ফুটবলের ইতিহাসে (Football History) দুই নাম যেন চিরকালের জন্য পাশাপাশি লেখা থাকবে, লিওনেল মেসি (Lionel Messi) এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo)। গত দুই দশক ধরে এই দুই মহাতারকা ফুটবল বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন তাদের অতুলনীয় দক্ষতা, গোলের পর গোল এবং অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে। কে সেরা মেসি না রোনাল্ডো? এই প্রশ্নে বিভক্ত ফুটবল ভক্তরা। তবে মাঠের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে ভক্তদের কৌতূহলের শেষ নেই। সম্প্রতি লিওনেল মেসি নিজেই সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে স্পষ্ট করেছেন, রোনাল্ডোর প্রতি তার শ্রদ্ধা থাকলেও তারা ‘বন্ধু নন’।
ডি-স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, “ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর প্রতি আমার প্রচুর শ্রদ্ধা এবং মুগ্ধতা রয়েছে। তার দুর্দান্ত ক্যারিয়ার এবং এখনও শীর্ষ পর্যায়ে খেলে যাওয়ার ক্ষমতার জন্য আমি তাকে সম্মান করি। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধুই মাঠে। আমরা দুজনেই নিজ নিজ দলের জন্য সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মাঠের বাইরে আমরা সাধারণ মানুষ। আমরা বন্ধু নই, কারণ একসঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ আমাদের হয়নি। তবে আমরা সবসময় একে অপরকে সম্মান করেছি।”
মেসির এই বক্তব্য এসেছে রোনাল্ডোর এক সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে। কয়েক সপ্তাহ আগে রোনাল্ডো বলেছিলেন, “মেসির প্রতি আমার ভালোবাসা আছে। যদিও আমরা দীর্ঘদিন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম, তিনি আমাকে সবসময় সম্মান করেছেন, আর আমিও তাকে সম্মান করি।” এই পারস্পরিক শ্রদ্ধার কথা মেসিও স্বীকার করেছেন, তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে তাদের মধ্যে কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব নেই।
মেসি এবং রোনাল্ডোর এই দ্বৈরথ ফুটবলের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এল ক্লাসিকোতে তাদের লড়াই, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মুখোমুখি হওয়া এবং ব্যালন ডি’অরের জন্য প্রতিযোগিতা ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মেসি ৮টি এবং রোনাল্ডো ৫টি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন, যা তাদের অসাধারণ কৃতিত্বের প্রমাণ। তবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কখনো ব্যক্তিগত বিদ্বেষে রূপ নেয়নি। মেসির সাম্প্রতিক বক্তব্য সেই কথাই পুনর্ব্যক্ত করে—মাঠে লড়াই হয়, কিন্তু মাঠের বাইরে শ্রদ্ধাই প্রাধান্য পায়।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেও এই দুই তারকা আলোচনার শীর্ষে। মেসি ক্লাব বিশ্বকাপে ইন্টার মায়ামির হয়ে অসাধারণ ফ্রি-কিক গোল করে ইউরোপীয় ক্লাব পোর্তোর বিরুদ্ধে ২-১ গোলের ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছেন। এটি প্রথমবার যখন কোনো কনকাকাফ ক্লাব ফিফার অফিসিয়াল টুর্নামেন্টে ইউরোপীয় ক্লাবকে পরাজিত করল। এই জয় মেসির নেতৃত্বে ইন্টার মায়ামির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রমাণ।
অন্যদিকে, রোনাল্ডো পর্তুগালের জার্সিতে উয়েফা নেশন্স লিগের শিরোপা জিতেছেন। স্পেনের বিরুদ্ধে ফাইনালে ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে জয় পায় পর্তুগাল। ম্যাচে রোনাল্ডোর সমতাসূচক গোল তাকে আবারও আলোচনায় এনেছে। তবে ক্লাব বিশ্বকাপে রোনাল্ডোর ক্লাব আল-নাসর অংশ নিতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে এই টুর্নামেন্টে তাকে দেখা যায়নি।
মেসি-রোনাল্ডোর দ্বৈরথ আজ হয়তো আগের মতো তীব্র নয়। রোনাল্ডো সৌদি প্রো লিগে এবং মেসি মেজর লিগ সকারে খেলছেন, যা তাদের মুখোমুখি লড়াইয়ের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রভাব এবং জনপ্রিয়তা অটুট। ফুটবল ভক্তরা এখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা তর্ক করেন—কে সেরা? মেসির ফ্লুয়েন্ট ড্রিবলিং, প্লে-মেকিং, নাকি রোনাল্ডোর শক্তিশালী শট, অ্যাথলেটিসিজম এবং গোল-স্কোরিং ক্ষমতা? এই তর্কের কোনো শেষ নেই।
মেসির সাম্প্রতিক মন্তব্য তাদের সম্পর্কের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠে থাকলেও, মাঠের বাইরে তারা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বন্ধুত্ব না থাকলেও, পারস্পরিক সম্মান তাদের সম্পর্কের মূল ভিত্তি। এই শ্রদ্ধাই তাদের মহানতার প্রমাণ। ফুটবলের ইতিহাসে মেসি এবং রোনাল্ডোর নাম চিরকাল একসঙ্গে উচ্চারিত হবে, কখনো প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে, কখনো দুই কিংবদন্তি হিসেবে।
মেসির কথায় স্পষ্ট, তিনি এবং রোনাল্ডো মাঠে যতটা তীব্র, মাঠের বাইরে ততটাই সাধারণ। তাদের এই বিনয় এবং শ্রদ্ধা তাদের ক্যারিয়ারকে আরও উজ্জ্বল করে। ফুটবল বিশ্ব তাদের এই দ্বৈরথের জন্য কৃতজ্ঞ, যা খেলাটিকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে। মেসি এবং রোনাল্ডো—দুজনেই ফুটবলের ঈশ্বর, তবে তাদের পথ আলাদা এবং তাদের সম্পর্ক শ্রদ্ধার উপর প্রতিষ্ঠিত।
Lionel Messi respects Cristiano Ronaldo but says they are not friends