ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে (Premier League) শিরোপার দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল লিভারপুল (Liverpool)। রবিবার তারা ম্যানচেস্টার সিটিকে (Manchester City) ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করে, এর মাধ্যমে তারা আর্সেনালের সাথে তাদের পয়েন্ট ব্যবধান বাড়িয়ে শীর্ষে ১১ পয়েন্টের লিড নিয়ে দাঁড়াল। গত মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারের পর, এই জয়ে লিভারপুলের জন্য আরও বড় একটি সাফল্য এসেছে। লিভারপুলের সেরা খেলোয়াড় মোহামেদ সালাহ এই ম্যাচে আবারও তার ক্লাসিক পারফরম্যান্স উপস্থাপন করেন।
সালাহ ৩০তম গোলটি করে লিভারপুলকে এগিয়ে নেন, এবং পরে ডোমিনিক সোবোসজলাইয়ের গোলের মাধ্যমে লিভারপুল ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এই জয়ে লিভারপুলের শিরোপা জয়ের পথ আরো এক ধাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ম্যানচেস্টার সিটির দুর্বলতা এবং লিভারপুলের কৃতিত্ব:
এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির জন্য এটি ছিল তাদের অষ্টম লিগ পরাজয়। তবে, সিটি এখনো চতুর্থ স্থানে রয়েছে এবং তারা পরবর্তী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্য শীর্ষ-পাঁচে অবস্থান নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী। সিটি খেলার দিক থেকে কিছু ভাল সুযোগ তৈরি করলেও, তাদের আক্রমণ ছিল অস্পষ্ট। তাছাড়া, আক্রমণভাগে তাদের বড় তারকা এর্লিং হালান্ডের অভাবও স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে।
অন্যদিকে, লিভারপুলের জন্য ম্যাচটি ছিল একটি চমৎকার সুযোগ। সালাহ তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার মাধ্যমে সিটি রক্ষণভাগকে বিপর্যস্ত করে তোলে। তার গোলটি ছিল এক নিখুঁত সেট-পিস থেকে। অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের কর্নারকে সোজোবসজলাই ফ্লিক করে সালাহর সামনে তুলে দেন এবং সালাহর শটটি নাথান আকের পায়ে লেগে গোলপোস্টের মধ্যে চলে যায়।
সালাহ’র অসাধারণ পারফরম্যান্স:
এ বছরের ২৫ গোল এবং ১৬ অ্যাসিস্টের সাথে সালাহ লিভারপুলের অন্যতম প্রধান আক্রমণাত্মক শক্তি হয়ে উঠেছেন। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ফলস্বরূপ লিভারপুল তার প্রতিদ্বন্দ্বী সিটির বিরুদ্ধে দারুণ এই জয়টি তুলে নিতে সক্ষম হয়।
লিভারপুল এই ম্যাচে নিজেদের আক্রমণাত্মক খেলার মাধ্যমে সিটি রক্ষণভাগে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। প্রথমার্ধে সালাহ আবারও একটি দুর্দান্ত বল লম্বা পাসে সোজোবসজলাইকে দিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন, যা সিটির গোলকিপার এডারসনকে পরাস্ত করে।
সিটির আক্রমণ এবং লিভারপুলের প্রতিরক্ষা:
এডারসনের কিছু দুর্দান্ত সেভের মাধ্যমে সিটি কিছু সুযোগ তৈরি করেছিল। তবে তাদের আক্রমণগুলো বেশিরভাগ সময় অদক্ষ ছিল এবং সিটির বেশ কিছু শট অ্যালিসনের গোলপোস্টের বাইরে চলে যায়। প্রথমার্ধের শেষে লিভারপুলের পক্ষে আরও একটি গোল হতে পারত, তবে সোজোবসজলাই একটি সঠিক সময়ে দৌড়াতে পারেননি এবং রক্ষণভাগে সিটির একটি দুর্দান্ত ট্যাকল তাকে গোল থেকে বঞ্চিত করে।
এই ম্যাচে লিভারপুলের রক্ষণও ছিল শক্তিশালী। সিটির আক্রমণ তীব্র হলেও, লিভারপুলের ডিফেন্ডাররা দক্ষতার সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষা দাঁড় করিয়েছে। ট্রেন্ট অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ড ও তার দলের সুরক্ষিত খেলা সিটির আক্রমণকে প্রতিহত করেছে। সিটির উইঙ্গার জেরেমি ডোকু লিভারপুলের রক্ষণভাগে কিছু প্রয়াস দেখালেও, তার পাস বা শট কোনওভাবেই কার্যকর হয়নি।
লিভারপুলের দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাক:
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে, লিভারপুল আরও কিছু দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাক তৈরি করেছিল। কোচ আর্নে স্লটের দল সিটির রক্ষণভাগে সহজেই আক্রমণ করে এবং আরও গোলের সুযোগ পায়। কুর্টিস জোন্স একটি তৃতীয় গোল করার চেষ্টা করেছিলেন, তবে ভিএআর দ্বারা অফসাইড ঘোষণা করা হয়। সোজোবসজলাইও আরও একটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন, তবে সিটির রক্ষণভাগে একটি দুর্দান্ত ট্যাকল তাকে আবার গোল থেকে বঞ্চিত করে। এছাড়া, লুইস ডিয়াজও বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত শট নেন, তবে এডারসন তার থেকে গোল বাঁচিয়ে দেন।
ভবিষ্যৎ এবং শিরোপা দৌড়:
এ জয়ের পর লিভারপুলের জন্য শিরোপা দৌড় এখন একদম কাছাকাছি। আরন স্লটের প্রথম মৌসুমেই লিভারপুল শিরোপার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই মৌসুমে তারা সত্যিকারভাবে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার দাবিদার হয়ে উঠেছে। ম্যানচেস্টার সিটি, যাদের চারটি লিগ শিরোপা জিতেছিল, তারা বর্তমানে আর শীর্ষে থাকতে পারছে না।
এখন লিভারপুলের জন্য পরবর্তী লক্ষ্য হবে শীর্ষস্থানে থাকার মাধ্যমে তাদের ইতিহাসে নবাগত লিগ শিরোপা অর্জন করা। আর সিটি, যদিও তারা এই মৌসুমে শিরোপা হারিয়েছে, তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাদের যাত্রা এবং শীর্ষ-পাঁচে স্থান অর্জন করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।