আইপিএল ২০২৫-এর ষষ্ঠ ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) রাজস্থান রয়্যালসের (RR) বিরুদ্ধে একটি দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। গুয়াহাটির বরসাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে কেকেআর ৮ উইকেটে জয়লাভ করে। ম্যাচের নায়ক ছিলেন কুইন্টন ডি কক, যিনি ৬১ বলে অপরাজিত ৯৭ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। এর আগে, কেকেআর-এর বোলাররা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে রাজস্থানকে ২০ ওভারে ১৫১/৯-এ আটকে দেয়।
KKR-এর বোলিং আক্রমণ
ম্যাচের শুরুতে কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের এই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয়, কারণ বোলাররা রাজস্থানের ব্যাটিং লাইনআপকে চাপে রাখে। স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী এবং মঈন আলি পিচের ধীরগতির সুবিধা নিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন। চক্রবর্তী ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট এবং মঈন আলি ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। তাদের স্পিন আক্রমণ মিডল ওভারে রাজস্থানের রানের গতি কমিয়ে দেয়।
পেসাররাও পিছিয়ে ছিলেন না। বৈভব অরোরা এবং হর্ষিত রানা দুজনেই ২টি করে উইকেট নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অরোরা ১৩ রানে সঞ্জু স্যামসনকে আউট করে রাজস্থানের শুরুতে ধাক্কা দেন, যিনি ১১ বলে ১৩ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। রানা এবং অরোরার গতি এবং নিয়ন্ত্রণ রাজস্থানের ব্যাটারদের জন্য সমস্যা তৈরি করে।
রাজস্থানের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন ধ্রুব জুরেল, যিনি ২৮ বলে ৩৩ রানের একটি লড়াকু ইনিংস খেলেন। তবে, তিনি ছাড়া অন্য কোনো ব্যাটার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেননি। ইয়াশাস্বী জয়সওয়াল ২৪ বলে ২৯ এবং স্থানীয় তারকা রিয়ান পরাগ ১৫ বলে ২৫ রান করেন, কিন্তু তারা বড় স্কোরে রূপান্তর করতে ব্যর্থ হন। শেষ দিকে জোফ্রা আর্চার কিছু বড় শট খেললেও, রাজস্থান ১৫১ রানে থামে।
ডি ককের অপরাজিত ৯৭: জয়ের নায়ক
১৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কেকেআর শুরুটা ধীর গতিতে করে। সানিল নারিনের অনুপস্থিতিতে মঈন আলি ওপেন করতে আসেন, কিন্তু তিনি ১২ বলে মাত্র ৫ রান করে রান আউট হন। তবে, কুইন্টন ডি কক শুরু থেকেই দলের হাল ধরেন। তিনি ৬১ বলে অপরাজিত ৯৭ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ৮টি চার এবং ৬টি ছক্কা। তার এই ইনিংস কেকেআর-কে ম্যাচে এগিয়ে রাখে এবং শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিত করে।
ডি ককের সঙ্গে অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে ১৫ বলে ১৮ রান করে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা গড়েন। এরপর অংক্রিশ রঘুবংশী ১৭ বলে অপরাজিত ২২ রান করে ডি ককের সঙ্গে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন। শেষ ওভারে জোফ্রা আর্চারের বিরুদ্ধে ডি কক একটি চার এবং দুটি ছক্কা মেরে ম্যাচটি ১৭.৩ ওভারে শেষ করে দেন। এই জয়ের ফলে কেকেআর আইপিএল ২০২৫-এ তাদের প্রথম পয়েন্ট অর্জন করে।
ম্যাচের গুরুত্ব ও পিচের ভূমিকা
বরসাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচ এই ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পিচের ধীরগতি এবং স্পিনারদের জন্য সহায়ক অবস্থা কেকেআর-এর বোলারদের কাজে লাগে। চক্রবর্তী এবং মঈন আলি এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে রাজস্থানের মিডল অর্ডারকে ধসিয়ে দেন। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে শিশিরের প্রভাবে ব্যাটিং সহজ হয়ে ওঠে, যা ডি ককের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটারের জন্য সুবিধা হয়ে দাঁড়ায়।
রাজস্থানের অধিনায়ক রিয়ান পরাগ, যিনি নিজের গৃহ রাজ্য আসামে প্রথমবার দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, ম্যাচের পর বলেন, “আমরা ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু করেছিলাম, কিন্তু মিডল ওভারে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাই। বোলিংয়েও আমরা ডি কককে আটকাতে পারিনি।” অন্যদিকে, রাহানে জানান, “আমাদের বোলাররা দারুণ কাজ করেছে। ডি ককের ইনিংস আমাদের জন্য বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।”
দুই দলের অবস্থান
এই জয়ের ফলে কেকেআর আইপিএল ২০২৫-এর পয়েন্ট টেবিলে ষষ্ঠ স্থানে উঠে আসে। তাদের নেট রান রেটও উন্নতি করে, যা প্রথম ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে হারের পর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অন্যদিকে, রাজস্থান রয়্যালস প্রথম ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের কাছে হারের পর এই ম্যাচেও পরাজিত হয়ে পয়েন্ট টেবিলে সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে। তাদের ব্যাটিং এবং বোলিং উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতির প্রয়োজন।
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
কেকেআর-এর ভক্তরা ডি ককের এই ইনিংসে মুগ্ধ। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন, “ডি কক আজ আমাদের হিরো। এই জয় আমাদের শিরোপা রক্ষার পথে এগিয়ে রাখবে।” রাজস্থানের সমর্থকরা হতাশ হলেও পরাগের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। একজন ভক্ত লিখেছেন, “পরাগ ভালো চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমাদের ব্যাটারদের আরও দায়িত্ব নিতে হবে।”
কেকেআর-এর জন্য এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। তাদের পরবর্তী ম্যাচ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। অন্যদিকে, রাজস্থানকে তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। আইপিএলের এই প্রাথমিক পর্বে দুই দলই তাদের প্রথম জয়ের জন্য মরিয়া ছিল, কিন্তু কেকেআর-এর সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং ডি ককের ব্যাটিং তাদের এগিয়ে রাখে।
এই ম্যাচটি আবারও প্রমাণ করেছে যে আইপিএল-এ কোনো দলকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। কেকেআর-এর শিরোপা রক্ষার যাত্রা শুরু হয়েছে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ দিয়ে, আর রাজস্থানের জন্য এখন প্রয়োজন দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো।