বেঙ্গালুরুর সামনে মোহনবাগানের শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ

Kolkata, ১১ এপ্রিল ২০২৫: ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত এসে পৌঁছেছে। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার বিখ্যাত সল্টলেক স্টেডিয়ামে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL 2025) ২০২৪-২৫ মরশুমের ফাইনালে…

Mohun Bagan,Bengaluru FC, ISL 2025 Final

Kolkata, ১১ এপ্রিল ২০২৫: ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত এসে পৌঁছেছে। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার বিখ্যাত সল্টলেক স্টেডিয়ামে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL 2025) ২০২৪-২৫ মরশুমের ফাইনালে মুখোমুখি হবে বেঙ্গালুরু এফসি এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan vs Bengaluru FC)। এই ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি তাদের ২০২২-২৩ মরশুমের ফাইনালে মোহনবাগানের কাছে হারের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া। সেই ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে মোহনবাগান ২-২ গোলের ড্রয়ের পর জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। এবার জেরার্ড জারাগোজার নেতৃত্বে বেঙ্গালুরু এফসি চায় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি রুখে নতুন এক অধ্যায় লিখতে।

ফাইনালের পথে বেঙ্গালুরু এফসি

বেঙ্গালুরু এফসির ফাইনালে পৌঁছানোর যাত্রা ছিল দৃঢ়তা, কৌশল এবং বড় ম্যাচে নিজেদের প্রমাণ করার অদম্য মনোভাবের এক দুর্দান্ত উদাহরণ। প্লে-অফ রাউন্ডে তারা মুম্বাই সিটি এফসিকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে। এরপর সেমিফাইনালে এফসি গোয়ার বিপক্ষে প্রথম লেগে ২-০ গোলে জয় পায়। দ্বিতীয় লেগে ২-১ গোলে হারলেও, অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর স্টপেজ টাইমে করা গোল তাদের ৩-২ গোলের অ্যাগ্রিগেটে ফাইনালে নিয়ে যায়। এটি বেঙ্গালুরু এফসির চতুর্থ আইএসএল ফাইনাল। লিগ পর্বে মোহনবাগানের বিপক্ষে তারা কান্তীরাভা স্টেডিয়ামে ৩-০ গোলে জয় পায়, যদিও সল্টলেকে মোহনবাগান ১-০ গোলে জিতেছিল।

জারাগোজা তার প্রি-ম্যাচ প্রেস কনফারেন্সে বলেন, “আমরা ফাইনালের জন্য প্রস্তুত। ছেলেরা উদ্দীপিত এবং মেজাজে আছে। ফাইনালে খেলার জন্য বেশি মোটিভেশনের দরকার হয় না। আমি সত্যিই এই ট্রফিটা আবার জিততে চাই।” জারাগোজা ২০১৯ সালে কার্লেস কুয়াদ্রাতের সহকারী কোচ হিসেবে বেঙ্গালুরু এফসির সঙ্গে আইএসএল জয়ের সাক্ষী ছিলেন। এবার তিনি প্রধান কোচ হিসেবে সেই সাফল্য পুনরাবৃত্তি করতে চান।

বেঙ্গালুরুর শক্তি

বেঙ্গালুরু এফসির আক্রমণভাগে রয়েছে তিন মারাত্মক অস্ত্র—স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড এডগার মেন্ডেজ (৯ গোল, ৪ অ্যাসিস্ট), অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী (১৪ গোল, ২ অ্যাসিস্ট) এবং রায়ান উইলিয়ামস (৭ গোল, ৪ অ্যাসিস্ট)। মেন্ডেজ নকআউট পর্বে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন, আর ছেত্রীর বড় ম্যাচে গোল করার অভ্যাস তাকে দলের জন্য অমূল্য করে তুলেছে। জর্জ পেরেইরা ডিয়াজও ফরোয়ার্ড লাইনে আরেকটি গতিশীল বিকল্প।
মাঝমাঠে আলবার্তো নোগুয়েরা (৫ গোল, ৪ অ্যাসিস্ট) খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং সুযোগ তৈরি করেন। সুরেশ ওয়াংজাম এবং পেদ্রো কাপোর মতো খেলোয়াড়রা রক্ষণে দৃঢ়তা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম নিয়ে আসেন। রক্ষণভাগে রাহুল ভেকে এবং চিংলেনসানা সিং নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যখন নওরেম রোশন সিং এবং নামগ্যাল ভুটিয়া আক্রমণে প্রস্থ যোগ করছেন। গোলপোস্টে গুরপ্রীত সিং সান্ধু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দুর্দান্ত সেভ করে দলের শক্ত ভিত হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।

