ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian football team) জন্য একটি বড় ধাক্কা। আসন্ন ফিফা মার্চ আন্তর্জাতিক উইন্ডো ২০২৫-এর আগে দলের তারকা ফরোয়ার্ড লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে (Lallianzuala Chhangte) চোটের কারণে ছিটকে গেছেন। এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর কোয়ালিফায়ারে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এবং মালদ্বীপের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচের আগে এই খবর ভারতীয় শিবিরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সৌদি আরবে ২০২৭ সালে অনুষ্ঠিতব্য এই মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেওয়ার লক্ষ্যে ভারতীয় দলের এই ম্যাচগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত রাউন্ডে কাতারের কাছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর, ব্লু টাইগার্সদের সামনে এখন কঠিন পরীক্ষা। শিলং-এ জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে প্রথমবার জাতীয় দলকে আতিথ্য দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে, এবং উৎসাহী সমর্থকদের জন্য পরিবেশ হয়ে উঠছে উত্তেজনাপূর্ণ। কিন্তু ছাংতের অনুপস্থিতি দলের আক্রমণভাগে বড় শূন্যতা তৈরি করেছে।
Also Read | চূড়ান্ত হল প্লে-অফের দিনক্ষণ, যুবভারতীতে বাগানের প্রতিপক্ষ এই দল!
লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে ভারতীয় ফুটবল দলের আক্রমণের একটি প্রধান স্তম্ভ। তাঁর অসাধারণ গতি, ড্রিবলিং দক্ষতা এবং গোল করার ক্ষমতা তাঁকে দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তুলেছে। মুম্বই সিটি এফসি-তে আইএসএল ম্যাচ খেলার সময় এই চোট পাওয়ার পর তিনি শিলং-এ জাতীয় শিবিরে যোগ দিতে পারছেন না। এই ঘটনা দলের প্রধান কোচ মানোলো মার্কেজকে তাঁর কৌশল নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। বাংলাদেশের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে আক্রমণে ধার বজায় রাখতে এখন বিকল্প খুঁজতে হবে ভারতকে।
মনবীর সিং কি আইএসএল ফর্ম জাতীয় দলে দেখাতে পারবেন?
ছাংতের জায়গায় একটি সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে উঠে আসছে মনবীর সিং-এর নাম। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের এই গতিশীল ফরোয়ার্ড এই মরশুমে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। তাঁর অবদানে মেরিনার্সরা আইএসএল শিল্ড জিতেছে এবং তাদের শিরোপা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। ডান প্রান্তে তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি, গতি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সুনিপুণ ক্রসিং প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে বিপাকে ফেলতে পারে। ছাংতের অনুপস্থিতিতে মনবীর ভারতীয় দলের জন্য এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন। তিনি প্রশস্ততা, সৃজনশীলতা এবং সরাসরি গোলের হুমকি প্রদান করতে সক্ষম। যদি তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়, তবে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে মনবীর নিজেকে ভারতের প্রধান উইঙ্গার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
মনবীর এর আগেও জাতীয় দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ২০২৩ সালে কুয়েতের বিরুদ্ধে ফিফা বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে তাঁর গোল ভারতকে একটি ঐতিহাসিক জয় এনে দিয়েছিল। তাঁর শারীরিক শক্তি এবং বল ধরে রাখার ক্ষমতা তাঁকে একটি বহুমুখী ফরোয়ার্ড করে তোলে। তবে, আইএসএল-এ ক্লাবের হয়ে তাঁর ধারাবাহিকতা জাতীয় দলে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি। এই ম্যাচগুলো তাঁর জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার।
ইমরান কি জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার যোগ্য?
জামশেদপুর এফসি-র উইঙ্গার ইমরান খানও এই সংকটে একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারেন। এই মরশুমে তিনি দলের পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কোচ খালিদ জামিলের অন্যতম ভরসার খেলোয়াড় হিসেবে ইমরান প্রায় প্রতিটি ম্যাচে শুরু থেকে খেলেছেন এবং ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তাঁর সুনিপুণ ক্রস এবং ফ্ল্যাঙ্কে ওভারল্যাপিং রান তাঁকে আক্রমণে একটি বিপজ্জনক অস্ত্র করে তুলেছে।
ইমরানের দৃষ্টিশক্তি এবং সৃজনশীলতা ভারতের খেলায় একটি অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করতে পারে। তিনি ফাইনাল থার্ডে সুযোগ তৈরি করতে পারেন এবং মিডফিল্ড ও ফরোয়ার্ডদের সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম। তাঁর পজিশনিং এবং মুভমেন্টের বোধ তাঁকে ছাংতের বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী প্রার্থী করে তুলেছে। যদিও ইমরান এখনও জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠেননি, তবে এই মরশুমে তাঁর ফর্ম তাঁকে একটি সুযোগ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তৈরি করে।
জিথিন এমএস শিলং-এ ঘরের মাঠের সুবিধা পাবেন
অন্যদিকে, নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র তরুণ তারকা জিথিন এমএসও একটি উত্তেজনাপূর্ণ বিকল্প। তাঁর গতিশীল খেলার ধরন, দ্রুত ফুটওয়ার্ক এবং আক্রমণাত্মক প্রবৃত্তি তাঁকে ফ্ল্যাঙ্কে একটি আকর্ষণীয় পছন্দ করে তুলেছে। জিথিনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল শিলং-এর জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের সঙ্গে তাঁর পরিচিতি। এই মরশুমে এই মাঠটি নর্থইস্ট ইউনাইটেডের দ্বিতীয় ঘরের মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এখানে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকায় জিথিন পিচের পরিস্থিতি ভালোভাবে বোঝেন। এই পরিচিতি তাঁকে একটি প্রভাবশালী পারফরম্যান্স দেখাতে সাহায্য করতে পারে। তাঁর গতি এবং একের পর এক ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করার ক্ষমতা প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ছাংতের অনুপস্থিতিতে জিথিন জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী দাবিদার।
ভারতীয় দলের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা
ছাংতের চোট ভারতীয় দলের জন্য একটি বড় ক্ষতি। তিনি গত কয়েক বছরে দলের আক্রমণের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছিলেন। ২০২৪ সালে কাতারের বিরুদ্ধে ফিফা বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে তাঁর গোল এবং ২০২৩ সালে কুয়েতের বিরুদ্ধে মনবীরের গোলে তাঁর অ্যাসিস্ট তাঁর গুরুত্ব প্রমাণ করে। তবে এই সংকট একটি সুযোগও হতে পারে অন্য খেলোয়াড়দের জন্য।
মানোলো মার্কেজের কাছে এখন দায়িত্ব নতুন কৌশল তৈরি করা। মনবীর, ইমরান এবং জিথিনের মতো খেলোয়াড়রা যদি তাদের ক্লাব ফর্ম জাতীয় দলে দেখাতে পারেন, তবে ভারত এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারে। শিলং-এ সমর্থকদের উৎসাহ এবং ঘরের মাঠের পরিবেশ দলকে অতিরিক্ত প্রেরণা দিতে পারে। বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপের বিরুদ্ধে এই ম্যাচগুলো ভারতের এশিয়ান কাপ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ছাংতের জায়গায় কে উঠে আসবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।