ভারতের অভিজ্ঞ পেসার মহম্মদ শামি (Mohammed Shami) ৩৬০ দিনের দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মাঠে ফিরেছেন এবং রঞ্জি ট্রফিতে (Ranji Trophy) বাংলার হয়ে বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন। ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামে বাংলার মুখোমুখি হওয়া ম্যাচে মধ্যপ্রদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় দিনে চার উইকেট নিয়ে তিনি নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছেন। প্রথম দিন উইকেটশূন্য থাকার পর দ্বিতীয় দিনে শামি চারটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন, যা বাংলাকে প্রথম ইনিংসে ৬১ রানের লিড পেতে সাহায্য করে।
এই ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে শামি মধ্যপ্রদেশের অধিনায়ক শুভম শর্মাকে মাত্র ৮ রানে আউট করেন। এরপর দ্রুতই তিনি মধ্যপ্রদেশের নিম্নক্রমের ব্যাটসম্যানদের একের পর এক আউট করে দলে প্রত্যাবর্তনের প্রমাণ দেন। অলরাউন্ডার সরণশ জৈনকে আউট করার পর টানা দুই বলের মধ্যে কুমার কার্তিকেয় এবং কুলওয়ন্ত খেজরোলিয়াকে ফিরিয়ে দেন। এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর শামি তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করেন এবং ক্যাপশনে লেখেন, “এই তো সবে শুরু! চলুন এই মৌসুমকে অবিস্মরণীয় করে তুলি।” ২০১৮ সালের পর এটি তাঁর প্রথম রঞ্জি ট্রফি ম্যাচ, যেখানে তিনি আবার বাংলার জার্সিতে খেলতে নামলেন।
Also Read | চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে ভারতের আলোচনায় রাজি না পাকিস্তান
শামি ইনস্টাগ্রামে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে লেখেন, “অবশেষে অপেক্ষার অবসান! ৩৬০ দিন পর আমি আবার মাঠে ফিরে এসেছি, আরও শক্তিশালী এবং জয়ের জন্য উদগ্রীব। বাংলার হয়ে রঞ্জিতে ৪ উইকেট নিয়েছি, আর এই তো শুরু। প্রতিটি বল, প্রতিটি উইকেট আমি আমার অনুরাগীদের জন্য উৎসর্গ করছি। তোমাদের ভালোবাসা আমার উচ্ছ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এই মৌসুমকে আমরা একসাথে স্মরণীয় করে তুলব!”
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সীমিত ওভারের দলে ফিরতে পারেন শামি
একটি পিটিআই রিপোর্ট অনুযায়ী, মহম্মদ শামি তাঁর রঞ্জি ট্রফি পারফরম্যান্সের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আসন্ন বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি সিরিজের জন্য ভারতীয় দলে ফিরতে পারেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের পর তাঁকে আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেখা যায়নি। ফাইনালের পর তিনি একটি গোড়ালির অস্ত্রোপচার করান, এবং পুনরুদ্ধারের সময় হাঁটুর চোটেও ভুগছিলেন। তবে এই ম্যাচের মাধ্যমে তিনি ফেরার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। দলের ম্যানেজমেন্ট চেয়েছিল তাঁর ফিটনেস পরীক্ষা করতে, তাই তাঁকে রঞ্জি ট্রফিতে খেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। শামি নিজে মনে করেন যে এই ম্যাচের মাধ্যমে তিনি সঠিক পথে আছেন এবং তাঁর পারফরম্যান্সে ফিটনেস পুনরুদ্ধার হয়েছে।
Also Read | অস্ট্রেলিয়ায় কোহলির পারফরম্যান্স নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ রবি শাস্ত্রী
একটি বিসিসিআই সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, “আসলে, শামিকে এই ম্যাচে খেলতে বলা হয়েছিল যাতে তাঁর ফিটনেস নিরীক্ষা করা যায় এবং পরবর্তী রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই টেস্ট সিজন শেষ হবে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পরের চার দিন পর শামি তাঁর হাঁটুতে কোনো ব্যথা অনুভব করেন কিনা। যদি এনসিএর মেডিকেল টিম তাঁর ফিটনেসে সবুজ সংকেত দেয়, তবে তিনি দ্বিতীয় টেস্টের আগেই দলে যোগ দেবেন।”
কেন শামির প্রত্যাবর্তন গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতের পেস আক্রমণে মহম্মদ শামির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁর বোলিংয়ের ধার এবং নিখুঁত লাইন-লেন্থ বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের জন্য সবসময়ই ভয়ের কারণ হয়ে থাকে। দীর্ঘ বিরতির পর তাঁর এই প্রত্যাবর্তন শুধু বাংলা দল নয়, গোটা ভারতীয় দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শক্তিশালী বোলিং লাইন-আপ নিয়ে নামতে চায়। শামি যদি ফিট থেকে সেরা ফর্মে থাকেন, তবে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি সিরিজে ভারতের জয়ের সম্ভাবনা আরো বৃদ্ধি পাবে।
শামির অভিজ্ঞতা ও বোলিং কৌশল
অস্ট্রেলিয়ার মতো পিচে শামির অভিজ্ঞতা মূল্যবান হতে পারে। বাউন্সি পিচে কিভাবে বল সুইং করাতে হয়, তার এক্সপার্টিজ প্রমাণিত। শামি জানেন কিভাবে চাপের মধ্যে নিজের বোলিং ধরে রাখতে হয় এবং কিভাবে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে নিজের সেরাটা দিতে হয়। তাঁর সঠিক লাইন ও লেন্থের উপর নিয়ন্ত্রণ ভারতীয় দলে তাঁকে অপরিহার্য করে তোলে। এজন্যই দলের ম্যানেজমেন্ট শামির ফিটনেস ফিরে পাওয়া নিয়ে আশাবাদী, যাতে তিনি দলের জন্য সেরা পছন্দ হিসেবে খেলতে পারেন।
Also Read | টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০,০০০ রানের মাইলফলকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
এমনকি, তাঁর দুর্দান্ত কামব্যাক প্রমাণ করেছে যে শামি এখনো একই রকম ক্ষুধার্ত এবং নিজের জায়গা ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁর এই প্রত্যাবর্তন ভারতীয় ক্রিকেটের ভক্তদের জন্য আনন্দের সংবাদ, এবং এই মৌসুমে তাঁর পারফরম্যান্স যেন ভারতীয় দলের সফলতার পথে সহায়ক হয়, সেই প্রত্যাশায় রয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।