মোহনবাগানের শক্তি

অন্যদিকে, লিগ শিল্ড জয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট তাদের ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য। তাদের আক্রমণভাগে জেমি ম্যাকলারেন (১১ গোল) এবং জেসন কামিংস (৬ গোল, ৬ অ্যাসিস্ট) ধারাবাহিকভাবে গোল করে চলেছেন। ডিফেন্ডার সুভাশিষ বোসও ৬টি গোল করে অবাক করেছেন। মাঝমাঠে লালেংমাওয়িয়া ‘আপুইয়া’ রাল্টে এবং অনিরুদ্ধ থাপার মতো খেলোয়াড়রা দলের ভারসাম্য রক্ষা করছেন। সেমিফাইনালে জামশেদপুর এফসির বিপক্ষে আপুইয়ার শেষ মুহূর্তের গোল মোহনবাগানকে ৩-২ অ্যাগ্রিগেটে জয় এনে দেয়।

উভয় দলের ইতিহাস

বেঙ্গালুরু এবং মোহনবাগানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম আকর্ষণীয় লড়াই। ২০২২-২৩ মরশুমের ফাইনালে মোহনবাগানের কাছে পেনাল্টিতে হারের ক্ষত বেঙ্গালুরুর মনে এখনও তাজা। তবে এবার তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। জারাগোজার কৌশলগত পরিকল্পনা এবং ছেত্রীর নেতৃত্বে বেঙ্গালুরু চায় সল্টলেকে মোহনবাগানের দুর্গ ভাঙতে।

Advertisements

অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর ভূমিকা

ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী এই ম্যাচে বেঙ্গালুরুর জন্য সবচেয়ে বড় প্রেরণা। ১৪ গোল নিয়ে তিনি দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। সেমিফাইনালে গোয়ার বিপক্ষে তার শেষ মুহূর্তের গোল বেঙ্গালুরুকে ফাইনালে তুলেছে। ছেত্রীর শান্ত মাথা এবং বড় মঞ্চে পারফর্ম করার ক্ষমতা তাকে ফাইনালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

সমর্থকদের ভূমিকা

জারাগোজা তার সমর্থকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের ফ্যানরা গুয়াহাটি, জামশেদপুর—প্রতিটি ম্যাচে আমাদের সঙ্গে ভ্রমণ করেছেন। তারা আমাদের সমর্থন দিয়ে এখানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন। তারা কাল ভালো ফুটবলের যোগ্য। আমরা যত বেশি গোল করব, ততই ভালো।” মোহনবাগানের সমর্থকরাও সল্টলেক স্টেডিয়ামকে সবুজ-মেরুন রঙে রাঙিয়ে তুলবেন, যা ম্যাচের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

ম্যাচের সময় ও সম্প্রচার

ফাইনাল ম্যাচটি শনিবার, ১২ এপ্রিল, সন্ধ্যা ৭:৩০-এ সল্টলেক স্টেডিয়ামে শুরু হবে। ম্যাচটি স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্কে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এবং জিও হটস্টারে লাইভ স্ট্রিম করা যাবে।

এই ফাইনাল শুধু একটি ট্রফির লড়াই নয়, এটি দুই ফুটবল পাওয়ার হাউসের সম্মান, গর্ব এবং ইতিহাসের লড়াই। বেঙ্গালুরু এফসি তাদের হারানো শিরোপা ফিরিয়ে আনতে চায়, আর মোহনবাগান তাদের ঘরের মাঠে আধিপত্য বজায় রাখতে মরিয়া। কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এটি হবে একটি অবিস্মরণীয় সন্ধ্যা, যেখানে ফুটবলের জাদু ছড়িয়ে পড়বে সল্টলেকের প্রতিটি কোণে।