লুকার শেষ মুহূর্তের গোলে ডুরান্ডে স্বপ্নের সূচনা ডায়মন্ডের

‘মেঘ না চাইতেই জল’, প্রবাদ যেন নতুন অর্থ পেল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ডুরান্ড কাপে (Durand Cup 2025) মহামেডান স্পোর্টিং ও ডায়মন্ড হারবার এফসির ম্যাচে। ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেই…

Luka Majcen’s Last-Gasp Goal Powers Diamond Harbour FC to 2-1 Victory Over Mohammedan SC in Durand Cup 2025 Thriller

‘মেঘ না চাইতেই জল’, প্রবাদ যেন নতুন অর্থ পেল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ডুরান্ড কাপে (Durand Cup 2025) মহামেডান স্পোর্টিং ও ডায়মন্ড হারবার এফসির ম্যাচে। ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন অভিজ্ঞতা করেই সহজেই ম্যাচ পকেটস্থ করবে ডায়মন্ড হারবার এফসি। কিন্তু বাস্তব ছবিটা একটু আলাদা। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে নিজেদের জাত চেনাতে শুরু করে বিদেশিহীন ব্ল্যাক প্যান্থার্সরা। তবুও অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে বদলি লুকা মাজসেনের জয়সূচক গোলে ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে চমকে দিল কিছু ভিকুনার দল।

ম্যাচের শুরু থেকেই দুই দলই ছিল আক্রমণাত্মক। দ্বিতীয় মিনিটেই গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও তা নষ্ট করেন মহামেডানের লালথানকিমা। এরপরই ম্যাচে বাড়ে উত্তেজনা। ডায়মন্ডের পক্ষে ১০ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন দীনেশ মেইতেই। তবে এই কার্ড যেন দলকে আরও জেদি করে তোলে। একের পর এক আক্রমণে ম্যাচে ভারসাম্য আনতে চায় কিবু বিকুনার ছেলেরা।

   

তবে প্রথমে গোলের খাতা খোলে মহামেডানই। ৩৬ মিনিটে দুর্দান্ত একটি মুভ শেষ করেন অ্যাডিসন সিং। গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ১-০ ব্যবধানে। গোল পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে থাকে সাদা-কালো ব্রিগেড। তবে প্রথমার্ধে দ্বিতীয় গোল পেতে ব্যর্থ হয় তারা।

দ্বিতীয়ার্ধে ডায়মন্ড হারবারমাঠে নামে এক নতুন চেহারার। কোচ কিবু বিকুনা পরিবর্তন আনেন লাইনআপে। ক্লেন্টন সিলভেইরার পরিবর্তে নামানো হয় ইন্ডিয়ান সুপার লিগ অভিজ্ঞ লুকা মাজসেনকে, আর নরহরি শ্রেষ্ঠার জায়গায় নামেন স্যামুয়েল। এই দুটি পরিবর্তন যেন ম্যাচের চিত্রটাই বদলে দেয়।

৫০ মিনিটে লুকার বাড়ানো লং বল থেকে পল শট নিলেও তা প্রতিহত করেঊ মহামেডানের গোলকিপার শুভজিৎ ভট্টাচার্য। এরপর কর্নার থেকে স্যামুয়েলের বল হেড করে গোলে জড়িয়ে দেন সাইরুয়াতকিমা। সমতায় ফেরে ডায়মন্ড হারবার (১-১)। ম্যাচে উত্তেজনা তখন চরমে।

Advertisements

৫৩ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন ডায়মন্ডের জবি জাস্টিন। ম্যাচে ফের কিছুটা প্রাধান্য দেখাতে থাকে মহামেডান। কিন্তু গোলের সামনে গিয়ে একাধিকবার ব্যর্থ হন সজল বাঘ, লালথানকিমারা। বিশেষ করে ৮৪ মিনিটে সজলের দূরপাল্লার শট বাঁচিয়ে গোল রক্ষা করেন ডায়মন্ডের গোলরক্ষক মিরশাদ। ততক্ষণে স্পষ্ট হয়ে যায়, ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হবে শেষ মুহূর্তেই।

অবশেষে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে, যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচ ড্র হতে চলেছে। তখনই হিরো হয়ে ওঠেন লুকা মাজসেন। বাঁ দিক থেকে বল পেয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণের ফাঁক দিয়ে দুর্দান্ত শটে ম্যাচের জয়সূচক গোলটি করেন এই বিদেশি স্ট্রাইকার। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে ডায়মন্ড হারবার শিবির। স্কোরলাইন ২-১, তিন পয়েন্ট নিয়ে ডুরান্ডে স্বপ্নের সূচনা করল বাংলার নতুন তারকা দল।

তবে ম্যাচের সবচেয়ে হতাশাজনক দিক ছিল গ্যালারির চিত্র। ঐতিহ্যবাহী যুবভারতীতে উপস্থিত দর্শক সংখ্যা মাত্র ৫০০-১০০০। এক্ষেত্রে ডুরান্ডের মতো ঐতিহাসিক টুর্নামেন্টের জন্য একপ্রকার উদ্বেগেরই।

তবুও এই ম্যাচের মাধ্যমে প্রমাণিত হল, ডায়মন্ড হারবার শুধু নামেই নতুন। মাঠে তারা চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত যে কোনো দলকে। আর মহামেডানের সামনে প্রশ্নপরপর ব্যর্থতা থেকে কবে ঘুরে দাঁড়াবে শতাব্দীপ্রাচীন এই ক্লাব?