আর্থিক সঙ্কটে ISL স্বপ্ন শেষ সাদা-কালো জায়ান্টসদের?

শতাব্দী প্রাচীন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মহামেডান স্পোর্টিং (Mohammedan SC) বর্তমানে গভীর আর্থিক অনটনের (Financial Problem) মুখে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে…

Mohammedan SC face financial problem

শতাব্দী প্রাচীন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মহামেডান স্পোর্টিং (Mohammedan SC) বর্তমানে গভীর আর্থিক অনটনের (Financial Problem) মুখে দাঁড়িয়ে। দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলেও, ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) টিকে থাকার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়েযাচ্ছে ক্লাব। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, আগামী মরসুমে মহামেডান আদৌ ISL-এ অংশ নিতে পারবে কিনা? তা নিয়ে জোরাল সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

অর্থনৈতিক অনিয়মের ধাক্কা

   

ইতিমধ্যেই ISL-এর আয়োজক সংস্থা ও ফুটবল ফেডারেশনের কাছে ক্লাবের নামে একাধিক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে। কোটি কোটি টাকার দেনা, খেলোয়াড় ও কোচদের বেতন বাকি থাকা এবং বিনিয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি নিয়ে জটিলতা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। বিশেষ করে ক্লাবের প্রাক্তন ইনভেস্টার ‘শ্রাচী’ গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা শর্ত অনুযায়ী কোনও শেয়ার না পেয়েও লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে এখন সব ছেড়ে চলে গিয়েছে। অপরদিকে, ক্লাব কর্তৃপক্ষ বলছে শেয়ার দেওয়ার কোনও লিখিত চুক্তি ছিল না।

ফলে দুই পক্ষের দোষারোপের মাঝখানে পড়ে মহামেডানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমনকি ফিফা ও ফেডারেশন থেকে মোট ১২ কোটি টাকার জরিমানাও গুনতে হয়েছে খেলোয়াড়দের বেতন বকেয়া রাখার জন্য। এই মুহূর্তে ক্লাবের আর্থিক অবস্থার যা হাল, তাতে ভবিষ্যতে আর কোনও পেশাদার ফুটবলার ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইবেন কিনা, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

ISL-এর কঠোর আর্থিক নিয়ম

ISL এমন একটি প্রতিযোগিতা যেখানে ক্লাবগুলিকে নির্দিষ্ট আর্থিক মানদণ্ড মেনে চলতে হয়। খেলোয়াড়, কোচ ও স্টাফদের সময়মতো বেতন দেওয়া, কর ও লাইসেন্স সংক্রান্ত নথিপত্র ঠিক রাখা, এসব নিয়ম না মানলে ক্লাবকে নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয়। মহামেডান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকায় আগামী মরসুমে ISL খেলতে তাদের সম্মতি পাবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।

Advertisements

ফেডারেশনও এই বিষয়ে এখনও কোনও পরিষ্কার বার্তা দেয়নি। বরং সূত্র বলছে, ফেডারেশন মহামেডানের আর্থিক রিপোর্ট ও দল গঠনের বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে। তাই ক্লাব কর্তারা নিজেরাও নিশ্চিত নন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে।

একসময় যেই ক্লাব কলকাতা ময়দানে দাপিয়ে বেড়াত, আজ তারা বাঁচার লড়াইয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান যখন নতুন স্পনসর, পেশাদার ব্যবস্থাপনা ও শক্তিশালী দল গঠনের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ লিগে নিজেদের অবস্থান পাকা করছে, তখন তাদের প্রতিবেশী মহামেডান স্পোর্টিং সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হাঁটছে।

বর্তমানে ক্লাবের বেশিরভাগ কর্মকর্তা শুধুমাত্র বর্তমান দেনা মেটানোর দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন। ISL খেলার স্বপ্ন বা বড় কোনও পরিকল্পনা এই মুহূর্তে তাদের ভাবনাতেও নেই। বরং দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারাও চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

কলকাতা ময়দানে মহামেডান স্পোর্টিং শুধুমাত্র একটি ক্লাব নয়, এটি একটি আবেগ, একটি ইতিহাস। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সেই ইতিহাস যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। যদি আগামী দিনে সরকার, ফেডারেশন অথবা কোনও বড় কর্পোরেট স্পনসর ক্লাবের পাশে না দাঁড়ায়, তবে ISL তো দূরের কথা, জাতীয় স্তরে মহামেডানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাও কঠিন হয়ে পড়বে।