লাঙল চালিয়েও বাবার স্বপ্নপূরণে বিশ্বমঞ্চে দাপাচ্ছেন বাংলার মেয়ে

এক সময় বাবার সঙ্গে চাষের জমিতে লাঙল ধরতেন ছোট্ট মারুফা (Marufa Akter)। রোদ-ঝড় উপেক্ষা করে ধান কাটার মাঠেই গড়াগড়ি খেয়েছে তাঁর শৈশব। অথচ আজ তিনিই…

marufa-akter-from-farming-fields-to-womens-world-cup-2025-bangladesh-cricket-star

এক সময় বাবার সঙ্গে চাষের জমিতে লাঙল ধরতেন ছোট্ট মারুফা (Marufa Akter)। রোদ-ঝড় উপেক্ষা করে ধান কাটার মাঠেই গড়াগড়ি খেয়েছে তাঁর শৈশব। অথচ আজ তিনিই বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। শূন্য থেকে শুরু করে দেশের হয়ে বিশ্বমঞ্চে খেলছেন যিনি, সেই মারুফা আক্তারের (Marufa Akter) জীবন কাহিনি যেন সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়।

Advertisements

নাটোর জেলার এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম মারুফার (Marufa Akter)। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল এতটাই করুণ যে, অনেকসময় নতুন জামাকাপড়ও জুটত না তাঁর। ফলে আশপাশের মানুষদের কাছে অবহেলা আর তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়েছে তাঁর পরিবারকে। এমনকি সমাজের চোখে মেয়ের ক্রিকেট খেলা ছিল একধরনের “পাগলামি”।

Advertisements

সম্প্রতি আইসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুরোনো কষ্টের দিনগুলোর কথা শেয়ার করেন মারুফা। তিনি বলেন, “আমার বাবা পেশায় একজন কৃষক। আমাদের সংসারে প্রতিদিনের খাবার জোটানোও ছিল কষ্টকর। সেই পরিবার থেকে উঠে এসে বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা সত্যিই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “বাবা যখন বাজারে যেতেন, তখন মা’কে অনেক কথা শুনতে হত প্রতিবেশীদের কাছ থেকে। আমার ক্রিকেট খেলার কথা শুনে লোকে নানা রকম মন্তব্য করত। আমি চুপচাপ ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে কাঁদতাম। সেসব দিন এখনো ভোলার নয়।”

শুধু সমাজের চোখে অবহেলা নয়, আর্থিক সংকটও ছিল বড় বাঁধা। ভালো জামাকাপড় না থাকায় অনেক সময় বিয়ের নিমন্ত্রণও পেতেন না তাঁরা। সেই সময়কার অভিজ্ঞতা মনে করে এখনো চোখ ভিজে আসে মারুফার।

 

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

A post shared by Bangladesh Cricket : Tigers (@bangladeshtigers)

কিন্তু প্রতিকূলতাকে জয়ের গল্পটা এখানেই শুরু। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখে চলেছেন এই ডানহাতি পেসার। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ২৯টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং ৩০টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর এবার ২০২৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপেও জায়গা করে নিয়েছেন স্কোয়াডে।

শুধু দলের হয়ে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন মারুফা (Marufa Akter)। শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি পেসার লাসিথ মালিঙ্গাও তাঁর বোলিংয়ের প্রশংসা করে জানান, “মারুফার অ্যাকশন এবং লাইন-লেংথ অসাধারণ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে পারবে ও।” মারুফার এই লড়াইয়ের গল্প নিঃসন্দেহে আগামী দিনের তরুণ প্রজন্মকে সাহস দেবে। প্রমাণ করবে, প্রতিকূলতা থাকলেও যদি ইচ্ছাশক্তি থাকে, তাহলে কৃষকের মেয়েও বিশ্বজয় করতে পারে।