ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL) ২০২৪-২৫-এর সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মোহনবাগান (Mohun Bagan) সুপার জায়ান্টের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। জামশেদপুর এফসির কাছে প্রথম লেগে ২-১ গোলে হেরে এখন ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে মেরিনার্সদের কাছে জয় ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। আগামীকাল, ৭ এপ্রিল, সল্টলেক স্টেডিয়ামে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ঘরের মাঠে সমর্থকদের উৎসাহকে কাজে লাগিয়ে দলকে অনুপ্রাণিত করতে চান কোচ হোসে মোলিনা। অন্যদিকে, জামশেদপুর এফসি তাদের প্রথম আইএসএল ফাইনালে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এই ম্যাচে ড্র বা জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে চায়।
ম্যাচের গুরুত্ব
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট
প্রথম লেগে জামশেদপুরে অপ্রত্যাশিত হারের পর মোহনবাগানের সামনে এখন কঠিন সমীকরণ। শেষ মুহূর্তে জাভি হার্নান্দেজের গোলে ২-১ গোলে হেরে মেরিনার্সরা পিছিয়ে রয়েছে। ফাইনালে ওঠার জন্য তাদের এই ম্যাচে কমপক্ষে দুই গোলের ব্যবধানে জিততে হবে, যাতে পেনাল্টি শুটআউটের ঝুঁকি এড়ানো যায়। এই মরসুমে লিগ শিল্ড জিতে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মোহনবাগানের কাছে এটি একটি সুযোগ আইএসএল ডাবল (লিগ শিল্ড ও কাপ) জয়ের। ঘরের মাঠে এই মরসুমে অপরাজিত থাকা দলটির ওপর সমর্থকদের প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া।
কোচ হোসে মোলিনার কাছে এই ম্যাচে আক্রমণাত্মক ফুটবলের পাশাপাশি রক্ষণে শক্তিশালী হওয়া জরুরি। প্রথম লেগে সুযোগ তৈরি করেও গোলে রূপান্তরে ব্যর্থতা এবং রক্ষণের ভুলের কারণে হারতে হয়েছিল। এবার জেসন কামিংস, জেমি ম্যাকলারেন ও লিস্টন কোলাকোর মতো তারকাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। একটি বড় জয় শুধু ফাইনালে পৌঁছানোর পথই খুলবে না, দলের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে তুলবে। তবে ঘরের মাঠে হারলে এই দারুণ মরসুমটি তিক্ততার সঙ্গে শেষ হতে পারে।
জামশেদপুর এফসি
জামশেদপুর এফসি এই মরসুমে কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসেবে সেমিফাইনালে পৌঁছেছে। কোচ খালিদ জামিলের নেতৃত্বে দলটি ঠিক সময়ে ফর্মের শীর্ষে উঠেছে। প্রথম লেগে মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে তারা প্রমাণ করেছে যে তারা আসল ‘জায়ান্ট কিলার’। তবে কাজ এখনও শেষ হয়নি। কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের ইনজুরি ও সাসপেনশন সত্ত্বেও তাদের এই ম্যাচে সেরাটা দিতে হবে।
খালিদ জামিলের কৌশল হবে রক্ষণে শক্ত থেকে কাউন্টার-অ্যাটাক ও সেট-পিস থেকে সুযোগ কাজে লাগানো। মোহনবাগানের আক্রমণভাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে জাভি হার্নান্দেজ ও রেই তাচিকাওয়ার মতো খেলোয়াড়দের। একটি ড্র বা জয় তাদের প্রথমবারের মতো আইএসএল ফাইনালে নিয়ে যাবে, যা দলের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হবে। তবে হারলে সাম্প্রতিক সাফল্যগুলো ম্লান হয়ে যেতে পারে।
