এলএসজি-কে হারিয়ে দিল্লির নায়ক হয়ে উঠলেন রাহুল

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (IPL 2025) ২০২৫-এর একটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে লখনউ সুপার জায়ান্টস (LSG)-এর বিরুদ্ধে দিল্লি ক্যাপিটালস DC) ৮ উইকেটের দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। লখনউয়ের একানা…

KL Rahul Stars As DC Crush LSG

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (IPL 2025) ২০২৫-এর একটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে লখনউ সুপার জায়ান্টস (LSG)-এর বিরুদ্ধে দিল্লি ক্যাপিটালস DC) ৮ উইকেটের দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ডিসি অধিনায়ক কেএল রাহুল তাঁর প্রাক্তন ফ্র্যাঞ্চাইজি এলএসজি’র বিরুদ্ধে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান। রাহুলের দ্রুতগতির হাফ-সেঞ্চুরি, অভিষেক পোরেলের ৫১ রান এবং অক্ষর প্যাটেলের অপরাজিত ৩৪ রানের সৌজন্যে ডিসি মাত্র ১৭.৫ ওভারে ১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় নিশ্চিত করে। অন্যদিকে, এলএসজি অধিনায়ক ঋষভ পন্থের জন্য এটি ছিল একটি হতাশাজনক দিন। তিনি ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন এবং ব্যাটিং অর্ডারে ৭ নম্বরে নামার সিদ্ধান্তের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েন।

এলএসজি প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রানের একটি মাঝারি স্কোর তুলতে সক্ষম হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা এইডেন মার্করাম ছিলেন এলএসজি’র একমাত্র উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ৩৬ বলে ৫০ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন এবং পরে বোলিংয়ে এসে ২টি উইকেট তুলে নেন। তবে, এলএসজি’র বাকি ব্যাটিং লাইন-আপ ডিসি’র বোলারদের সামনে টিকতে পারেনি। ঋষভ পন্থ মাত্র ১২ রান করে আউট হন, এবং তাঁর ব্যাটিং পজিশন নিয়ে সমর্থক ও বিশ্লেষকদের মধ্যে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। পন্থের এই সিদ্ধান্ত দলের মিডল অর্ডারের ভারসাম্য নষ্ট করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, কুইন্টন ডি কক এবং নিকোলাস পুরানের মতো তারকারাও বড় রান করতে ব্যর্থ হন।

   

ডিসি’র বোলিং আক্রমণে মুকেশ কুমার এবং খলিল আহমেদ দুটি করে উইকেট নিয়ে এলএসজি’র রানের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখেন। অক্ষর প্যাটেলও তাঁর স্পিনে কৃপণ বোলিং করে একটি উইকেট তুলে নেন। এলএসজি’র ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং ডিসি’র শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিং তাদের স্কোরকে ১৬০-এর নিচে সীমাবদ্ধ রাখে।

১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ডিসি শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল। কেএল রাহুল, যিনি একসময় এলএসজি’র নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁর প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শন করেন। তিনি মাত্র ৩৮ বলে ৫৪ রানের একটি মারকাটারি ইনিংস খেলেন, যার মধ্যে ছিল ৬টি চার এবং ২টি ছক্কা। রাহুলের এই ইনিংস লখনউয়ের ভক্তদের জন্য মিশ্র অনুভূতি নিয়ে এসেছে—একদিকে তাঁর ব্যাটিং দক্ষতার প্রশংসা, অন্যদিকে প্রাক্তন অধিনায়কের হাতে হারের তিক্ততা।

রাহুলের সঙ্গে ওপেনিংয়ে অভিষেক পোরেলও দুর্দান্ত খেলেন। তিনি ৪১ বলে ৫১ রান করে দলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করান। এই দুজনের ৯২ রানের উদ্বোধনী জুটি ম্যাচের ভাগ্য প্রায় নির্ধারণ করে দেয়। পোরেল আউট হওয়ার পর রাহুল এবং শাই হোপ কিছুক্ষণ ব্যাট করে দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। শেষ পর্যায়ে অক্ষর প্যাটেলের অপরাজিত ৩৪ রান এবং ত্রিস্টান স্টাবসের ১৫ রানের ক্যামিও ডিসি’কে ১৩ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়।

এলএসজি’র জন্য এই ম্যাচ ছিল একাধিক হতাশার সমষ্টি। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার পাশাপাশি তাদের বোলিংও ডিসি’র ব্যাটারদের রুখতে পারেনি। এইডেন মার্করাম ব্যতিক্রম ছিলেন, যিনি দুটি উইকেট নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। তবে, রবি বিষ্ণোই এবং নবীন-উল-হকের মতো বোলাররা এদিন ছন্দহীন ছিলেন। ঋষভ পন্থের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে সমালোচনা ছাড়াও, তাঁর কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সমর্থকরা মনে করছেন, পন্থের উচিত ছিল উপরের দিকে ব্যাট করা, যা দলের স্কোরকে আরও বাড়াতে পারত।

এই জয় ডিসি’র জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা পয়েন্ট টেবিলে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। কেএল রাহুলের নেতৃত্বে দলটি ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে ভারসাম্যপূর্ণ পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে। অন্যদিকে, এলএসজি’র এই হার তাদের প্লে-অফের দৌড়ে পিছিয়ে দিয়েছে। দলের ব্যাটিং লাইন-আপে ধারাবাহিকতার অভাব এবং কৌশলগত ত্রুটি তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একানা স্টেডিয়ামে এই ম্যাচে কেএল রাহুল তাঁর প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। তাঁর দায়িত্বশীল এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ডিসি’র জয়ের পথ সুগম করেছে। অভিষেক পোরেল এবং অক্ষর প্যাটেলের অবদানও দলের গভীরতা প্রদর্শন করেছে। অন্যদিকে, এলএসজি’র জন্য এই হার তাদের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেছে। ঋষভ পন্থের কৌশল এবং দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, মার্করামের একক লড়াই তাদের জন্য কিছুটা সান্ত্বনা। আইপিএল ২০২৫-এর এই মরসুমে এখনও অনেক ম্যাচ বাকি, এবং এলএসজি’র জন্য এখনই ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। অন্যদিকে, ডিসি তাদের এই গতি ধরে রাখতে পারলে প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে।

Advertisements