২০২৪-২৫ মরসুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে মহামেডান (Mohammedan SC)। যদিও কলকাতা (Kolkata) ময়দানের ঐতিহাসিক এই ক্লাবের জন্য এটি ছিল এক দুঃস্বপ্নের মত মরসুম। প্রাক্তন কোচ আন্দ্রে চেরনিশভের অধীনে আই-লিগ জয়ের পরে আশা ছিল অনেক, কিন্তু আইএসএলে তারা তালিকার একদম তলায় থেকে সিজন শেষ করে। ঘরের মাঠে একটি ম্যাচেও জয় না পাওয়ার লজ্জাজনক রেকর্ড গড়ে তারা।
কোচিংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরে, প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু এখন দলকে নতুন করে গড়ার চেষ্টা করছেন। এই প্রয়াসে তিন পজিশনে পরিবর্তন বা শক্তি বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করা হচ্ছে।
১. সেন্টার ফরোয়ার্ড
মহামেডান এসসির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল আক্রমণ ভাগে গোল করতে না পারা। পুরো সিজনে তারা মাত্র ১২টি গোল করেছে, যা আইএসএলের ইতিহাসে কোনো দলের সর্বনিম্ন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের উপস্থিতি থাকলেও কার্লোস ফ্রাঙ্কা, সিজার মানজোকি তেমন ভাবে
কেউই গোলের মুখ খুলতে পারেননি।
ডেভিড লালহলনসাঙ্গার বিদায়ের পর মহামেডানের আক্রমণভাগ কার্যত ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু চায় এমন একজন তরুণ সেন্টার ফরোয়ার্ড, যিনি ‘ডামি রানার’ হিসেবে খেলতে পারেন। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে আক্রমণ তৈরি করতে পারেন।
২. গোলকিপার
পুরো মরসুমে মহামেডান ৪৩টি গোল খেয়েছে, যার মধ্যে প্রথম গোলকিপার পদম ছেত্রী একাই ২৯টি গোল হজম করেছেন। যদিও তিনি ৫টি ক্লিন শিট রেখেছেন, কিন্তু কঠিন মুহূর্তে তার পারফরম্যান্স প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সুপার কাপের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে বদলি গোলকিপার শুভজিৎ ভট্টাচার্য খেললেও ৬ গোল খেয়ে যান।
এই পরিস্থিতিতে দলকে একজন শক্তিশালী দ্বিতীয় গোলকিপার দরকার, যিনি প্রয়োজন হলে পদম ছেত্রীকে বদলে আসতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এফসি গোয়ার হৃতিক তিওয়ারি একজন সম্ভাব্য বিকল্প। এছাড়া হায়দরাবাদ এফসির অর্শদীপ সিং ও পাঞ্জাব এফসির রবি কুমারকেও বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
৩. সেন্টার ব্যাক
মহামেডানের ডিফেন্সিভ তৃতীয়াংশ পুরো সিজন জুড়ে ছিল ভঙ্গুর। বিশেষ করে ম্যাচের ৮০ মিনিটের পর ডিফেন্স একেবারে ভেঙে পড়ে। সুপার কাপে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৬-০ ব্যবধানে হার প্রমাণ করে দেয় যে ডিফেন্সে বড় পরিবর্তন দরকার। ওই ম্যাচে উইংব্যাক বিকাশ সিং সেন্টার ব্যাকে খেলেন এবং তাতে দলের রক্ষণ একেবারে ভেঙে পড়ে।
অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে মহামেডান এসসির উচিত স্থানীয় প্রতিভা থেকে একজন উদীয়মান সেন্টার ব্যাককে দলে আনা। পাঞ্জাব এফসির যুব দল হতে পারে একটি ভালো উৎস।
মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস। ২০২৫-২৬ মরসুমে দলকে নতুনভাবে গড়তে হলে এই তিনটি পজিশনে দক্ষ ও তরুণ ফুটবলারদের অন্তর্ভুক্তি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। মেহরাজউদ্দিন ওয়াডুর অধীনে দলটি যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোয়, তাহলে আবারও জাতীয় পর্যায়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে ‘কালো সাদা ব্রিগেড’।