কলকাতা ডার্বির দিনে আগরতলায় মুখোমুখি ইস্ট-মোহন

চোখ রাঙাচ্ছে কলকাতা ডার্বি। আজ মরসুমের প্রথম বড় পরীক্ষা দুই প্রধানের। ডুরান্ড কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। তাই ডার্বি মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা,…

Kolkata Derby Meets Agartala: East Bengal vs Mohun Bagan Legends Clash in Durand Cup 2025

চোখ রাঙাচ্ছে কলকাতা ডার্বি। আজ মরসুমের প্রথম বড় পরীক্ষা দুই প্রধানের। ডুরান্ড কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। তাই ডার্বি মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আবেগ, রঙের লড়াই। কিন্তু দেখা যাবে না সাউল-দিমি কিংবা কামিন্স-ম্যাকলারেনদের। পুরনো ফুটবলাররা আবারও জার্সি গায়ে নামবেন মাঠে, কিন্তু এবার তাঁদের খেলা উপভোগ করবেন ত্রিপুরার দর্শকরা। ফলে একইদিনে ডুরান্ড ডার্বি এবং লেজেন্ডস ডার্বির সাক্ষী হতে চলেছে ফুটবলপ্রেমীরা।

ত্রিপুরা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (TFA) এবং শ্রাচী স্পোর্টসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রদর্শনী ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল ইস্ট-মোহনের দ্বৈরথ, কিন্তু এবার সেই আবেগ ভাগ করে নিচ্ছে ত্রিপুরা। ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগরতলার উমাকান্ত স্টেডিয়ামে।

   

ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে মাঠে দেখা যাবে মেহতাব হোসেন, আলভিটো ডি’কুনহা মতো তারকাদের। অন্যদিকে, মোহনবাগানের হয়ে খেলবেন রণজিৎ সিং, সঞ্জয় সেন, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যর মতো প্রাক্তন ফুটবলাররা। এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের কোচ হিসেবে থাকছেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, আর মোহনবাগান শিবিরের দায়িত্বে আছেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য।

আলভিটো-নবি একসঙ্গে কলকাতা থেকে আগরতলা পৌঁছে রয়েছেন একই ঘরে, তবে মাঠে নেমে যাবেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আলভিটো বলেন, “খেলার সময় আমি নবিকে চিনব না। ম্যাচ শেষে আমরা আবার বন্ধু হব।”

ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন তারকা ও কিংবদন্তি কোচ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য আজও সেই একই আবেগে ভেসে যান ডার্বির নাম শুনলেই। আগরতলার মাঠে নামার আগে জানান, “আসল ম্যাচ হোক বা প্রাক্তনদের খেলা, ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে চাপালেই আমি আর কাউকে চিনি না।” অন্য প্রান্তে, মোহনবাগানের হয়ে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। তাঁর গলায় একই জেদের সুর. তিনি বলেন, “মনাদাদের কাছ থেকেই শিখেছি, বড় ম্যাচ মানে অন্যরকম লড়াই। এখনও মাঠে নামলে মনে হয় জিততেই হবে।” দুই কোচের কথাতেই স্পষ্ট, সময় পাল্টালেও আবেগ পাল্টায়নি।

Advertisements

ত্রিপুরায় এই ধরনের বড় ফুটবল ইভেন্টের নজির বিরল। ফলে গোটা শহর এখন উৎসবের মেজাজে। উমাকান্ত স্টেডিয়ামের গ্যালারি ইতিমধ্যেই রঙে রঙিন, কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়েছে। হাজার হাজার দর্শক আজ উপস্থিত থাকবেন মাঠে, এমনটাই আশা করছেন আয়োজকরা।

ত্রিপুরা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি প্রণব সরকার বলেন, “এই ম্যাচ রাজ্যের ক্রীড়া সংস্কৃতিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বহু মানুষ, যাঁরা কলকাতার মাঠে ডার্বি দেখার সুযোগ পাননি, এবার নিজের চোখে দেখবেন সেই ঐতিহ্য। ডার্বির গুরুত্ব মাথায় রেখে ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচারিত হবে শ্রাচীর নিজস্ব অ্যাপে (SSEN)। ফলে রাজ্যের বাইরেও বসে সমর্থকরা উপভোগ করতে পারবেন এই ঐতিহাসিক ম্যাচ।

ম্যাচকে ঘিরে উন্মাদনার পাশাপাশি ভেসে উঠছে বহু পুরনো স্মৃতি। ১৯৭৭ নিজের প্রথম ডার্বিতে গোল করে ইস্টবেঙ্গলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন মিহির বসু। আজও সেই অভিজ্ঞতা তাঁর মনে গাঁথা। তাঁর কথায়, “ডার্বিতে কখন কী হবে বলা যায় না। আজও হয়ত নতুন কোনো নায়কের জন্ম হবে।”

ফুটবলপ্রেমীদের কাছে ডার্বি মানেই রঙের লড়াই, আবেগের বিস্ফোরণ। কলকাতায় যখন ডুরান্ড কাপের উত্তেজনায় মশগুল ময়দান, তখন আগরতলায়ও জমে উঠেছে স্মৃতির লড়াই। ত্রিপুরার ইতিহাসে এই ম্যাচ এক ‘মাইলস্টোন’। শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতের দিকেও তাকিয়ে আছে আজকের ডার্বি। কিংবদন্তিরা ফিরছেন মাঠে, আর ত্রিপুরার দর্শকরা পাচ্ছেন এক স্বপ্নময় সন্ধ্যা উপহার।