রোনাল্ডো তোলা GOAT বিতর্কে ‘বিস্ফোরক’ লিওনেল মেসি

ফুটবল জগতের কিংবদন্তি লিওনেল মেসি (Lionel Messi ) বছরের পর বছর ধরে তার অসাধারণ দক্ষতা দিয়ে বিশ্বজুড়ে সমর্থকদের মুগ্ধ করে এসেছেন। তিনি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত রেকর্ডই…

Lionel Messi GOAT Debate Ronaldo

ফুটবল জগতের কিংবদন্তি লিওনেল মেসি (Lionel Messi ) বছরের পর বছর ধরে তার অসাধারণ দক্ষতা দিয়ে বিশ্বজুড়ে সমর্থকদের মুগ্ধ করে এসেছেন। তিনি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত রেকর্ডই গড়েননি, ২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপ জিতে ফুটবলের সর্বোচ্চ সাফল্যও অর্জন করেছেন। তবে যখনই তাকে গ্রেটেস্ট অফ অল টাইম (GOAT) বিতর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হয় বা তিনি নিজেকে সর্বকালের সেরা মনে করেন কিনা, তিনি সবসময়ই বিনয়ী উত্তর দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি আবারও তাকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে, এবং তার উত্তর তার স্বভাবসুলভ নম্রতারই প্রতিফলন।

মেসির দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এই বিতর্কে সবসময় নিজেকে সর্বকালের সেরা ও সবচেয়ে সম্পূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে দেখে এসেছেন। সম্প্রতি তিনি নিজেকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে উল্লেখ করে মন্তব্য করেছেন। তবে মেসি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। বর্তমানে ইন্টার মিয়ামিতে খেলা এই আর্জেন্টাইন তারকাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি নিজেকে ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় মনে করেন কিনা, তিনি বলেন: “আমি কখনো এটা বলিনি, এটা ভেবেও দেখিনি বা এই বিষয়টির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করিনি। আমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে লোকেরা আমাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে দেখে বা আমার নাম উল্লেখ করে।”

মেসির ক্যারিয়ারে এমন কোনো ট্রফি নেই যা তিনি জিততে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগত পুরস্কারের ক্ষেত্রেও অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। তার আটটি ব্যালন ডি’অর জয় একটি অবিশ্বাস্য মাইলফলক। তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি এতবার এই সম্মানজনক পুরস্কার জিতেছেন। এই অর্জনগুলোই তাকে সর্বকালের সেরা হিসেবে বিবেচনা করার জন্য যথেষ্ট। তবুও, ফুটবল ভক্তদের মধ্যে মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মধ্যে কে GOAT তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকে, কারণ দুজনেই তাদের ক্যারিয়ারে অসাধারণ আধিপত্য দেখিয়েছেন।

মেসির ক্যারিয়ারের অর্জন
মেসির ক্যারিয়ার শুধুমাত্র গোল বা অ্যাসিস্টের পরিসংখ্যানে সীমাবদ্ধ নয়। বার্সেলোনার হয়ে তিনি অসংখ্য লিগ শিরোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতা জিতেছেন। আর্জেন্টিনার জার্সিতে তিনি ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা এবং ২০২২ সালে বিশ্বকাপ জিতে দেশের দীর্ঘদিনের শিরোপার খরা কাটিয়েছেন। তার খেলার ধরন, ড্রিবলিং দক্ষতা, পাসের নির্ভুলতা এবং গোল করার ক্ষমতা তাকে ফুটবলের শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

আটটি ব্যালন ডি’অর ছাড়াও মেসি অসংখ্য গোল্ডেন বুট, প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট এবং অন্যান্য পুরস্কার জিতেছেন। তার এই অর্জনগুলো তাকে ফুটবল ইতিহাসে একটি অনন্য স্থান দিয়েছে। তবুও, তিনি কখনো নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেননি, যা তার বিনয়ী ব্যক্তিত্বের প্রমাণ।

Also Read | বিতর্ক উসকে রোনাল্ডো নিজেকে ‘GOAT’ বলে দাবি 

GOAT বিতর্ক: মেসি বনাম রোনাল্ডো
মেসি ও রোনাল্ডোর মধ্যে বিতর্ক ফুটবল ভক্তদের মধ্যে একটি চিরন্তন আলোচনার বিষয়। রোনাল্ডো তার শারীরিক ক্ষমতা, গোল করার ধারাবাহিকতা এবং বিভিন্ন লিগে সাফল্যের জন্য পরিচিত। অন্যদিকে, মেসি তার সৃজনশীলতা, খেলার দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রাকৃতিক প্রতিভার জন্য বিখ্যাত। দুজনেই তাদের ক্যারিয়ারে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন, তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য এই বিতর্ককে আরও জমিয়ে তুলেছে।

Advertisements

রোনাল্ডো যেখানে নিজেকে সেরা বলে প্রকাশ্যে দাবি করেন, মেসি সেখানে নিজের খেলার মাধ্যমে উত্তর দিতে পছন্দ করেন। সমর্থকদের মধ্যে এই বিতর্ক চললেও, মেসি এই বিষয়ে কখনো মুখ খোলেননি। তার সাম্প্রতিক মন্তব্যে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে তার জন্য সমর্থকদের ভালোবাসা ও স্বীকৃতিই যথেষ্ট।

মেসির ভবিষ্যৎ
মেসির খেলোয়াড়ি জীবনে এখন বেশি সময় বাকি নেই। বর্তমানে তিনি ইন্টার মিয়ামিতে খেলছেন, যেখানে তিনি তার ক্যারিয়ারের শেষ পর্ব উপভোগ করছেন। তবে ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে তার অংশগ্রহণের সম্ভাবনা এখনও উড়িয়ে দেওয়া যায়নি। এই টুর্নামেন্ট যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোতে যৌথভাবে আয়োজিত হবে। মেসি যদি এই বিশ্বকাপে খেলেন, তবে তা তার ক্যারিয়ারের আরেকটি অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে।

সমর্থকদের দৃষ্টিকোণ
মেসির সমর্থকদের জন্য তিনি শুধু একজন খেলোয়াড় নন, একজন আবেগ। তার বিনয়ী মনোভাব এবং মাঠে অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে ফুটবলের একটি জীবন্ত কিংবদন্তি করে তুলেছে। রোনাল্ডোর সমর্থকরা যেখানে পরিসংখ্যান ও শিরোপার দিকে তাকান, মেসির সমর্থকরা তার খেলার সৌন্দর্য ও প্রভাবের প্রশংসা করেন।

শেষ পর্যন্ত মেসি নিজেকে GOAT বলে দাবি না করলেও, তার কৃতিত্ব ও প্রভাব তাকে এই মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি যেভাবে ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তাতে তার নাম ইতিহাসে চিরকালের জন্য লেখা থাকবে।