চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) আইপিএল ২০২৫-এ অভূতপূর্ব সংকটে। ছয় ম্যাচে একমাত্র জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে ভাসছে তারা। ৪৩ বছর বয়সে মহেন্দ্র সিং ধোনি পুনরায় অধিনায়ক হয়েছেন। কিন্তু তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—‘থালা’ কি এখনও দলের মুক্তিদাতা, নাকি তিনিই হয়ে উঠেছেন বোঝা? ধোনির বয়স কি হলুদ বাহিনীকে পিছিয়ে দিচ্ছে, নাকি সমস্যার জট পাকিয়েছে দলের অন্যত্র?
ধোনির ব্যাট: ঝলক আছে, স্থিরতা নেই
ধোনির ব্যাটিং পরিসংখ্যান মিশ্র বার্তা দেয়। ৭৫ বলে ১০৪ রান, স্ট্রাইক রেট ১৩৮.৬৭। ম্যাচ-ভিত্তিক চিত্রে দেখা যায় অস্থিরতা:
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স: ০(২), স্ট্রাইক রেট ০, পজিশন #৮
আরসিবি: ৩০(১৬), স্ট্রাইক রেট ১৮৭.৫, পজিশন #৯
রাজস্থান রয়্যালস: ১৬(১২), স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৩৩, পজিশন #৭
দিল্লি ক্যাপিটালস: ৩০(২৮), স্ট্রাইক রেট ১০৭.১৪, পজিশন #৭
পাঞ্জাব কিংস: ২৭(১৩), স্ট্রাইক রেট ২০৭.৬৯, পজিশন #৫
কেকেআর: ১(৪), স্ট্রাইক রেট ২৫, পজিশন #৯
ধোনির গড় ব্যাটিং পজিশন #৭.৫। এত নিচে খেলায় তিনি ম্যাচের গতিপথ বদলানোর সুযোগ কম পান। তবু, যেসব ম্যাচে তিনি উজ্জ্বল (স্ট্রাইক রেট ১৮৫+), সেখানেও সিএসকে হেরেছে। এটি ইঙ্গিত দেয়, ধোনির ব্যক্তিগত দ্যুতি আর দলের জয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।
দলের সংকট: ধোনির বাইরেও
সিএসকের সমস্যা একজনের নয়। বোলিংয়ে পাওয়ারপ্লে ইকোনমি ৮.৭৫ এবং ডেথ ওভারে ৯.৯১—দুই পর্যায়েই শৃঙ্খলাহীনতা। ব্যাটিংয়ে মিডল ওভারে রান রেট ৬.৫৭, যা দলের গতিহীনতা প্রকাশ করে। রুতুরাজ গায়কোয়াডের (#৩ ব্যাটসম্যান, ওপেনার নন) কনুইয়ের ইনজুরি দলের ভিত কাঁপিয়েছে। ছয় ম্যাচে ছয়টি টপ-অর্ডার কম্বিনেশন পরীক্ষা করা হয়েছে, কিন্তু স্থিতিশীলতা মেলেনি। ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রের স্ট্রাইক রেট ১২৩.১৪-এ ডুবে থাকায় শুরুটাই দুর্বল।
ধোনির সিদ্ধান্ত: বাস্তববাদী নাকি সীমাবদ্ধ?
অধিনায়ক হয়েও ধোনি নিজেকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলছেন না। এটি তাঁর নিজের কমে আসা ক্ষমতার প্রতি সচেতনতা হতে পারে। তিনি বুঝতে পারেন, দীর্ঘ ইনিংস খেলার শক্তি তাঁর আর নেই। কিন্তু নিচে ব্যাট করায় তাঁর প্রভাব ক্ষীণ হয়ে পড়ছে। ধোনির ঝলক—যেমন ১৩ বলে ২৭ বা ১৬ বলে ৩০—দেখায় তাঁর আগুন এখনও জ্বলে, কিন্তু তা দলকে জয়ের তীরে ভেড়াতে পারছে না।
মূল দুর্বলতা: সিস্টেমের ফাটল
ধোনির বয়স একটি বিষয়, কিন্তু সিএসকের সংকটের কেন্দ্রে নয়। সমস্যা গভীর—বোলিংয়ে অসঙ্গতি, মিডল ওভারে ব্যাটিং ধস, এবং টপ অর্ডারের অতিরিক্ত চাপ। গায়কোয়াডের ইনজুরি টপ অর্ডারের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। রবীন্দ্রের ফর্মহীনতা এবং ক্রমাগত ব্যাটিং অর্ডারের পরিবর্তন দলের ছন্দ নষ্ট করছে। বোলাররা পাওয়ারপ্লেতে রান আটকাতে পারছেন না, ডেথ ওভারে ধারাবাহিকভাবে ব্যয়বহুল। এই সিস্টেমিক সমস্যাগুলো ধোনির নিয়ন্ত্রণের বাইরে।