ডোনারুম্মাকে দলে জুড়ল ম্যানসিটি, এডারসন ফেনারবাচে-হইলুন্ড নাপোলিতে

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পাওয়ার হাউস ম্যানচেস্টার সিটি (Manchester City) ট্রান্সফার উইন্ডোর শেষ দিনে বড় ধরনের চমক দিয়েছে। প্যারিস সেন্ট-জার্মেই (পিএসজি)-এর ইতালিয়ান গোলকিপার জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মাকে ৩৫…

Manchester City Sign Donnarumma as Ederson Joins Fenerbahce, United's Hojlund to Napoli

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পাওয়ার হাউস ম্যানচেস্টার সিটি (Manchester City) ট্রান্সফার উইন্ডোর শেষ দিনে বড় ধরনের চমক দিয়েছে। প্যারিস সেন্ট-জার্মেই (পিএসজি)-এর ইতালিয়ান গোলকিপার জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মাকে ৩৫ মিলিয়ন ইউরো (৩০.৩ মিলিয়ন পাউন্ড) মূল্যে দলে ভিড়িয়েছে তারা। একই সঙ্গে, তাদের দীর্ঘদিনের প্রথম পছন্দের গোলকিপার এডারসন তুরস্কের ক্লাব ফেনারবাচেতে ১৪ মিলিয়ন ইউরো (১২.১ মিলিয়ন পাউন্ড) মূল্যে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন। অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ডেনিশ স্ট্রাইকার রাসমুস হইলুন্ড ইতালির সিরি এ চ্যাম্পিয়ন নাপোলিতে লোনে যোগ দিয়েছেন, এবং ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড অ্যান্টনি রিয়াল বেটিসে স্থায়ীভাবে চলে গেছেন। এই ট্রান্সফারগুলি ইউরোপীয় ফুটবলের বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ডোনারুম্মার ম্যান সিটিতে আগমন
২৬ বছর বয়সী জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মা পিএসজি-তে চারটি মৌসুম কাটিয়েছেন এবং গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে, পিএসজি-র কোচ লুইস এনরিকে তরুণ ফরাসি গোলকিপার লুকাস শেভালিয়েরকে দলে নেওয়ার পর ডোনারুম্মা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েন। তার চুক্তির মেয়াদ মাত্র এক বছর বাকি থাকায়, তিনি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরে অনিচ্ছুক ছিলেন। ম্যানচেস্টার সিটি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাকে দলে ভিড়িয়েছে। ডোনারুম্মা, যিনি ২০২১ সালে ইতালির হয়ে ইউরো জয়ে প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, এখন পেপ গার্দিওলার দলে নতুন অধ্যায় শুরু করবেন। তিনি ইতিমধ্যে ইতালির হয়ে ৭৪টি ম্যাচ খেলেছেন এবং পেনাল্টি শ্যুটআউটে অসাধারণ দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। তবে, তার পায়ের কাজ এডারসনের তুলনায় কিছুটা কম দক্ষ বলে বিবেচিত হয়, যা গার্দিওলার কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

   

এডারসনের বিদায়
ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এডারসন ২০১৭ সালে বেনফিকা থেকে ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিয়েছিলেন। আট বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ৩৭২টি ম্যাচে ১৬৮টি ক্লিন শিট রেখেছেন এবং ছয়টি প্রিমিয়ার লিগ, চারটি লিগ কাপ, দুটি এফএ কাপ এবং একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছেন। তার বিতরণ দক্ষতা এবং প্রিমিয়ার লিগে রেকর্ড আটটি অ্যাসিস্ট তাকে আধুনিক গোলকিপিংয়ের একটি মডেল করে তুলেছে। তবে, চলতি মৌসুমে তিনি একটি ম্যাচেও খেলেননি, এবং ফেনারবাচে তাকে ১৪ মিলিয়ন ইউরোতে দলে ভিড়িয়েছে। এই স্থানান্তর ম্যান সিটির গোলকিপিং বিভাগে একটি যুগের অবসান ঘটাল।

হইলুন্ডের নাপোলি যাত্রা
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্ট্রাইকার রাসমুস হইলুন্ড ২০২৫/২৬ মৌসুমের জন্য ইতালির চ্যাম্পিয়ন নাপোলিতে লোনে যোগ দিয়েছেন। ২০২৩ সালে আটালান্টা থেকে ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার পর তিনি ৯৫টি ম্যাচে ২৬টি গোল করেছেন। ২০২৩/২৪ মৌসুমে এফএ কাপ জয়ে তিনি বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন। তবে, ২০২৪/২৫ মৌসুমে মাত্র চারটি লিগ গোল করায় তিনি ইউনাইটেডে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েন। নাপোলির কোচ আন্তোনিও কন্তের অধীনে তিনি নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। চুক্তিতে ৪৪ মিলিয়ন ইউরোর একটি ক্রয় ধারা রয়েছে।

Advertisements

অ্যান্টনির রিয়াল বেটিসে স্থানান্তর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড অ্যান্টনি ২৫ মিলিয়ন ইউরোতে রিয়াল বেটিসে স্থায়ীভাবে যোগ দিয়েছেন। ২০২২ সালে অ্যাজাক্স থেকে ৮১.৩ মিলিয়ন ইউরোতে ইউনাইটেডে আসার পর তিনি ৬২টি প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে মাত্র পাঁচটি গোল এবং তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন। জানুয়ারিতে বেটিসে লোনে যোগ দেওয়ার পর তিনি সব প্রতিযোগিতায় নয়টি গোল করেন, যা তাকে স্থায়ী চুক্তির পথ দেখায়। চুক্তিতে ৫০% সেল-অন ক্লজ রয়েছে, যা ইউনাইটেডের জন্য ভবিষ্যতে লাভের সম্ভাবনা রাখে।

বাংলার প্রেক্ষাপটে তাৎপর্য
পশ্চিমবঙ্গে ফুটবলের বিশাল সমর্থক বেস রয়েছে, এবং ম্যানচেস্টার সিটি ও ইউনাইটেডের মতো ক্লাবগুলির এই ট্রান্সফারগুলি কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ডোনারুম্মার ম্যান সিটিতে যোগদান এবং হইলুন্ডের নাপোলি স্থানান্তর ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই ট্রান্সফারগুলি প্রিমিয়ার লিগ এবং ইউরোপীয় ফুটবলের প্রতিযোগিতায় নতুন গতিশীলতা আনবে।

ম্যানচেস্টার সিটি এবং ইউনাইটেডের এই ট্রান্সফার সিদ্ধান্তগুলি ২০২৫/২৬ মৌসুমে তাদের কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ডোনারুম্মার আগমন ম্যান সিটির গোলকিপিং বিভাগে নতুন মাত্রা যোগ করবে, যখন এডারসনের বিদায় একটি যুগের সমাপ্তি ঘটাবে। হইলুন্ড এবং অ্যান্টনির ইউনাইটেড থেকে প্রস্থান তাদের আক্রমণভাগে নতুন খেলোয়াড়দের জন্য পথ প্রশস্ত করেছে। এই স্থানান্তরগুলি ফুটবল বিশ্বে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে, এবং বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা এই পরিবর্তনগুলি নিয়ে উৎসাহের সঙ্গে আলোচনা করছে।