ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (IPL) ক্রিকেটারদের জন্য একটি স্বপ্নের মঞ্চ। এই টি-টোয়েন্টি লিগ শুধুমাত্র ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্যই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত খেলোয়াড়দের জন্যও একটি সুবর্ণ সুযোগ প্রদান করে। এখানে সাফল্য পাওয়া মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের জায়গা তৈরি করার পথে একটি বড় পদক্ষেপ। ব্যাট হাতে হোক বা বল হাতে, আইপিএলে নিজেকে প্রমাণ করা সহজ কাজ নয়। তবে কিছু খেলোয়াড় এমন কীর্তি গড়েন যা ইতিহাসের পাতায় চিরকালের জন্য লেখা হয়ে যায়। এমনই এক কীর্তি হলো আইপিএল অভিষেকে প্রথম বলে উইকেট নেওয়া। সম্প্রতি, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (এমআই) তরুণ পেসার অশ্বনী কুমার এই তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করেছেন। তিনি এমআইয়ের তৃতীয় বোলার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন। আজ আমরা এই বিশেষ তালিকার সব বোলারদের নিয়ে আলোচনা করব।
অশ্বনী কুমারের ঐতিহাসিক শুরু
২০২৫ সালের আইপিএল মরশুমে অশ্বনী কুমার তার অভিষেক ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানেকে প্রথম বলে আউট করে সকলের নজর কাড়েন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলতে নেমে তিনি প্রমাণ করলেন যে তিনি ভবিষ্যতের একজন সম্ভাবনাময় তারকা। এই উইকেটের মাধ্যমে অশ্বনী এমন একটি তালিকায় প্রবেশ করলেন যেখানে ইতিমধ্যেই কিছু উল্লেখযোগ্য নাম রয়েছে। আইপিএলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত মোট ১০ জন বোলার তাদের অভিষেক ম্যাচে প্রথম বলে উইকেট নিয়েছেন। অশ্বনী এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন।
তালিকার শুরু: ইশান্ত শর্মা
এই কীর্তির ইতিহাস শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে, যখন প্রথম আইপিএল মরশুমে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) হয়ে খেলা ইশান্ত শর্মা তার প্রথম বলে উইকেট তুলে নেন। উদ্বোধনী ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়কে ক্লিন বোল্ড করে ইশান্ত ইতিহাস গড়েন। এই ঘটনা তাকে শুধুমাত্র কেকেআরের সমর্থকদের মনে প্রিয় করে তোলেনি, বরং ভারতীয় ক্রিকেটে তার ভবিষ্যতের পথও প্রশস্ত করে।
২০০৮ থেকে ২০২৫: একটি বিশেষ যাত্রা
ইশান্তের পর ২০০৮ সালেই আরেকটি নাম যুক্ত হয় এই তালিকায়। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের (বর্তমানে পাঞ্জাব কিংস) বোলার উইলকিন মোটা চেন্নাই সুপার কিংসের (সিএসকে) সুরেশ রায়নাকে প্রথম বলে আউট করেন। এরপর ২০০৯ সালে তিনজন বোলার একই কীর্তি গড়েন। শেন হারউড (রাজস্থান রয়্যালস) আজহার বিলাখিয়াকে, অমিত সিং (রাজস্থান রয়্যালস) সানি সোহলকে এবং চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট (কেকেআর) রব কুইনিকে আউট করে এই তালিকায় নাম লেখান।
২০১০ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের আলি মুর্তজা রাজস্থান রয়্যালসের নামান ওঝাকে আউট করে এমআইয়ের প্রথম বোলার হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। এরপর ২০১২ সালে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের (বর্তমানে দিল্লি ক্যাপিটালস) টিপি সুধিন্দ্র সিএসকের ফাফ ডু প্লেসিসকে প্রথম বলে আউট করেন। ২০১৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার আলজারি জোসেফ এমআইয়ের হয়ে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করে এই তালিকায় যুক্ত হন। ২০২২ সালে সিএসকের মাথিশা পাথিরানা গুজরাট টাইটান্সের শুভমান গিলকে আউট করে অভিষেকে প্রথম বলে উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
অশ্বনী কুমার: নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি
এবার ২০২৫ সালে অশ্বনী কুমার এই তালিকায় নিজের নাম লেখালেন। কেকেআরের অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানেকে আউট করে তিনি শুধু ম্যাচে এমআইকে এগিয়ে রাখেননি, বরং নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতেই একটি অবিস্মরণীয় ছাপ রেখেছেন। অশ্বনী এমআইয়ের তৃতীয় বোলার হিসেবে এই তালিকায় যুক্ত হলেন, আলি মুর্তজা ও আলজারি জোসেফের পরে।
সম্পূর্ণ তালিকা
নিচে আইপিএল অভিষেকে প্রথম বলে উইকেট নেওয়া বোলারদের সম্পূর্ণ তালিকা দেওয়া হলো:
• ২০০৮: ইশান্ত শর্মা (রাহুল দ্রাবিড়, কেকেআর বনাম আরসিবি)
• ২০০৮: উইলকিন মোটা (সুরেশ রায়না, পিবিকেএস বনাম সিএসকে)
• ২০০৯: শেন হারউড (আজহার বিলাখিয়া, আরআর বনাম ডিসি)
• ২০০৯: অমিত সিং (সানি সোহল, আরআর বনাম পিবিকেএস)
• ২০০৯: চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট (রব কুইনি, কেকেআর বনাম আরআর)
• ২০১০: আলি মুর্তজা (নামান ওঝা, এমআই বনাম আরআর)
• ২০১২: টিডি সুধিন্দ্র (ফাফ ডু প্লেসিস, ডিসি বনাম সিএসকে)
• ২০১৯: আলজারি জোসেফ (ডেভিড ওয়ার্নার, এমআই বনাম এসআরএইচ)
• ২০২২: মাথিশা পাথিরানা (শুভমান গিল, সিএসকে বনাম জিটি)
• ২০২৫: অশ্বনী কুমার (অজিঙ্কা রাহানে, এমআই বনাম কেকেআর)
আইপিএলের গুরুত্ব
আইপিএল শুধুমাত্র একটি বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি তরুণ প্রতিভাদের জন্য একটি লঞ্চপ্যাড। ইশান্ত শর্মা থেকে শুরু করে অশ্বনী কুমার পর্যন্ত, এই তালিকার প্রতিটি নামই প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভা থাকলে সাফল্য অনিবার্য। অশ্বনীর এই কৃতিত্ব ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। এই তালিকায় ভবিষ্যতে আরও কত নতুন নাম যুক্ত হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।