আন্দ্রে রাসেল (Andre Russell), নামটা এক সময় টি-টোয়েন্টি (T20) ক্রিকেটের পরাশক্তির প্রতীক ছিল। বিধ্বংসী ব্যাটিং, গতি এবং লাইন বদলে ফেলা বোলিং, আর বিস্ফোরক ফিল্ডিংয়ে তিনি ছিলেন এক অনন্য ক্রিকেটার। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই ধার অনেকটাই মলিন হয়েছে। ২০২৫ সালের আইপিএলেই (IPL 2025) তার প্রমাণ মিলেছে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) হয়ে ১৩ ম্যাচে মাত্র ১৬৭ রান ও ৮ উইকেট, এই পারফরম্যান্সে দলও প্লে-অফে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ এই ছন্দহীনতা সত্ত্বেও রাসেলকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (West Indies) ক্রিকেট বোর্ড। প্রশ্ন উঠছে, কেন?
আইপিএলে রাসেলের পারফরম্যান্স
আন্দ্রে রাসেল কেবল নামেই ‘ম্যাচ উইনার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন না, মাঠে নেমেই বহু ম্যাচ একার হাতে উল্টে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ২০২৫ আইপিএলে তার সেই ঝলক আর দেখা যায়নি। ব্যাট হাতে অনেক সময়েই তিনি দ্রুত আউট হয়ে গিয়েছেন, স্ট্রাইক রেটও ছিল অনিয়মিত। ১৩ ম্যাচে ১৬৭ রান গড় ১৬-এরও কম। বল হাতে কখনও মাঝেমধ্যে উইকেট পেয়েছেন, কিন্তু ধারাবাহিকতা ছিল না। অনেক ম্যাচে তিনি পুরো কোটাও বোলিং করেননি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাসেলের ফিটনেস নিয়ে আগেই প্রশ্ন উঠেছিল। দীর্ঘ সময় ধরে চোটের সমস্যা এবং তার বয়স (৩৬) তাকে কিছুটা পিছিয়ে দিচ্ছে। তবে একেবারে বাতিল করার মতো এখনও নন তিনি – অন্তত নির্বাচকদের মতে।
জাতীয় দলে ডাক – কেন রাসেলের উপর ভরসা?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্বাচকরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য রাসেলকে দলে নিয়েছেন। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
অভিজ্ঞতা ও ম্যাচ উইনিং সামর্থ্য: রাসেল যতই অফ-ফর্মে থাকুন, তিনি ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। একদিন ঠিকঠাক ব্যাট চললেই যে কোনও দলের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী হতে পারেন।
বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি: বছর ঘুরলেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে রাসেলকে কিছু ম্যাচে দেখে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে এই সিরিজ ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দলের ভারসাম্য: রাসেল একজন অলরাউন্ডার হিসেবে দলের ব্যাটিং ও বোলিং – দু’দিকেই অবদান রাখতে পারেন। তার অভিজ্ঞতা তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগাতে পারে।
পুরান না থাকায় সুযোগ
চমকপ্রদভাবে, আইপিএলে দুরন্ত ফর্মে থাকা নিকোলাস পুরান এই সিরিজে খেলছেন না। বিশ্রামের আবেদন করেছেন তিনি। ফলে মিডল অর্ডারে একটি জায়গা খালি হয়েছে, যেখানে রাসেল নিজের জায়গা পাকা করতে পারেন।
নতুন অধিনায়ক শাই হোপ – রাসেলের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
এই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নতুন অধিনায়ক হচ্ছেন শাই হোপ। অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় তাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য দলের ভিতরে একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের দরকার ছিল, সেই ভূমিকা পালন করতে পারেন রাসেল। ড্রেসিংরুমে তার উপস্থিতি, এবং চাপের মুহূর্তে মাঠে তার অভিজ্ঞতা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
রাসেলের সামনে চ্যালেঞ্জ
এই সিরিজটি আন্দ্রে রাসেলের জন্য নিজের জাত ফের প্রমাণ করার সুযোগ। যদি তিনি এখানেও ব্যর্থ হন, তবে ভবিষ্যতে জাতীয় দলে তার জায়গা ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। এই বছর ইংল্যান্ডের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, যা বোঝায় যে তার ফিটনেস ও লোড ম্যানেজমেন্টে দল নজর দিচ্ছে।
আন্দ্রে রাসেল হয়তো আর সেই পুরোনো ‘সুপারহিরো’ নেই। কিন্তু এখনও তার ব্যাট একবার জ্বলে উঠলে ম্যাচের মোড় ঘুরে যেতে পারে। নির্বাচকরা এই বিশ্বাস থেকেই তাকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে এনেছেন। এবার রাসেলের কাজ সেই ভরসার প্রতিদান দেওয়া – ব্যাটে, বলে এবং প্রয়োজনে অভিজ্ঞতার জোরে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন সিরিজ হতে চলেছে তার জন্য একটি মেক-অর-ব্রেক মুহূর্ত। রাসেল কী পারেন নিজেকে প্রমাণ করতে? সেটাই দেখার অপেক্ষা এখন ক্রিকেটপ্রেমীদের।