নয়।
পাকিস্তানের আর্থিক সংকট এই ঘটনার পেছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। দেশটি বর্তমানে গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সরকারের ঋণ পরিশোধে বেশিরভাগ রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পিএইচএফ-এর মতো সংস্থাগুলো আর্থিক সংকটে পড়ছে, যা তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করছে।
এই ঘটনা পাকিস্তান হকি ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেও তুলে ধরেছে। প্রাক্তন কর্মকর্তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত এবং বর্তমান প্রশাসনের আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব এই সমস্যাকে আরও জটিল করেছে। পিএইচএফ-এর সেক্রেটারি জেনারেল রানা মুজাহিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন যে মালয়েশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সমস্যা শীঘ্রই সমাধান হবে।
সুলতান আজলান শাহ কাপে পাকিস্তানের সম্ভাব্য অনুপস্থিতি দেশটির হকি ইতিহাসের জন্য একটি বড় ধাক্কা। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন এবং গত বছরের রানার্স-আপ হিসেবে পাকিস্তানের এই টুর্নামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি ছিল। পিএইচএফ-এর উচিত এই আর্থিক সমস্যা দ্রুত সমাধান করা এবং আন্তর্জাতিক হকি মঞ্চে দেশের সম্মান বজায় রাখা। এই ঘটনা পাকিস্তানের ক্রীড়া প্রশাসনের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে, যাতে ভবিষ্যতে এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতি এড়ানো যায়।