ফুটবল ম্যাচে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে খেলার ভিডিও ভাইরাল

মণিপুরের এক উদ্বেগজনক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় (Viral Video) তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, যা দেখে নেটিজেনরা চমকে উঠেছেন। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে যে, মণিপুরের এক গ্রামে ফুটবল খেলার…

Men Brandish Assault Rifles During Football Match in Manipur

মণিপুরের এক উদ্বেগজনক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় (Viral Video) তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, যা দেখে নেটিজেনরা চমকে উঠেছেন। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে যে, মণিপুরের এক গ্রামে ফুটবল খেলার সময় পুরুষরা তাদের হাতে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে মাঠে খেলছেন। এই দৃশ্যটি সম্পূর্ণভাবে বিস্ময়কর এবং ভীতিকর, যেখানে পুরুষরা ফ্লুরোসেন্ট সবুজ জার্সি ও কালো শর্টস পরিধান করে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে ফুটবল খেলছেন।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, খেলোয়াড়রা ফুটবল নিয়ে পা নাড়ানোর সময় এক হাতে তাদের রাইফেল ধরছে এবং মাঠের আশপাশে একটি বড় ভিড়ও উপস্থিত রয়েছে। এই ফুটবল ম্যাচটি মণিপুরের কংপোকপির গামনোমফাই গ্রামে, নোহজাং কিপগেন মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৩০০ জনের একটি দর্শকরা ম্যাচটি দেখতে উপস্থিত ছিলেন।

   

এই ফুটবল ম্যাচটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অংশ, যেখানে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী নৃত্য এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও ছিল। এমন একটি ঘটনায় বন্দুক বহন করে ফুটবল খেলা, যেখানে খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য একসাথে মিশে যায়, সামাজিক মিডিয়ায় ক্ষোভ এবং চিন্তা তৈরি করেছে।

ভিডিওটি প্রথম শেয়ার করেন মণিপুরের কংপোকপি জেলা থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার নাম্পি রোমিও হানসঙ, যিনি ইনস্টাগ্রামে এটি পোস্ট করেছিলেন। পরে তিনি ভিডিওটি মুছে দিয়ে, একই ম্যাচের একটি ছোট ভিডিও পোস্ট করেন যেখানে খেলোয়াড়রা রাইফেল ছাড়া ফুটবল খেলছিলেন, কিন্তু আগের ভিডিওটি ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, খেলোয়াড়রা অ্যাসল্ট রাইফেল বহন করছে, বিশেষ করে এ কে সিরিজ এবং এম সিরিজ রাইফেল, যা স্থানীয় কুকি মিলিট্যান্টদের হাতে ব্যবহৃত হতে পারে। কিছু রাইফেলে লাল রিবনও বাঁধা ছিল, যা কুকি ন্যাশনাল ফ্রন্ট (প) বা KNF-P গ্রুপের সদস্যরা সাধারণত ব্যবহার করে। এই ভিডিওটি মণিপুরের মেইটাই হেরিটেজ সোসাইটির পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছিল এবং তারা কর্তৃপক্ষকে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল।

মেইটাই হেরিটেজ সোসাইটির পক্ষ থেকে এক টুইটে বলা হয়, “মণিপুরে এই ফুটবল টুর্নামেন্টের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যা গভীরভাবে উদ্বেগজনক, তা হলো ফুটবলারদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রকাশ। অথবা এটা কি কুকি মিলিট্যান্টদের ফুটবল টুর্নামেন্ট?” তারা আরও যোগ করেছে, “আমরা কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই অস্ত্রের প্রদর্শন নিয়ে তদন্ত শুরু করুন।”

এই ভিডিওটি গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ ভাইরাল হয়, এবং ইতিমধ্যে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এসেছে। এই ভিডিওটি মণিপুরের চলমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রাজ্যটি গত বছরের মধ্যে মেইতাই এবং কুকি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে এক বৃহত্তর সহিংসতার শিকার হয়, যা জাতীয় স্তরে আলোচনা সৃষ্টি করেছিল। মণিপুরে দুইটি প্রধান উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষের কারণে বিশাল সংখ্যক পরিবার তাদের বাড়িঘর হারিয়ে বা নিরাপত্তার কারণে স্থানান্তরিত হয়েছে।

মণিপুরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সমস্যা
মণিপুরে চলমান এই সহিংসতা মূলত মেইতাই সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত উপজাতি (Scheduled Tribe) হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবির কারণে সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৩ সালে মেইতাইদের জন্য সংরক্ষিত উপজাতি স্ট্যাটাস নিয়ে আদালত একটি রায় দেয়, যা কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধের কারণ হয়। এই ঘটনার পর রাজ্যে চরম সহিংসতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যার ফলে মণিপুরের অনেক এলাকা অশান্ত হয়ে পড়ে।

ফুটবল ম্যাচে অস্ত্র প্রদর্শন এই অঞ্চলের চলমান উদ্বেগ এবং সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একটি সাধারণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইভেন্টে বন্দুক নিয়ে অংশগ্রহণের ঘটনা নিরাপত্তা বাহিনী এবং সরকারকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। এমন পরিস্থিতি রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পূর্বের ঘটনার সাথে সম্পর্কিত উদ্বেগ
এটি প্রথমবার নয় যে, মণিপুরে অস্ত্রধারী মিলিট্যান্টদের উপস্থিতি ফুটবল বা অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে। এর আগেও কুকি মিলিট্যান্টদের অস্ত্র প্রদর্শন শোনা গেছে, তবে এই ধরনের ঘটনা এত প্রকাশ্যে ঘটছে, তা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

রাজ্য সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে এই ভিডিও এবং পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। স্থানীয় জনগণও এখন উদ্বিগ্ন, কারণ তারা জানে না যে, যখন তারা একটি খেলার মাঠে বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে, তখন সেখানে কী ঘটবে।

মণিপুরের এই ফুটবল ম্যাচের ভিডিওটি শুধুমাত্র রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, বরং দেশব্যাপী নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্ন তুলে ধরেছে। এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি এবং ঐক্যের বিকাশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। রাজ্য কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই এই ঘটনা এবং রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের জীবন নিরাপদ থাকে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়।