আইপিএল ২০২৫-এর (IPL 2025) সপ্তম ম্যাচে লখনউ সুপার জায়ান্টস (এলএসজি) সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে (এসআরএইচ) পাঁচ উইকেটে পরাজিত করে মরসুমের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে। রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে লখনউয়ের তারকা ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান এবং মিচেল মার্শের অসাধারণ ব্যাটিং প্রদর্শনের সঙ্গে শার্দুল ঠাকুরের দুর্দান্ত বোলিং দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই জয়ের ফলে লখনউ তাদের নেট রান রেটে উন্নতি করেছে এবং পয়েন্ট টেবিলে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে।
ম্যাচের শুরু: টস এবং লখনউয়ের সিদ্ধান্ত
ম্যাচের শুরুতে লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক ঋষভ পন্থ টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্তের পিছনে তাঁর যুক্তি ছিল যে, হায়দরাবাদের পিচে প্রথমে বোলিং করে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা যায় এবং পরে লক্ষ্য তাড়া করা সহজ হবে। পন্থ বলেন, “আমরা যে কোনও স্কোর তাড়া করতে পারি।”
হায়দরাবাদের ইনিংস: শার্দুলের ঘাতক বোলিং
সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ইনিংস শুরু হয় ট্রাভিস হেড এবং অভিষেক শর্মার ওপেনিং জুটি দিয়ে। কিন্তু শার্দুল ঠাকুরের বোলিং তাদের উদ্দীপনায় জল ঢেলে দেয়। তৃতীয় ওভারে শার্দুল প্রথমে অভিষেক শর্মাকে ৬ রানে আউট করেন এবং পরের বলেই ঈশান কিষাণকে গোল্ডেন ডাকের শিকার বানান। এই দুই বড় ধাক্কার পর হায়দরাবাদের ইনিংস কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে ট্রাভিস হেড ২৮ বলে ৪৭ রানের একটি আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলে দলকে লড়াইয়ে রাখেন। প্রিন্স যাদব তাঁকে বোল্ড করে হায়দরাবাদের আশায় আঘাত হানেন।
মাঝের ওভারে হেনরিক ক্লাসেন এবং নীতীশ কুমার রেড্ডি দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু শার্দুলের দিন ছিল অন্যরকম। তিনি অভিনব মনোহর এবং মোহাম্মদ শামিকে আউট করে হায়দরাবাদকে আরও চাপে ফেলে দেন। শেষ দিকে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ৪ বলে ১৮ রান এবং অনিকেত বর্মা ১৩ বলে ২৬ রান করে দলকে ১৯০/৯-এ পৌঁছে দেন। শার্দুল ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা বোলার হিসেবে আবির্ভূত হন।
লক্ষ্য তাড়া: পুরান এবং মার্শের বিস্ফোরক ব্যাটিং
১৯১ রানের লক্ষ্য নিয়ে লখনউয়ের ইনিংস শুরু করেন এইডেন মার্করাম এবং মিচেল মার্শ। প্রথম ওভারেই মার্করাম আউট হয়ে গেলেও মার্শ এবং নিকোলাস পুরান দ্বিতীয় উইকেটে ১১৬ রানের একটি অসাধারণ জুটি গড়ে তোলেন। পুরান ২৬ বলে ৭০ রানের একটি বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ৬টি চার এবং ৬টি ছক্কা। তাঁর ১৮ বলে অর্ধশতক ছিল ম্যাচের অন্যতম হাইলাইট। অন্যদিকে, মার্শ ৩১ বলে ৫২ রান করে (৭টি চার এবং ২টি ছক্কা) দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন।
পাওয়ারপ্লেতে লখনউ ৭৭ রান তুলে ফেলে, যা তাদের জয়ের ভিত শক্ত করে। পুরান অভিষেক শর্মার বিরুদ্ধে বিশেষভাবে আক্রমণাত্মক ছিলেন, তাঁর ওভারে একাধিক ছক্কা হাঁকিয়ে হায়দরাবাদের বোলারদের চাপে রাখেন। ৭ ওভারে লখনউয়ের স্কোর ছিল ৯৬/১, এবং পুরান তখনও আগুন ঝরাচ্ছিলেন।
ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট
১৪তম ওভারে প্যাট কামিন্স পুরানকে আউট করে হায়দরাবাদকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন। পুরানের পতনের পর মার্শও কামিন্সের শিকার হন। এই সময় লখনউয়ের স্কোর ছিল ১৬৩/৪, এবং তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৮ বলে ২৮ রান। ঋষভ পন্থ ১৫ রান করে হর্ষল পটেলের বলে আউট হন, যা হায়দরাবাদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু আব্দুল সমাদ, যিনি আগে হায়দরাবাদের হয়ে খেলেছেন, তিনি ৮ বলে ২২ রানের একটি দ্রুতগতির ইনিংস খেলে লখনউকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। সমাদের দুটি ছক্কা ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শেষ মুহূর্তের উত্তেজনা এবং জয়
১৬.১ ওভারে ডেভিড মিলার একটি চার মেরে লখনউকে জয়ের স্বাদ এনে দেন। মাত্র ২৪ বল বাকি থাকতেই লখনউ ১৯৩/৫-এ পৌঁছে যায়। হায়দরাবাদের বোলারদের মধ্যে প্যাট কামিন্স ২টি উইকেট নিলেও, তিনি ৪ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ব্যয়বহুল প্রমাণিত হন। আদম জাম্পা ৪ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন, যা তাঁর জন্যও একটি ভুলে যাওয়ার দিন হয়ে দাঁড়ায়।
ম্যাচের সেরা এবং পরিসংখ্যান
নিকোলাস পুরান তাঁর বিস্ফোরক ৭০ রানের জন্য ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। শার্দুল ঠাকুরের ৪/৩৪ তাঁকে পার্পল ক্যাপের দৌড়ে শীর্ষে নিয়ে যায়। লখনউয়ের দ্বিতীয় উইকেটে পুরান এবং মার্শের ১১৬ রানের জুটি এলএসজি-র ইতিহাসে দ্বিতীয় উইকেট বা তার নিচের জন্য সর্বোচ্চ জুটি হিসেবে রেকর্ড গড়ে।
এই জয়ের মাধ্যমে লখনউ সুপার জায়ান্টস তাদের আইপিএল ২০২৫ অভিযানে প্রথম পয়েন্ট অর্জন করেছে এবং হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে তাদের শক্তি প্রদর্শন করেছে। অন্যদিকে, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, যারা তাদের আগের ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ২৮৬ রানের বিশাল স্কোর করেছিল, এই ম্যাচে তাদের ব্যাটিং এবং বোলিং উভয় ক্ষেত্রেই লড়াই করতে দেখা গেছে। লখনউয়ের এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং আগামী ম্যাচগুলোতে তাদের আরও শক্তিশালী করে তুলবে।