ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) ইতিহাসে যদি সবচেয়ে সফল কোচের নাম খোঁজা হয়, তাহলে আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের (Antonio Lopez Habas) নামটি উঠে আসবে সবার আগে। শুধু সংখ্যার বিচারে নয়, কৌশলগত মেধা, দলগঠনের ক্ষমতা এবং মাঠে-অমাঠে নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তিনি হয়ে উঠেছেন ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম শ্রদ্ধেয় নাম। তাঁর কোচিংয়ে ভারতীয় ফুটবল (Indian Football) এক নতুন চেহারা পেয়েছে।
২০১৪ সালে আইএসএলের প্রথম সংস্করণেই আত্মপ্রকাশ করেন এই স্প্যানিশ কোচ। শুরুটা হয়েছিল এটিকে এফসির সঙ্গে। আর সেই শুরুতেই বাজিমাত করেন হাবাস। প্রথম মরসুমেই ট্রফি ( ISL Trophy) জিতে তাঁর দলকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেন। তখন থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ভারতীয় ফুটবলে হাবাস এসেছেন শুধু অংশ নিতে নয়, ইতিহাস গড়তে।
শুরু থেকেই ছাপ
২০১৪ সালে যখন এটিকে এফসির কোচ হিসেবে হাবাস আসেন, তখন অনেকেই সন্দিহান ছিলেন তাঁর সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু খুব দ্রুত তিনি দলকে একত্রিত করে কৌশলগতভাবে গুছিয়ে নেন। তাঁর রক্ষণভিত্তিক বাস্তববাদী কৌশল এবং প্রতিআক্রমণের পরিকল্পনা অল্প সময়েই সফল প্রমাণিত হয়। প্রথম মরসুমেই এটিকে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়। তার পরের বছরও তিনি প্লে-অফে দলকে পৌঁছে দেন, যদিও সেমিফাইনালে পরাজয় মানতে হয়।
২০১৬ সালে হাবাস দায়িত্ব নেন এফসি পুনে সিটির। যদিও এই দলকে তিনি সেরা চারে তুলতে পারেননি, তবে তাঁর ফুটবল দর্শন ও পদ্ধতির ছাপ স্পষ্ট ছিল। এর কিছু বছর পর ২০১৯ সালে ফের ফিরে আসেন তাঁর পুরনো দল, এটিকে এফসিতে। তখনও সাফল্য অপেক্ষা করছিল তাঁর জন্য। দলকে দুর্বলতা কাটিয়ে ফের আইএসএল কাপ এনে দেন তিনি। এটিই ছিল তাঁর দ্বিতীয় আইএসএল শিরোপা এবং এটিকের তৃতীয়।
মোহনবাগান অধ্যায় ও চ্যালেঞ্জ
এটিকে ও মোহনবাগান ক্লাব মিলে তৈরি হয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG)। নতুন অবতারে হাবাস ফের দলের দায়িত্ব নেন। সেই মরসুমে তাঁর নেতৃত্বে মোহনবাগান লিগে দুরন্ত পারফর্ম করে ২০ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট অর্জন করে। যদিও মুম্বই সিটি এফসির কাছে সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে লিগ শিল্ড হাতছাড়া হয়। ফাইনালেও মুম্বইয়ের কাছেই হেরে যান তাঁরা। পরের মরসুমে দল খারাপ শুরু করায় হাবাস সম্পর্ক ছিন্ন করেন ক্লাবের সঙ্গে।
২০২৩–২৪ সিজনের মাঝপথে হাবাস ফের মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের কোচ হন। তখন ক্লাব চাপে ছিল, কোচ হুয়ান ফেরান্দোর অধীনে পরপর হারছিল তারা। এই সংকটে ফের ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠেন হাবাস। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে দল। তাঁর স্পর্শে ফের ছন্দ খুঁজে পায় ফুটবলাররা।
একটানা ১১টি লিগ ম্যাচে অপরাজিত থেকে দল পৌঁছে যায় লিগ শিল্ডের দোরগোড়ায়। অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত সেই ট্রফিও ঘরে ওঠে। এটিই ছিল হাবাসের আইএসএল ক্যারিয়ারের প্রথম লিগ শিল্ড ( ISL Shiled)। ফলে আইএসএলের সব ট্রফিই এবার তাঁর ঝুলিতে। যদিও কাপ ফাইনালে আবারও মুম্বইয়ের কাছে পরাজয় তাঁর ডাবল জয়ের স্বপ্ন অধরাই রাখে।
𝐓𝐡𝐞 𝐊𝐢𝐧𝐠 𝐨𝐟 𝐆𝐥𝐨𝐫𝐲! 👑
2️⃣x ISL Cup Winner 🏆🏆
1️⃣x ISL League Champion 🛡️#ISL #ISL10 #LetsFootball #MBSG #AntonioHabas | @mohunbagansg @Rambians @MdxOfficial2018 @ArenaMariners pic.twitter.com/tGsMDe8Asx— Indian Super League (@IndSuperLeague) April 16, 2024
কৌশলের কারিগর
অনেক কোচ পজিশন ফুটবলের সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলেন, হাবাস বরাবরই ফলপ্রসূ কৌশলে বিশ্বাসী। রক্ষণভাগের শৃঙ্খলা, মধ্যমাঠের সংগঠন ও ঝড়ের গতিতে প্রতি আক্রমণনা এই ত্রিপাদে দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর সাফল্যের ফাউন্ডেশন। তাঁর দলগুলো সর্বদা কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল, চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে হাবাস মানেই বাড়তি চাপ প্রতিপক্ষের জন্য।
‘দ্য হাবাস এফেক্ট’
হাবাস শুধু ট্রফি জেতেননি, তৈরি করেছেন এক উত্তরাধিকার, যা ভবিষ্যতের কোচদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর ছোঁয়া পেয়েই বহু ফুটবলার নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পেরেছেন। তাই আজ আইএসএল মানে শুধু ফুটবল নয়, ‘দ্য হাবাস এফেক্ট’র সাক্ষী থাকা। আইএসএলের ইতিহাসে এমন ধারাবাহিক সফল কোচ বিরল। আন্তোনিও লোপেজ হাবাস শুধু এক জন কোচ নন, ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।
Mohun Bagan SG former Coach Antonio Lopez Habas is most successfull ISL coach as Win two time ISL Trophy and ISL Shiled