দলের খবর ও ইনজুরি
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের জন্য সুখবর হল মানবীর সিং এবং লালেংমাওয়া রাল্তে এই ম্যাচে ফিরতে পারেন। তাদের উপস্থিতি দলের মাঝমাঠ ও আক্রমণে গভীরতা যোগ করবে। অন্যদিকে, জামশেদপুর এফসির জন্য ইনজুরির সমস্যা রয়েছে। প্রতীক চৌধুরী ইনজুরিতে পড়েছেন, জাভিয়ের সিভেরিওরও ইনজুরির সমস্যা রয়েছে। এছাড়া অশুতোষ মেহতা ও স্টিফেন এজে সাসপেন্ডেড থাকায় দলের রক্ষণে চাপ বাড়তে পারে।
সম্ভাব্য লাইনআপ
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (৪-২-৩-১):
বিশাল কৈথ (গোলরক্ষক), আশিস রাই, টম অল্ড্রেড, আলবার্তো রদ্রিগেজ, সুভাশিস বোস, লালেংমাওয়া রাল্তে, দীপক তাংড়ি, মানবীর সিং, জেসন কামিংস, লিস্টন কোলাকো, জেমি ম্যাকলারেন।
জামশেদপুর এফসি (৪-৩-১-২):
আলবিনো গোমেস (গোলরক্ষক), নিখিল বার্লা, প্রণয় হালদার, লাজার সিরকোভিচ, মুহাম্মদ উভাইস, রেই তাচিকাওয়া, সৌরভ দাস, মোহাম্মদ সানান, জাভি হার্নান্দেজ, ঋত্বিক দাস, জর্ডান মারে।
মূল খেলোয়াড়
জেমি ম্যাকলারেন (মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট):
প্রথম লেগে বেঞ্চে থাকা জেমি ম্যাকলারেন এবার শুরু থেকে মাঠে নামতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ান এই ফরোয়ার্ড গত চারটি ম্যাচে পাঁচটি গোল করেছেন। তার অভিজ্ঞতা ও গোল করার ক্ষমতা এই ম্যাচে মোহনবাগানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। জামশেদপুরের রক্ষণকে ভাঙতে তার চতুরতা ও শটের নিখুঁততা কাজে লাগাতে হবে।
রেই তাচিকাওয়া (জামশেদপুর এফসি):
জাপানি মিডফিল্ডার রেই তাচিকাওয়া এই ম্যাচে জামশেদপুরের জন্য নেতৃত্ব দেবেন। মাঝমাঠে তিনি রক্ষণকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি আক্রমণে সাহায্য করেন। মোহনবাগানের মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ রুখতে তার সময়োচিত ট্যাকল ও বুদ্ধিদীপ্ত পাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মজার তথ্য
- মোহনবাগান এই মরসুমে সল্টলেক স্টেডিয়ামে টানা ১১টি ম্যাচ জিতেছে।
- জামশেদপুরের গোলরক্ষক আলবিনো গোমেস এই মরসুমে ৯৫টি সেভ করেছেন, যা আইএসএল-এ সর্বোচ্চ।
- মোহনবাগান ২০২৪-২৫ মরসুমে ৪৮টি গোল করেছে, যা লিগে সবচেয়ে বেশি।
সম্প্রচারের বিবরণ
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও জামশেদপুর এফসির মধ্যকার এই ম্যাচটি সল্টলেক স্টেডিয়ামে ৭ এপ্রিল, সোমবার রাত ৭:৩০-এ শুরু হবে। ম্যাচটি স্টার স্পোর্টস ২-এ সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এবং জিও হটস্টারে লাইভ স্ট্রিমিং করা হবে। আন্তর্জাতিক দর্শকরা ওয়ানফুটবল অ্যাপে খেলাটি দেখতে পারবেন।
এই ম্যাচটি মোহনবাগানের জন্য একটি ‘করো বা মরো’ পরিস্থিতি। ঘরের মাঠে সমর্থকদের সমর্থন নিয়ে তারা কি ফিরে আসতে পারবে? নাকি জামশেদপুর এফসি ইতিহাস গড়ে ফাইনালে উঠবে? উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামীকাল পর্যন্ত।